Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইতিহাসে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও মাছিহাতা সম্মেলন ১৯৫০

| প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সৈয়দ আহসান
\ এক \
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত মাছিহাতা একটি প্রসিদ্ধ গ্রামের নাম। এদেশের ইসলামী আন্দোলনের অনেক জানা-অজানা ইতিহাসের সাথে গ্রামটির নাম উৎপ্রোতভাবে জড়িত। সৈয়দ নাসির উদ্দীন সিপাহসালার রহ. প্রায় সাড়ে সাত শত বৎসর পূর্বে এসেছিলেন ইসলাম বিদ্বেষী হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দ ও আচক নারায়ণকে পরাজিত করে ইসলামের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। সৈয়দ নাসির উদ্দিন সিপাহসালার রহ. এর অধঃস্তন ৭তম পুরুষ সৈয়দ নুরুল ইসলাম রহ. আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন শত বৎসর পূর্বে ১৬৬৭ সালে তৎকালীন ত্রিপুরা জেলার সরাইল পরগনার এই এলাকায় (বর্তমান মাছিহাতা) গ্রামে ইসলামের দাওয়াতের উদ্দেশ্যে তরপের নরপতি হতে এসে আস্তানা স্থাপন করেন। এ সিদ্ধ পুরুষ অত্র এলাকায় আসার সাথে সাথেই সাধারণ মানুষের মধ্যে দারুন উৎসাহ ও কৌতুহলের সৃষ্টি হয়, এই কামেল দরবেশ কে দেখার জন্য। কিন্তু আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবাণী, যারই দৃষ্টি একবার এই কামেল লোকটির দিকে পতিত হত সঙ্গে সঙ্গেই তার অন্তরে আল্লাহর ভয়ভীতি ঢুকে যেত, তখনই তার নিকট নিজকৃত গোনাহ সমূহ হতে তওবা করে পূতঃ পবিত্র হয়ে যেত। এ ভাবে দিনে দিনে তাঁর আগমনের সংবাদ চারি দিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকা হতে লোকজন এসে তার হাতে তওবা করতে এবং হিন্দুগণ এসে মুসলমান হতে লাগল। মানুষ মনে করত যে এই কামেল দরবেশের হাতে তওবা করলে আর গোনাহ থাকবে না। পরবর্তীতে এ গ্রামটির নাম করণ করা হয় “মাছিহাতা” অর্থাৎ গোনাহ্ দূরকারী স্থান (মা-আছি-হাত্বা)। সেই মাছিহাতাতেই ১৯৫০ সালে অনুষ্ঠিত হয় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ঐতিহাসিক সম্মেলন (উল্লেখ্য যে তখন রেল যোগাযোগ ব্যতিত অন্য কোন বাহনে মাছিহাতায় যাবার কোন ব্যবস্থা ছিল না,পাঘাচং রেল ষ্টেশান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার হেটে মাছিহাতায় যেতে হত। )
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের পার্লামেন্টারী দল হিসাবে নেজামে ইসলাম পার্টির আত্মপ্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম তিনটি পর্যায় অতিবাহিত করে। ১৯৪৫ সালে শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানী রহ. এর নেতৃত্বে তৎকালীন অবিভক্ত ভারতে মুসলমানদের স্বতন্ত্র জাতি হিসাবে তাদের নিজস্ব আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম গঠিত হয়। জমিয়তের লক্ষ্য ছিল এমন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যেখানে নির্বিবাদে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান চালু করা। যার সুফল হিসাবে সমাজের নিপীড়িত জনগোষ্টি তাদের ন্যায্য অধিকার পাবে, মজলুম মানুষ পাবে পক্ষপাতহীন ন্যায় বিচার। কুরআন-সুন্নাহর শাসন পরিপূর্ণ ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এসব উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে মুসলীম লীগ কে সমর্থন দেয়। মুসলীম লীগ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনের ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট ইসলামী হুকুমত কায়েমের সুদৃঢ় অঙ্গিকার ও প্রতিশ্র্রেুাতি নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্য দিকে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নেতৃত্বে কিছু আলেম ভারতমাতাকে বিভক্ত না করার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে পাকিস্তানের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করে, শুধু তাই নয় সিলেটকে পাকিস্তানের অন্তর্ভু’ক্তি করণে যে রেফারেন্ডাম অনুষ্ঠিত হয়, তাতেও তারা সিলেটকে ভারতভু’ক্তির প্রাণান্তকর চেষ্টা চালায়। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতৃবৃন্দ জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সকল অপকৈাশল ব্যর্থ করে সিলেটকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তিতে সফল হন। (প্রথম পর্যায় অর্থাৎ ১৯৪৫সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
কিন্তু মুসলীম লীগ সরকার কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক পাকিস্তানের আইন প্রণয়নের প্রশ্নে প্রদত্ত প্রতিশ্রোুাতির প্রতি চরম অবহেলা প্রদর্শন করে। মুসলীম লীগের মধ্যে ওৎপেতে থাকা কিছু স্বার্থান্বেষী নেতা পাকিস্তান আন্দোলনের মূল লক্ষ্য বাস্তবায়নের বিরোধী হয়ে, তারা ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শাসনতন্ত্র তৈরীর উপর গুরুত্ব আরোপ করে। এ অবস্থা দেখে মাওলানা ওসমানী রহ. সহ গোটা আলেম সমাজ ও ইসলাম দরদী জনগোষ্টী বিস্মিত হলেন। মাওলানা উসমানী রহ. মুসলীম লীগ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা দেশ ব্যাপী সফর করেন। এদিকে মাওলানা সৈয়দ মুছলেহ উদ্দিন রহ. দেখলেন তার প্রিয় ওস্তাদ হযরত মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানী রহ. এর সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নাম সর্বস্ব সংগঠন হিসাবে শুধু অস্তিত্ব নিয়ে টিকে আছে। এ দলটির পূর্ব পাকিস্তানে তখন মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী রহ. সভাপতি এবং মাওলানা মুফতি দীন মুহাম্মদ খান রহ. সাধারণ সম্পাদক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইতিহাস

২ অক্টোবর, ২০২২
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন