Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ সীতাকুন্ডে লাউ চাষে স্বাবলম্বী

| প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : সীতাকুন্ডে চলতি মৌসুমে পুষ্টিকর সবজি লাউ চাষ করে উপজেলার সাড়ে তিন হাজার পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো টেরিয়াইল, ইয়াকুবনগর, সেয়দপুর, মুরাদপুর, বাড়বকুন্ড, কুমিরা, ফৌজদারহাট, ভাটিয়ারী, পৌরসদরের মধ্যম মহাদেবপুরসহ আরো অন্যান্য অঞ্চলে লাউয়ের চাষ হলেও সবচেয়ে বেশি এই সবজির চাষ হয়েছে বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল ও কলাবাড়িয়া অঞ্চলে। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সরেজমিন ঘুরে কৃষকদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, গত বছর সাগরের বেড়িবাঁধ থেকে শুরু করে পাহাড়ের পাদদেশে পর্যন্ত লাউয়ের চাষ করে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেছিলেন কৃষক। কিন্তু চলতি বছরে অকাল বৃষ্টিতে লাউগাছের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে উৎপাদন বৃদ্ধি হওয়াতে তা অনেকটা পুষিয়ে গেছে বলে কৃষক পরিবার জানিয়েছেন। বিষমুক্ত সবজি ও গাছে পোঁকা দমনে কৃষক এখন ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করছেন। এনজিও সংস্থা ইপসার কৃষি কর্মকর্তা সুমন দেবনাথ জানান, চলতি মৌসুমে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কারিগরি সহায়তায় উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে ও ইপসা (ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন)-এর বাস্তবায়নে পুরো উপজেলায় প্রায় দুই হাজার ফেরোমন ফাঁদ কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। আরো প্রায় তিন হাজার ফাঁদ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা খাঁন মোহাম্মদ সালেহীন বলেন, লাউ চাষে উৎপাদন বেশি ভালো হওয়ায় কৃষকরা ক্রমশ লাউ চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। এ ছাড়া বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে উপজেলাব্যাপী সর্বত্র ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে কৃষকদের একদিকে যেমন খরচ প্রায় অর্ধেকেরও কম হয়, অন্যদিকে ক্রেতারাও বিষমুক্ত লাউ ও সবজি ক্রয় করে তারা বেশির ভাগ উপকৃত হচ্ছেন। বারৈয়াঢালা ইনিয়নের টেরিয়াইল বøকের লাউচাষি মো. নবী জানান, চলতি মৌসুমের আশ্বিন মাসে তার এক একর জমিতে লাউচাষ করেছেন। এতে শ্রমিক, বাঁশের কঞ্চিসহ খরচ পড়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। তিনি এ পর্যন্তÍ পাইকারিতে প্রতি শ’লাউ চার হাজার টাকা হিসেবে এক লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। বাজার দর এ অবস্থায় থাকলে আরো অন্তত ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, সবজিতে পোঁকা দমনে বিনামূল্যে ফেরোমন ফাঁদ পেয়ে তারা উপকৃত হয়েছেন এবং ফসলও ভালো হয়েছে। এ বøকে দায়ীত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী জানান, তার এলাকায় এ বছর প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে ১০০-এর বেশি কৃষক লাউচাষ করেছেন। কৃষকরা প্রতি মৌসুমে লাউসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করে বেশির ভাগই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এ এলাকার উপর এক লাউচাষি মো. বাবলু মিয়া খোকন বলেন, গত বছর লাউচাষ করে প্রায় এক লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। তারই ধারাবাহীকতায় চলতি বছরেও এক একর আট শতক জমিতে লাউচাষ করেছি। এতে খরচ পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা পরিস্থিতি অনুক‚লে থাকলে আরো এক লাখ টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, অকাল বৃষ্টি না হলে প্রায় দেড় লাখ টাকার লাউ বিক্রি করতে পারতেন। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত সাহার কাছে লাউ উৎপাদন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জৈব পদ্ধতিতে বিষমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে এখন। তাই লাউসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদনে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে। কীটনাশক বন্ধকরতে কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। চলতি বছরে ২০০ হেক্টর জমিতে সাড়ে তিন হাজার কৃষক লাউচাষ করেছেন। লাউচাষ করে কৃষি পরিবার অনেক স্বাবলম্বী হচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ