Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুমিল্লায় গোমতী নদীর দুই পাড়ের মাটি কেটে সাবাড়

হুমকির মুখে নিমার্ণাধীন বাইপাস সড়ক

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কুমিল্লার গোমতী নদীর দুই পাড়ের মাটি কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে সিন্ডিকেটের লোকজন। ঠান্ডা মৌসুম এলেই মাটিকাটা বাণিজ্যের সিন্ডিকেটের লোকজন গরম হয়ে ওঠে। সিন্ডিকেটের বেতনভুক্ত কিছু লোক রয়েছে যারা মাটিকাটা দেখভাল করে। দিনে রাতে শতশত ট্রাক্টরযোগে গোমতীপাড়ের মাটি যাচ্ছে ইটভাটা আর প্লটভরাটের বা বাড়ি নির্মানের কাজে। কুমিল্লা সদর থেকে মুরাদনগর পর্যন্ত গোমতী নদীর প্রায় ৫০কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গত দুই মাস ধরে চলছে সিন্ডিকেটের মাটাকাটা বাণিজ্য। নতুন গাঙ নামে কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষের কাছে পরিচিত গোমতী নদীর পাড়ের মাটি কেটে সাবাড় করার ফলে হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে আমতলী থেকে নির্মানাধীন বাইপাস সড়কটি।
এক এক করে ট্্রাক্টর নামছে গোমতী নদীর পাড়ে। কোদাল আর ভেলচায় কেটে শ্রমিকরা ট্রাক্টরে তোলছে নদীর পাড়ের মাটি। নদীর পাড় থেকে মূল রাস্তায় উঠা-নামার জন্য বিকল্প পথও তৈরি করা হয়েছে। এবারের মৌসুমে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা গোমতীপাড়ে খুব একটা পা রাখেননি। আর মাটি কাটা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও আগের মতো জোরালো হয়নি। ফলে সিন্ডিকেট বেশ খোজমেজাজেই চালাচ্ছে মাটি চুরির বাণিজ্য। শীতের মৌসুম এলেই গোমতী নদীর কুমিল্লা সদরের পূর্বদিকের উত্তরাংশের গোলাবাড়ি এবং দক্ষিণাংশের কটকবাজার এলাকা থেকে শুরু করে বুড়িচং হয়ে প্রায় ৫০কিলোমিটার বিস্তীর্ণ মুরাদনগর পর্যন্ত দুইপাড়ের মাটি কাটা বাণিজ্য শুরু হয়। গত দুইদিন গোমতী নদীর পাড় ঘুরে দেখা গেছে, কুমিল্লা সদরের গোমতী নদীর উত্তরপাড়ের পাঁচথুবীর গোলাবাড়ি এলাকা হয়ে শাহপুর, সূবর্ণপুর, শালধর, গোমতী বেইলী ব্রীজের নিচের অংশে, ছত্রখীল পুলিশ ফাঁড়ির সামনের অংশে, শীমপুর সড়ক, বানাসুয়া থেকে বুড়িচং উপজেলার গোবিন্দপুর ব্রীজ হয়ে কুমিল্লা সদরের দক্ষিণপাড়ের দুর্গাপুর, আড়াইওড়া, আমতলী, পালপাড়া, বদরপুর, কাপ্তানবাজার, চাঁনপুর, টিক্কারচর, বাঁজগড্ডা, জগন্নাথপুর কটকবাজার এলাকায় নদীরপাড়ের মাটি কেটে নিয়ে শত শত ট্রাক্টর বাঁধ কেটে তৈরি পথে রাস্তায় উঠে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাচ্ছে। আবার খালি ট্রাক্টর এসে জড়ো হচ্ছে নদীর পাড়ে।
গোমতী নদীর দুই পাড়ের মাটি কেটে পাড়, বাঁধ, ফসলী জমি ও গাছপালার কী সর্বনাশ করছে চোখে না দেখলে বুঝা যাবে না। কোন কোন এলাকায় দেখা গেছে নদীর পাড়ের কাছাকাছি জায়গায় তাল, নারকেল, খেজুর, আমগাছ, বাঁশঝাড় স্থানে শ্রমিকরা কোদাল বসিয়ে সেখানকার মাটি এতো গভীরভাবে সাবাড় করেছে দেখলে মনে হবে ওইসব গাছপালা খন্ড খন্ড টিলার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। গোমতী নদীর পাড় অনেকটা উঁচু। অনেকেই এসব উঁচু ভূমির কোন কোন অংশে চাষাবাদ করে থাকেন। কিন্তু পাড়ের মাটি কেটে নেয়ায় এসব জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গোমতী বাঁধে সিটি কর্পোরেশনের এমজিএস প্রজেক্টের আওতায় আমতলী থেকে টিক্কাচর পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় নদীর দক্ষিণাংশে পাড়ের মাটি কাটা দিনের বেলায় বন্ধ থাকে। তবে সন্ধ্যারাতে শুরু হয় শতশত ট্রাক্টরের মাটি নেয়ার পালা। নদীর উত্তরাংশেও রাতের বেলায় পাড়ে জমে ওঠে ট্রাক্টরের মেলা। বাঁধ সংলগ্ন পাড়ের মাটি যেভাবে কেটে নেয়া হচ্ছে তাতে নির্মাণাধীন বাইপাস সড়কটিও হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গোমতী নদীর কুমিল্লা সদরের দুর্গাপুর, পাঁচথুবি ও আমড়াতলি ইউনিয়নের ওইসব এলাকার বাইরে মুরাদনগর উপজেলায় কোম্পানীগঞ্জ, বাখরাবাদ, দনিরামপুর, জাহাপুর, দেবিদ্বার উপজেলা অংশে জাফরগঞ্জ, বড় আলমপুর, বিনাইপাড়, বালিবাড়ি, ভিংলাবাড়ি এবং বুড়িচং উপজেলার কংশনগর, গোবিন্দপুর, রামপুরেও চলছে নদীর পাড়ের মাটি কাটার মহোৎসব। গোমতী পাড়ের মাটি বহনকারি ট্রাক্টর চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব মাটির ৭০ভাগ ইটভাটায় যায়। আর বাকি অংশ আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবন ও প্লট ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ট্রাক্টরের বহন খরচসহ মাটির দামের বিষয়টি সিন্ডিকেটের দুইটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। পরিবেশবিদদের মতে, বছরের শুষ্ক মৌসুমের প্রায় ৪মাস গোমতী পাড়ের যে পরিমান মাটি কাটা হয় বৃষ্টির মৌসুমে পলি জমে তা সিকিভাগও পূরন হয়না। এভাবে ধীরে ধীরে একসময় নদীর প্রশস্ততা বেড়ে বাঁধ হুমকির মুখে পড়বে। পরিবেশ হারাবে তার ভারসাম্য। কেবল তাই নয়, প্রতিদিন মাটিবাহী শতশত ট্রাক্টর চলাচলের কারণে আমতলী থেকে টিক্কাচর পর্যন্ত যে বাইপাস সড়ক নির্মাণ হচ্ছে এটিও বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।



 

Show all comments
  • Kader Khan ১৮ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:৪৮ পিএম says : 0
    প্রশাস‌নের প‌কে‌টে টাকা‌ গে‌লে তা‌দের চোখ বন্ধ হ‌য়ে যায় সেই ফ‌া‌কে সি‌ন্ডি‌কেট তা‌দের সব কাজ সে‌রে নেয় ,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুমিল্লায় গোমতী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ