Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ছুটির দিনে জমজমাট বাণিজ্যমেলা ক্রেতা ও দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড়

| প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ছুটির দিনে মানুষের জন স্রোতে রুপ নিয়েছে। বিশাল এ জনসমুদ্রে বিন্দুমাত্র জায়গা ছিল না মেলায়। আগের দিন শুক্রবারের মতো গতকাল শনিবারও সন্ধ্যার পর মেলার অবস্থা আর বেগতিক হয়ে উঠে। মেলায় এতোটাই লোকসমাগম হয় যে, যে একে-অপরে শরীরে ধাক্কা লাগার মত অবস্থা। সামনের পা ফেলাবার মতো কোথাও ফাঁকা জায়গা ছিল না। এতে ২৩তম বাণিজ্য মেলায় গত শুক্র ও গতকালই সবচেয়ে বেশি ক্রেতা-দর্শনাথী প্রবেশ করেন। ফলে একদিনে টিকিট বিক্রি হয়েছে আনুমানিক দুই থেকে আড়াই লাখের বেশি। যা রেকর্ড হয়েছে এবারের মেলায়। গতকাল শনিবার মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সরেজমিন মেলা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই প্রচুর ক্রেতা-দর্শনার্থীকে মেলায় আসতে দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। প্রথমদিকে ক্রেতা-দর্শনার্থীর কিছুটা খরা থাকলেও ১৯তম দিন মেলা টইটুম্বর হয়ে পড়ে। গতকাল মেলা প্রাঙ্গণের কোথাও তিল ধারণের জায়গা ছিল না।
এদিকে আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল সামাল দিতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের। একই সঙ্গে মেলার গেটে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদেরও। গতকাল বিকাল ৫টার আগেই টিকিট কেটে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন লক্ষাধিক দর্শনার্থী। তখনও মেলায় প্রবেশের জন্য টিকিট কাটার লাইনে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ অপেক্ষায় ছিল। সবমিলে গতকাল প্রায় দুই লাখের মতো মানুষ প্রবেশ করেন। এর আগে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাতে একদিনে টিকিট কেটে এতো দর্শনার্থী প্রবেশ করেনি বলে জানিয়েছেন মেলা মাঠের ইজারাদার মীর শহিদুল। তিনি বলেন, গতবছর একদিনে সর্বোচ্চ এক লাখ ৭৫ হাজার দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করেন। এবার সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে। ফলে ১৯তম দিনের মতো ২০ তম দিনেও সর্বোচ্চ সংখ্যক টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, এবার প্রথমদিকে দর্শনার্থী অনেক কম এসেছে। মেলার প্রথম ১৮ দিন টিকিট কেটে পাঁচ লাখের মতো দর্শনার্থী প্রবেশ করে। যা আগের বছরের তুলনায় অনেক কম। গত শুক্রবারই প্রথম মেলায় লাখের ওপরে দর্শনার্থী এসেছে। যার রেশ ছিল গতকাল শনিবারও। এর আগের দুই শুক্রবার এক লাখের কম দর্শনার্থী প্রবেশ করে। আমরা আশা করছি সামনে দর্শনার্থী আরও বাড়বে।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মেলার ভিতরে দর্শনার্থীদের ভিড়ে সামনে পা ফেলে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। মেলার কোথাও বিন্দুমাত্র জায়গা ছিল না। শুধু মেলা প্রাঙ্গণ নয়, দর্শনার্থীদের সেই ঢল আচড়ে পড়ে গেটের বহিরেও। মাত্রাতিরিক্ত শীতের কারণে এবার মেলায় কাঙ্খিতহারে লোকজন আসছিল না। কিন্তু গতকাল পুরো উল্টো চিত্র দেখা যায়। ছুটির দিন হওয়াতে এদিন মানুষ যেন মেলায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বিক্রেতারা বলছেন, শেষের দিনগুলোতে মানুষের উপস্থিতি বেড়ে যায় বহুগুণ। এবারও তাই হয়েছে। মেলায় ঘুরে দেখা যায়, নিজেদের পছন্দের পণ্য কিনছেন নানা বয়সি মানুষ। দেশ-বিদেশের নানা পণ্যের সমাহার আর ‘অফারে’র মধ্য থেকে নিজেদের পছন্দের পণ্যটি কিনতে ব্যস্ত ছিলেন ক্রেতারা। এছাড়া একই প্রাঙ্গণে প্রায় সব ব্র্যান্ডের স্টল ও প্যাভিলিয়ন থাকায় বেশ যাচাই-বাছাই করেই পণ্য কিনেছেন তারা। ছুটির দিন হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষকেই মেলায় আসতে দেখা গেছে পরিবার-পরিজন নিয়ে। মাসব্যাপী এই মেলা শুরুর দিকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিষ্ঠাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, এর আগের মেলায়ও লক্ষ্য করা গেছে তৃতীয় সপ্তাহে এসে মেলা জমছে। কারণ তৃতীয় সপ্তাহে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের ওপর বিশেষ ছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই দর্শনার্থী ও ক্রেতারা এ সময়টাই পণ্য কেনার জন্য বেছে নেন।
মেলায় দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেলায় দর্শনার্থী ও ক্রেতা এসেছে। উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি ভিড় করেছেন হাজারো গৃহকর্তা আর গৃহিণী। সঙ্গে ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে আসেন অনেকে। নিম্নবিত্ত থেকে বিত্তশালী সব শ্রেণির মানুষের ভিড় ছিল বাণিজ্য মেলায়।
এদিকে মেলায় বিক্রয় কর্মীরা ক্রেতা ও দর্শনার্থীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। গতকাল বেশি ভিড় ছিল গৃহস্থালি পণ্য এবং খাবার দোকানে। তারুণ্যের ভিড় দেখা গেছে মোবাইল ফোন, বেøজার ও কটির স্টলগুলোতে। তবে তুলনামূলক বেশি ভিড় ছিল গহনার দোকানগুলোতে। পণ্যের মূল্য ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই আছে বলে জানান কোনো কোনো ক্রেতা।
এদিকে আয়োজকরা আশা প্রকাশ করে বলেন, ছুটির দুই দিনে যেভাবে ক্রেতাদের মেলায় লক্ষ্য করা গেছে আগামী বাকি দিনগুলোতে এভাবেই ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা আসবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ মেলার বাকি আছে মাত্র আর ১০ দিন। তাছাড়া প্রায় প্রতি বছরই মেলার শেষের দিকে প্রচুর পরিমাণে দর্শনার্থী মেলায় আসেন তাদের পছন্দের পণ্যটি কম মূল্যে কিনে নিতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ