Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শুরুতে পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল নিয়ে অনিশ্চয়তা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

জিটুজি ভিত্তিতে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপনের জন্য চায়না রেলওয়ে গ্রুপের সাথে চুক্তি হয় ২০১৬ সালের আগস্টে। এর মধ্যে দেড় বছর অতিক্রান্ত হলেও ঋণচুক্তি হয়নি। এতে করে উদ্বোধনের দিন থেকে পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যদিও চলতি মাসেই প্রকল্পটির ঋণচুক্তি সই হতে পারে বলে মনে করছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা। তারা আশাবাদী শিগগিরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেশে এসে পৌঁছাবে। এতে করে চলতি মাসেই ঋণচুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো পদ্মা সেতু রেল প্রকল্প পরিচালকের চিঠিতে এ অনিশ্চয়তার চিত্র ফুটে উঠেছে।
গত ৯ জানুয়ারি পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের (সিআরইসি) সঙ্গে ২৭ হাজার ৬৫২ কোটি টাকার বাণিজ্যিক চুক্তি সই হয় ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট। এরপর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে সে বছর ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম দফা ও ২০১৭ সালের ১৯ আগস্ট সংশোধিত ঋণ প্রস্তাব চীনা দূতাবাসে পাঠানো হয়। ঋণচুক্তি স্বাক্ষর ত্বরান্বিত করার জন্য কয়েক দফা চিঠি ও আধা সরকারিপত্র (ডিও) দেওয়া হয়েছে। দুটি প্রতিনিধি দল চীন সফরও করেছে। উচ্চ পর্যায়ের আরেকটি দল চীন সফরে যাবে শিগগিরই। প্রকল্প পরিচালকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের পর ওই ঋণ কার্যকর হয়ে চীনা এক্সিম ব্যাংকের অর্থ ছাড় হওয়াটাও দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ। সেতু কর্তৃপক্ষের প্রকল্প কর্ণফুলী টানেলের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের এক বছরের বেশি সময় পর চীনা এক্সিম ব্যাংক অর্থ ছাড় করে। আর বেইজিংয়ের বাংলাদেশ ইকোনমিক কাউন্সিলরের পাঠানো ই-মেইল থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে, ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আরও অনেক প্রক্রিয়া অবশিষ্ট রয়েছে এবং ঋণচুক্তি সই কতটা দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় ইআরডি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপনে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এজন্য ২০১৬ সালের আগস্টে চায়না রেলওয়ে গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি সই করা হয়। জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর প্রকল্পটিতে বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ৬০৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। তবে চীনের ঋণ না পাওয়ায় তা কমিয়ে সংশোধিত বাজেটে ৬ হাজার ৫৮৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। তবে চীনের ঋণ না পেলে এ অর্থ ব্যয় হবে না। এতে রেলওয়ের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন ৪৫ শতাংশ কম হবে বলে স¤প্রতি এক চিঠিতে জানান পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের পরিচালক।
প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার ব্রডগেজ মেইন লাইন। চারটি সেকশনে ভাগ করে এর নির্মাণকাজ পরিচালিত হবে। এগুলো হলো-রাজধানীর কমলাপুর থেকে গেন্ডারিয়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটার, গেন্ডারিয়া থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার, তৃতীয় পর্যায় মাওয়া থেকে ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার ও ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এর বাইরে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীসহ ৬৬টি মেজর ও ২২৪টি মাইনর সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ৯টি বড় সেতুর জন্য নদী শাসন লাগবে। এছাড়া এই রেলপথে একটি হাইওয়ে ওভারপাস, ২৯ পয়েন্টে লেভেল ক্রসিং ও ৪০টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটিতে প্রায় ২৩ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার ঢালাইকৃত রেলপথ (ভায়াডাক্ট) নির্মাণ করা হবে। পাথরবিহীন রেলপথ (ব্যালাস্টলেস ট্র্যাক) তথা নতুন প্রযুক্তির এ রেলপথ দেশে প্রথম নির্মাণ করা হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা সেতু পেরিয়ে মুন্সীগঞ্জের পথে এ অংশটি হবে ফ্লাইওভারে।
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে স্টেশন থাকবে ছয়টি। এগুলো হলো, কেরানীগঞ্জ, নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, জাজিরা ও শিবচর। ভাঙ্গা থেকে নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত অংশে নতুন আটটি রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এগুলো হলো-ভাঙ্গা জংশন, নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল, জামদিয়া ও পদ্মাবিল। এগুলোর বাইরে ঢাকা, গেন্ডারিয়া, ভাঙ্গা, কাশিয়ানী, রূপদিয়া ও সিঙ্গিয়া স্টেশনের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। রেলওয়ের তথ্যমতে, ঢাকা-ভাঙ্গা-যশোর রেলপথে ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এ রেলপথে ব্যবহার করা হবে আন্তর্জাতিক মানের ৬০ কেজির রেল। আর এ পথের এক্সেল লোড ধরা হয়েছে ২৫ টন। আর সেতু ও ভায়াডাক্টের এক্সেল লোড হবে ৩২ টন।
রেলপথটি নির্মাণে প্রায় এক হাজার ৯৬৮ একর জমির প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ২০০ একর সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর ও ৬৮ হেক্টর সেতু কর্তৃপক্ষ থেকে নেওয়া হবে। অবশিষ্ট এক হাজার ৭০০ একর জমি বেসরকারি খাত থেকে অধিগ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে প্রকল্পটির জমি অধিগ্রহণ ও নকশা মূল্যায়নের কাজ চলছে। তবে কবে নাগাদ মূল কাজ শুরু হবে বা সেতুতে ট্রেন চলাচল শুরু হবে তা নিশ্চিত নয়। যদিও ২০১৮ সালেই একই দিনে ট্রেন ও গাড়ি চলাচলের ঘোষণা দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রী। সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি মাসে ঋণচুক্তি সই হলেও কবে নাগাদ অর্থ ছাড় হবে না নিশ্চিত নয়। এতে মূল রেলপথ নির্মাণ কবে শুরু বা শেষ হবে তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে ভাঙ্গা থেকে জাজিরা হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মাওয়া পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এতে ফরিদপুরের সঙ্গে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ চালু হবে। পরবর্তী সময়ে ভাঙ্গা থেকে যশোর ও মাওয়া থেকে ঢাকা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে পদ্মা সেতু। ঘোষণায় বলা হয়েছে, উদ্বোধনের দিনেই পদ্মা সেতুতে গাড়ি ও ট্রেন চলাচল করবে। যদিও চলতি বছর শেষ হচ্ছে না পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। এখন পর্যন্ত ৫৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে মূল অবকাঠামো নির্মাণের। পদ্মা সেতুর ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সেতটিু নির্মাণে আরও ২৩ মাস অতিরিক্ত সময় লাগবে বলে কিছুদিন আগে এক চিঠিতে সেতু বিভাগকে জানিয়েছে। এ হিসাবে ২০২০ সালের অক্টোবরে সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার কথা। আর রেলপথ নির্মাণ এখনও শুরুই হয়নি। কবে থেকে পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে।



 

Show all comments
  • ইমরান ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৩:৫৫ এএম says : 0
    যাই হোক না কেন মান বজায় রেখে যেন হয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ