Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতের গলার চারপাশে ছোট হয়ে আসছে ফাঁস

আফগানিস্তানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি পেল চীন

| প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আই বি টাইমস : দিন যতই যাচ্ছে ততই অশুভ ফাঁসের মত মুক্তার মালা ভারতের গলার চারপাশে এঁটে বসছে। ড্রাগনের কঠিন থাবা থেকে নিস্তার নেই। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাধান্য বিস্তারে ভারত ও চীনের পরস্পরের প্রতি ধাক্কা ও প্রতিরোধ এক ভারসাম্যহীন ভূরাজনৈতিক খেলা হয়ে উঠছে। এ টানাটানির ধারাবাহিকতায় আফগানিস্তানে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দিতে কাবুলকে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে চীন সর্বশেষ কৌশলগত অভ্যুত্থানে আপাত জয়ী হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন,আফগানিস্তানে সামরিক ঘাঁটির মধ্য দিয়ে চীন ভারতীয় কূটনীতিকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।
দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় কৌশলগত সামরিক ও নৌঘাঁটি দিয়ে ভারতকে ঘিরে ফেলার চীনের চেষ্টা পুরনো সংবাদ। চীন ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে সামরিক ও নৌ ঘাঁটি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে ২০০৫ সালে ‘মুক্তার মালা’ তত্ত¡ প্রবর্তন করে।
পাকিস্তানে গোয়াদর বন্দর, শ্রীলংকায় নির্মীয়মাণ হাম্বানটোটা বন্দর, জিবুতিতে সামরিক ঘাঁটি, বাংলাদেশে চট্টগ্রাম বন্দর এবং মালদ্বীপ, নেপাল ও মিয়ানমারে ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিÑ এ সবই হচ্ছে ভারতের উড়াল ডানা ছেঁটে দেয়ার চীনের উচ্চাভিলাষের ফল।
‘অনুগত’ আফগানিস্তান এখন ব্যাপকভাবে ভারতের পক্ষ অবলম্বন করেছে। পাকিস্তানের সাথে চীনের অবিচ্ছেদ্য কৌশলগত ঘনিষ্ঠতার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আফগানিস্তান ভারতের দিকে ঝুঁকেছে। প্রকৃতপক্ষে সকল নিকট প্রতিবেশির মধ্যে কাবুলই ভারতের একমাত্র কৌশলগত মিত্র। অবশ্যই বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের প্রভাব বলয়ে রয়েছে। কিন্তু নয়াদিল্লী চীনের কাছে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে।
সরাসরি চীনা প্রভাবের কাছে কাবুলকে হারানোর প্রভাব সম্ভব এখনো দৃশ্যায়িত হয়নি। এ মাসের গোড়ার দিকে কবর প্রকাশিত হয়েছিল যে চীন ইরানের চাবাহার বন্দরের নিকটে পাকিস্তানে একটি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করছে। ইরান, ভারত ও আফগানিস্তান ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে চাবাহার বন্দর। এটি ভারতের জন্য কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত¦পূর্ণ। সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, চীন চাবাহারের কাছে পাকিস্তানে একটি সামরিক ঘাঁটি লাভ করতে যাচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে চীনের এ মুষ্টি শক্ত করা কেন? বাণিজ্যিক স্বার্থের আবরণে সক্রিয় তার কি সামরিক লক্ষ্য? দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ভারতের ক্রমবর্ধমান স্বার্থের জবাবেই কি চীন দক্ষিণ এশিয়ায় বিরাট চাপ সৃষ্টি করছে? ভারত কি তার একেবারে নিকটে চীনের সমপর্যায়ের উদ্যোগ নিতে ও তার প্রভাব বিস্তারের মোকাবেলা করতে পারবে? ভারতের কি চীনের অগ্রযাত্রার মুখে রুখে দাঁড়ানো ও ঢুকে পড়া নাকি সরে আসা উচিত?
চীনের সামরিক ও কৌশলগত বিশেষজ্ঞরা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারতের তাদের ভাষায় বিপথগামী বিচরণের জবাবে বেইজিংয়ে ক্রমবর্ধমান শক্তি প্রদর্শনীর পক্ষপাতী। তারা বিশেষভাবে মালাক্কা প্রণালীর কাছে ভারতের সামরিক মহড়ার, যা চীনের জ¦ালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত¦পূর্ণ এবং দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে নৌ মহড়ার কথা উল্লেখ করেন।
অর্থনৈতিক শক্তি
এটা কি ভারতকে দমিয়ে রাখতে চীনের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তার প্রদর্শন ও ফুলে ওঠা বুক চাপড়ে যুদ্ধের দামামা বাজানো? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন পাকিস্তানে ৫৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে নেপালে অবকাঠামো ও অন্যান্য গুরুত¦পূর্ণ খাতে ৮শ’ কোটি ডলার দিয়েছে। এই অর্থ প্রদান নেপালের জিডিপির সাথে তুলিত হতে পারে। বিশ^ব্যাংকের মতে, ২০১৬ সালে নেপালের জিডিপি ছিল ২১ বিলিয়ন ডলারের সামান্য উপরে।
চীন গত কয়েক বছরে শ্রীলংকাকে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ দিয়েছে যা শেষপর্যন্ত দেশটির পক্ষে পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর পরিণতি হয়েছে দেশটির হাম্বানটোটা বন্দর চীনকে দিয়ে দেয়া। গত বছর চীন তার কাছে ৯৯ বছরের জন্য হাম্বানটোটা বন্দর লিজ দিতে শ্রীলংকাকে চুক্তি করতে বাধ্য করেছে। এছাড়া চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি কলম্বো বন্দর নগরী প্রকল্পে ১শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে।
ভারত মহাসাগরের হৃদয় বলে পরিচিত হাম্বানটোটা সামরিক কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে এ অঞ্চলের সবচেয়ে মূল্যবান স্থান। শ্রীলংকা ভারতকে আশ^স্ত করেছে যে ভবিষ্যতে এ বন্দর সামরিকীকতৃ করার পরিকল্পনা চীনের নেই। কিন্তু ৯৯ বছর এক বিরাট সময়।
চীন এ বছর নেপালে যে টেলিযোগাযোগ অভ্যুআন ঘটিয়েছে তা ভুলে যাওয়ার বিষয় নয়। ভারতের জন্য এক বিরাট উদ্বেগের সৃষ্টি করে চায়না টেলিকম কার্যত দেশটিতে টেরিস্ট্রিয়াল সংযোগ চালুর মাধ্যমে নেপালের ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিজের হাতে নিয়েছে যা একসময় ভারতের সংযাগের উপর নির্ভরশীল ছিল।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার অজুহাত
ভারতের প্রতিবেশি দেশগুলো জুড়ে চীন যে নৌ ও অবকাঠামো প্রকল্পগুচ্ছ গ্রহণ করেছে তাতে চীনা অর্থের ছাপ রয়েছে। আফগানিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার দেখা যায়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতে, ২০০৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ১ শতাংশের নিচে। ২০১৮ সালে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হার ধরা হয়েছে। এডিবি ২০১৮ সালে শ্রীলংকায় ৪.৭ ও মালদ্বীপে ১.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রদর্শন করেছে। নেপালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৪.৭ শতাংশ ও বাংলাদেশের ৫.৫ শতাংশের কথা বলা হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার ছোটদেশগুলোতে বিরাট প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ ঘাটতি রয়েছে , চীনা অর্থ সে ঘাটতি পূরণে এগিয়ে আসছে। আর এটা গোপন নয় যে চীন তাত্তি¡ক ও নৈতিক বিষয় নিয়ে কমই মাথা ঘামায়। গত বছর মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর বিদ্বেষগত হামলার সে নিন্দা করেনি, বরং মিয়ানমার সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে। মিয়ানমার সরকার গোলযোগ কবলিত রাখাইন প্রদেশে চীনকে একটি সর্পিল গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। স¥রণ করা যেতে পারে যে গত দশকে সুদানে গৃহযুদ্ধের সময় আ্ন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে জাঞ্জাবিদ মিলিশিয়াদের অস্ত্র সরবরাহ করেছিল।
আফগানিস্তানে সামরিক ঘাঁটির ক্ষেত্রে চীন অপরির্র্বতনীয় ভাবে সন্ত্রাসবিরোধী কারণ ব্যবহার করবে, কিন্তু ভারত তার প্রকৃত উদ্দেশ্য বিষয়ে সতর্ক হতে পারবে না। আফগানিস্তানে সামরিক ঘাঁটি মধ্য এশিয়ার উগ্রপন্থী ইসলামী -দের হটিয়ে দিতে চীনকে সাহায্য করবে যারা ইতোমধ্যে জিনজিয়াংয়ের বিদ্যমান পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটিয়েছে। কিন্তু ভারতের জন্য এ ঘটনা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত এ অঞ্চলে তার একমাত্র কৌশলগত মিত্রকে হারানো।



 

Show all comments
  • টিনা ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:৩০ এএম says : 0
    তাদের আমেরিকা আছে না ?
    Total Reply(0) Reply
  • Ashraf Hossain ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:১৯ পিএম says : 2
    ভারত যদি তার প্রতিবেশী দেশের সাথে সহায়তা মুলক আচরন করত তাহলে চীন এই সুযোগ পেতনা। ভারত শুধু লুটে পুটে খাওয়ার চিন্তা করে
    Total Reply(0) Reply
  • Foyez Ahmed ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:২০ পিএম says : 1
    দাদারা ছোট ছোট দেশগুলোকে গণনায় রাখে না ।
    Total Reply(0) Reply
  • Raihan Mustafa Chowdhury ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:২১ পিএম says : 0
    shabbash!!
    Total Reply(0) Reply
  • Mamunur Rashid ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:২১ পিএম says : 1
    very good news.
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আব্দুল গাফফার ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১:৩৭ পিএম says : 0
    গুড নিউজ, ধন্যবাদ ইনকিলাব খবরটার জন্য
    Total Reply(0) Reply
  • অনিচ্ছুক ২২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১১:২৩ এএম says : 0
    আপনারা বাংলাদেশ খেতে চান, শ্রীলংকা খেতে চান, ভুটান, নেপাল বাধ্য আপনা দারা খায়িত হতে,, আফগানিস্তান ও আপনাদের চেস্টার তালিকায় আছে,, যাদের খাওয়ার ইচ্ছা তাদের ক্ষতিগ্রস্তকারি দের সাথে খুব দোস্তি আপনাদের।।। শেষে এসে যে মাখায় ফেলবেন তা তো জানা কথা ই।।সবার শের পুরে ঠিক ই এক সময়। আজ তো ঢোক গেলা যাচ্ছে কাল বড্ড অসুবিধা ও হয়ে যেতে পারে যদি খানাপিনা বাদ দিয়ে বন্ধুবাৎসল্য কাঠামো তে না আসেন।।।
    Total Reply(0) Reply
  • alim ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ৮:২৩ এএম says : 0
    “ অতি চালাকের গলায় দড়ি (রশি) ৷ মুসলমানের পিছনে আংগুল দিয়ে যেয়ে, ট্রাম্পের গলা ঝুলে, সুচির পিছনে, ইসরাইলকে নমষ্কার, ডোকলামেও খেয়েছে পারর, ভিয়েতনামেও চায় নাচিবার ৷”
    Total Reply(0) Reply
  • tajuddin ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ৫:৪৩ পিএম says : 0
    nijer shakti n/a thakle onnke dia bahaduri karar kono artha hoyna.
    Total Reply(0) Reply
  • a h m tajuddin ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ৫:৪৭ পিএম says : 0
    nije shakti sancoy karun. abng onnake shathe rakhun.
    Total Reply(0) Reply
  • md.nurul alam. ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৯:৩১ এএম says : 0
    ভারতকে বাংলাদেশের মানুষকে সন্মান করতে হবে।না হয় আমাদের চাইতে ভারতকে বেশী মূল্যদিতে হবে।পাকিস্তান ভূল করে আজো পস্তায়,আজ ভারত মিয়ানমারের ভাসায় কথা বলতে চায়,আমার মনে হয় দাদাকে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হবে।আমাদের ফাইলটা আল্লাহ নিজ হাতে নাড়া ছারা করেন।বসন্তের শুরুতে সকালের নরম আলোয় মুসলিম জাতী স্বাগতিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ