Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এসডিজি অর্থায়নে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার -অর্থমন্ত্রী

যৌথ সহযোগিতার আশ্বাসে শেষ হলো বিডিএফ সভা

| প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : অগ্রাধিকার খাতে যৌথ সহযোগিতার মাধ্যমে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে শেষ হলো বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক। দুই দিনের সম্মেলনে সপ্তম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনার ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) আলোকে সরকার ও সহযোগী সংস্থাগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব শক্তিশালীকরণের অঙ্গীকার করা হয়েছে। গত বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দুই দিনের বিডিএফ সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাপনী দিনে এসডিজি বাস্তবায়নে বিকল্প অর্থায়নের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সমাপনী দিনে দুই দিনের সভার বিস্তারিত সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিডিএফের কো-চেয়ার ইউএনডিপির মিশন ডিরেক্টর জেনিনা জেরুজালস্কি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শফিকুল আযম। এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, এসডিজি গ্রহণের সময় এ খাতে অর্থায়নের বিষয়টি নিয়ে সব দেশই কথা বলেছে। এসডিজি অর্থায়নে কিছু অসাধারণ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে উন্নয়ন সহযোগীদের অংশ এক্ষেত্রে অনেক বেশি বাড়াতে হবে। সব দেশই এর অর্থায়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন। অর্থায়ন ছাড়া এসডিজি অর্জন কঠিন বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। সরকার এ বিষয়ে এখন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে বলে তিনি জানান।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নেও প্রতিশ্রæত অর্থ পাওয়া যায়নি। এসডিজির ক্ষেত্রেও এমনটি হতে পারে। এজন্য আমাদের প্রস্তুতী গ্রহণ করছি। এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন আর শতভাগ সহায়তা নির্ভর দেশ নয়। বাংলাদেশও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্য দেশকে সহায়তা করছে। মালয়েশিয়ার শিক্ষার্থীদের সাহায্য দেয় বাংলাদেশ। নেপাল, ভ‚টানের শীক্ষার্থীদেও সহায়তা করা হয়।
দুই দিনের এ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সরকার ধীরে এগুচ্ছে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের কী ধরণের সহায়তা প্রয়োজন সে বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। ভাসান চরের উন্নয়নে প্রকল্প নেয়া হলও তাদের এখই সেখানে পাঠানো হচ্ছে না বলে জানান মন্ত্রী।
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে বাংলাদেশের যে সুযোগ সুবিধা কমে যাবে সে লক্ষ্যে প্রস্তুতী গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, মার্চে এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবার প্রক্রিয়া শুরু হবে। বাংলাদেশকে তুলনামূলক উচ্চ সুদে ঋণ গ্রহণ করতে হবে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান তাদের ঋণের সুদ হার বাড়াতে চেয়েছে। বিশ্বব্যাংকের আইডা তহবিলের বাইরে তুলনামূলক বেশি সুদে স্কেলআপ ফ্যসিলিটির আওতায় ঋণ নেওয়া শুরু হয়েছে। এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে এখনই খাপখাইয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।
ইআরডি সচিব শফিকুল আযম বলেন, এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে শুধু সুযোগ সুবিধা কমে যাবে বিষয়টি এমন নয়, আমাদের অন্যান্য নতুন নতুন সুযোগ বাড়বে। বড় ঋণ পেতে সুবিধা হবে। তাছাড় সক্ষমতা অর্জন করেই বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবে, তাই এজন্য পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় সেই বিষয়গুলোতে জোর দেওয়া হয়েছে।
জেরুজালস্কি বলেন, গত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশ উন্নয়নের অনেক সূচকে ভালো অগ্রগতি লাভ করেছে। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার কমিয়ে আনাসহ কৃষিখাতে অনেক সাফল্য দেখিয়েছে। দুই দিনের এই ফোরামে যেটি উঠে এসেছে তারমধ্যে একটি হলো ভবিষ্যৎ উন্নয়নে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের সম্ভাবনাগুলোকে পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হলে নারী-পুরুষ সকলের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু স্বাস্থ্যের জন্য নয়, শিক্ষার সুফল পাওয়াসহ অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ বাড়াতে শিশু পুষ্টির দিকে নজর দিতে হবে। উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা অব্যহত রাখার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশ তার পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সমৃদ্ধ গণতন্ত্র এবং সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
এর আগে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এসডিজির সমন্বিত অর্থায়ন ব্যবস্থা এবং বহুপক্ষীয় অংশগ্রণ শীর্ষক শীর্ষক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম। এতে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, ইউএনডিপি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জী, পিকেএসএফ’র চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
এতে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, এসডিজি বৈশ্বিক এজেন্ডা। এসডিজির ১৭ টি লক্ষ্যের মধ্যে অংশীদারিত্ব অন্যতম। বাংলাদেশের এসডিজি অর্জনে উন্নয়ন সহযোগীদের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৭ শতাংশ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মূল প্রবন্ধে ড. শামসুল আলম বলেন, এসডিজি অর্জনে আগামী ১৩ বছরে বাংলাদেশের অতিরিক্ত ৯২৮ বিলিয়র ডলার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ অর্থায়ন বিদেশী উৎস থেকে আসবে। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, অর্থায়নের সমস্যা সব সময় থাকে, থাকবে। তবে এসডিজি বাস্তবায়নের অর্থ আসবেই। কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, বাংলাদেশে প্রান্তিক পর্যায়ে ছোট ছোট প্রকল্প বেশি কার্যকর। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয়ও কম। এগুলো থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেশি উপকৃত হয়। সুদীপ্ত মুখার্জী বলেন, বাংলাদেশ উন্নতি করছে। তবে উন্নতির আরও সুযোগ আছে। বাংলাদেশে কর-রাজস্ব আদায়ের হার একেবারেই কম। আবার অনেক প্রকল্পে বেশি ব্যয় হয়। আমার মতে, বাংলাদেশ খুব ভালো করছে তা নয়, তবে দিন দিন উন্নতি করছে।
এলডিসি থেকে উত্তোরণ: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা শীর্ষক অপর একটি অধিবেশনে বক্তারা বলেন, স্বল্পন্নোত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে যেতে এখনই প্রস্তুতী গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ চাইছে ২০২৪ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে বেরিয়ে যেতে যার প্রস্তুতীমূলক কাজ চলতি বছর মার্চেই শুরু হবে। এই সেশনে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, এ ধরণের উদ্যোগের জন্য কেউই পুরোপুরি প্রস্তুত থাকেনা। কিন্তু আমাদের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট বা জনসংখ্যার বোনাস সুযোগটি রয়েছে। এটিকে কাজে লাগাতে হবে।
ইআরডি সূত্র জানায়, দুই দিনের সম্মেলনে কৃষি, জলবায়ূ পরিবর্তন, বৈদেশিক বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য, মান সম্মত শিক্ষা, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বেসরকারী খাতের আরও বেশী অংশগ্রহনের সুযোগ তৈরি, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণ, নাগরিক সেবার মান উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (অফিদ) মহাপরিচালক সুলেইমান জাসির-আল-হারবিশ, বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট এনেট ডিক্সন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন চাই ঝ্যাং, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ মহা পরিচালক মিনরু মাসুজিমা ছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা ফোরামে অংশ নেন।
২০১৯ সালে আবার বিডিএফ সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে সংবাদ ব্রিাফংয়ে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, নতুন সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি ঠিক করবে। এবারের সম্মেলনকে নিজের শেষ সম্মেলন বলে মন্তব্য করেন মুহিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ