Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এক বছরে অতি দারিদ্র্যের সংখ্যা ১২.৫ শতাংশে নামবে -পরিকল্পনা মন্ত্রী

দারিদ্র্যের তথ্যভান্ডার গড়ছে বিবিএস

| প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বর্তমানে বাংলাদেশের ১২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে জানিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে এই সীমা ১২ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে দরিদ্রের সংখ্যা কমছে। সেটিকে টেকসই করার জন্য সরকার কাজ করছে। বর্তমানে দেশে দরিদ্রের হার ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ। দারিদ্রের হার আরও কমানোর লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, সরকার ধনীদের বাধা দিতে চায় না। তারা ধনী হতে থাকুক। তবে যারা পিছিয়ে আছে তাদেরকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তয়ন করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, রেমিটেন্স কমে গেছে এটা ঠিক নয়। আমাদের রেমিটেন্স কমেনি। রেমিটেন্সের পরিমাণ আপনারা পাচ্ছেন ১৪ বিলিয়ন ডলার, আমরা পাচ্ছি ২৭ বিলিয়ন ডলার। আমাদের পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের হিসেবে হল ১৭ বিলিয়ন ডলার। সরকারি হিসাবে ১৪ বিলিয়ন ডলার। আমরা একটা জরিপ করেছি রেমিটেন্সের ওপরে, যেখানে দেখা গেছে ৪৯ শতাংশ রেমিটেন্স আসে ইনফরমাল চ্যানেলে, যার হিসাব হয় না। একই সঙ্গে এই হিসাব ছাড়া রেমিটেন্সটাই গ্রামীণ ওই খরচে সাহায্য করে। খরচ বাড়া ভালো, কিন্তু আমার কথা হলো তারা তো ঋণ করে ব্যয় করছে না। এটা আয় থেকেই আসছে। আমার মনে হয় কেউ ধার করে শপিং করবে, রেস্টুরেন্টে যাবে সেই অবস্থায় নেই।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত ‘খানা তথ্যভান্ডার শুমারি’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান াতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এ সব কথা বলেন। পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সরকার কাজ করছে জানিয়ে মোস্তফা কামাল বলেন, রংপুরের আটটি জেলা ও দেশের দক্ষিণ পশ্চিম এলাকার অঞ্চলগুলো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বেশি। আমরা এসব এলাকায় ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করছি। উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া এলাকায় নজর দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, সঠিক তথ্য না থাকলে পরিকল্পনা সঠিক হবে না। পরিসংখ্যান আইন ও পরিসংখ্যান উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় কৌশল পত্র অনুমোদনের পর বিবিএস আরও শক্তিশালী হয়েছে। সঠিক তথ্য পেতে বিবিএস এ ধরনের শুমারি করছে। মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে বলেও দাবি করেন মন্ত্রী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার কারণে এক বছর কাজ করা যায়নি। এ কারণে কাজে কিছুটা ধীর গতি হলেও এখন রাত দিন কাজ চলছে। দেশের সব জনগোষ্ঠীর জন্য এই ডাটাবেজ প্রস্তুত হবে। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগী নির্বাচনে দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মন্ত্রী বলেন, ন্যাশনাল হাউজহোল্ড ডাটা বেইজ (এনএইচডি) প্রকল্পে দেশব্যাপী তিন কোটি ৫০ লাখ খানা থেকে (পরিবারের) তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এতে দেশের সব মানুষের তথ্য চলে আসবে।
‘গ্রামে বসবাসকারীদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে’ বিবিএসের রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে, এটা মানুষের লিভিং স্টান্ডার্ড বেড়ে যাওয়ায়। আগে মানুষ জ্যোৎস্না দেখতো না। এখন জ্যোৎস্না দেখে। এখন বইমেলায় ভিড় থাকে। আগে পয়লা বৈশাখ পালন করতো না, এখন পয়লা বৈশাখ পালন করে। আগে আমাদের বাণিজ্যমেলায় এত ভিড় ছিল না, এখন যত ভিড়। আগে কয়জন খেত রেস্টুরেন্টে? এখন প্রতি উপজেলা লেভেলে শত শত রেস্টুরেন্ট আছে। মানুষ এখন ঘরে খায় না, রেস্টুরেন্টে গিয়ে খায়। মানুষ এখন সময় পেলে পুরো পরিবার নিয়ে কক্সবাজার চলে যায়। এই যে ব্যয় বেশি হচ্ছে এটাতো কেউ ধার করে ব্যয় করছে না।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এম মান্নান বলেন, তথ্যভান্ডার আমাদের বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের তথ্যের ক্রস চেক করা দরকার। যে সময় তথ্য প্রয়োজন সেই সময় না পেলে এই তথ্য থেকে সুবিধা আদায় করা যায় না। এনএইচডি প্রকল্পের আওতায় এই ডাটাবেজ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র অর্জনে তুলনামূলকভাবে দারিদ্র জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমিয়ে আনা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।
সভাপতির বক্তব্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হক জানান, এনএইচডি ডাটাবেইজ প্রস্তুত হলে প্রায় ২৩টি মন্ত্রণালয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগী চিহ্নিত করা যাবে। এর মাধ্যমে দারিদ্র্য ও অতি দারিদ্র্যের প্রকৃতি ও স্বরূপ নির্ধারণ করা সহজ হবে।
প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মো. শফিউল আলম বলেন, দেশব্যপী প্রায় তিন কোটি ৫০ লাখ খানা হতে তিনটি ফেইজে তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের অংশ হিসেবে প্রথম ফেইজে (ধাপে) রংপুর ও বরিশাল বিভাগের সব জেলা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলাসহ মোট ১৭টি জেলায় তথ্য সংগ্রহ শুমারি কার্যক্রম শেষ হয়েছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলা এবং নেত্রকোনা জেলাসহ মোট ২৫টি জেলায় তথ্য সংগ্রহ শুরু হতে যাচ্ছে। তৃতীয় ধাপে সিলেট, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সব জেলায় (২২টি জেলা) এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এটা প্রস্তুত হলে সরকারি বিভিন্ন সুবিধার সঠিক বন্টনে সহায়তা হবে। অনেক সময় দেখা যায় একজন সরকারি বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকে, আবার কেউ কেউ কিছুই পায় না। সেটা বের হয়ে আসবে।



 

Show all comments
  • ইমতিয়াজ ১১ জানুয়ারি, ২০১৮, ৪:৩১ এএম says : 0
    আগে নামান, তারপরে বলেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিকল্পনা মন্ত্রী

৯ জানুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ