Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দেশ দু’টি বৈশ্বিক মুক্ত বাণিজ্যনীতির বিপরীত ধারায় চলছে

বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র-চীন

| প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : চীন ও রাশিয়াকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) সদস্যপদের ব্যাপারে সমর্থন দেয়া একটা ভুল ছিল মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশ দুটি সংস্থাটির আইনের প্রতি কোনো তোয়াক্কা করে না- এমন অভিযোগ এনে এ বক্তব্য প্রদান করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। তবে একই দিনে ডব্লিউটিওর এক বিচারক চীনা পণ্যের বিরুদ্ধে নেয়া ত্রুটিপূর্ণ অ্যান্টি ডাম্পিং পদক্ষেপ শোধরানোর জন্য ২২ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছে ওয়াশিংটনকে। কংগ্রেসে উপস্থাপন করা প্রতিবেদনে ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ বেইজিং ও মস্কোর অন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলনের তালিকায় কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছেন। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দেশ দুটি বৈশ্বিক মুক্ত বাণিজ্যনীতির বিপরীত ধারায় চলছে। ইউএসটিআরের রবার্ট লাইটজিয়ার বলেন, প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, বিশ্বের প্রধান কিছু অর্থনীতি বাণিজ্য ও ন্যায্য ভিত্তিতে অংশগ্রহণের জন্য তাদের বাজার উন্মুক্ত করছে না, যার ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ চর্চা ডবিøউটিও সদস্যদের গৃহীত বাজারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে বেমানান এবং ডবিøউটিওর মূলনীতির বিপরীত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার গৃহীত আমেরিকা ফার্স্ট নীতির অংশ হিসেবে বৈদেশিক বাণিজ্য সহযোগীদের, বিশেষ করে চীনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছেন। এসব ব্যবস্থার আওতায় আছে অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতের সম্ভাব্য ডাম্পিংয়ের বিপরীতে নতুন করে বাণিজ্য তদন্ত আরোপ। উল্লেখ্য, আমেরিকা ফার্স্ট নীতি ছিল এক বছর আগে ক্ষমতায় আরোহণ করা ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি। ২০১৬ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৩০ হাজার ৯০০ কোটি ডলার এবং গত বছরে এটি তা ১ হাজার কোটি ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইউএসটিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালে ডবিøউটিওতে যোগদানের পর থেকে বেইজিং কার্যত বাজারবান্ধব সংস্কারের প্রচেষ্টা খারিজ করেছে এবং এর বদলে বাণিজ্যের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি এবং বিদেশী প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে বাধা প্রদান করেছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ডবিøউটিওর আইন বেইজিংয়ের এ হস্তক্ষেপমুখী নীতি ঠিক করার জন্য যথেষ্ট নয় এবং ২০০১ সালে চীনের সদস্যপদ লাভে সহায়তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘ভুল’ করেছিল। ট্রাম্প ক্ষমতাগ্রহণের পর বেইজিংয়ের সঙ্গে আলোচনায় কিছুটা ফল পাওয়া গেছে। যেমনÑ চীনের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের গরুর মাংসের নতুন করে প্রবেশাধিকার, তবে সেগুলো একেবারেই উপেক্ষণীয় মাত্রার পরিবর্তন বলে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন তার অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের ভূমিকাকেই প্রধানতম রাখার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং ঘরোয়া শিল্পের উন্নতি, দিকনির্দেশনা ও সাহায্য করে যাচ্ছে এবং এর বিপরীতে একই সঙ্গে তাদের বিদেশী প্রতিযোগীগুলোর জন্য বাধা ও ক্ষতিকর কর্মসূচি গ্রহণ করছে। এছাড়া চীনের কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে মূল্যবান মেধাস্বত্ব্ব ভাগাভাগি করার জন্য চাপ দিচ্ছে। ইউএসটিআর একইভাবে মস্কোরও সমালোচনা করে। ২০১২ সালে ডবিøউটিওর সদস্যপদ নেয়ার পর থেকে তারা অস্বচ্ছ বন্দরনীতি এবং কৃষিপণ্যের আমদানিতে বাধা প্রদান করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়াকে ডবিøউটিওর সদস্য হতে দেয়া ভুল হয়েছে। কারণ দেশটি সংস্থাটির আইনকানুন পুরোপুরিভাবে মেনে চলার জন্য প্রস্তুত নয়। ওদিকে ডবিøউটিওর ডিসপিউট সেটেলমেন্ট বডি গত মে মাসে রায় দিয়েছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অ্যান্টি ডাম্পিং চর্চা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির সঙ্গে বেমানান। বিচারক সাইমন ফারবেনবøুম এক প্রতিবেদনে বলেন, এটি আশা করা ‘যৌক্তিক’ যে যুক্তরাষ্ট্র ১৫ মাসের মধ্যে এ রায় কার্যকর করবে। তিনি বলেন, রায় বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের ২২ আগস্ট পর্যন্ত সময় পাবে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে চীন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে যে, দেশটি ডবিøউটিওর আইন ভঙ্গ করে ‘জিরোয়িং’ নামে পরিচিত একটি চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। এ চর্চার আওতায় আমদানি পণ্যের মূল্য যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মূল্যের সঙ্গে তুলনা করে নির্ণয় করা হয়। এর ফলে রফতানিকৃত দেশটি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ডবিøউটিওর বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল মোটা দাগে চীনের পক্ষেই রায় দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ‘জিরোয়িং’-এর দায়ে অভিযুক্ত করে। ডবিøউটিওতে বেশ কয়েকটি একই রকম সালিশে পরাজিত হওয়া যুক্তরাষ্ট্র গত বছরের জুনে জানায়, একটি ‘গ্রহণযোগ্য’ সময়ের মধ্যে তারা রায়ের সুপারিশ কার্যকর করবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীন বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণের জন্য ডবিøউটিওকে একজন বিচারক নিয়োগ দিতে অনুরোধ করে। এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ