Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মিয়ানমার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা হত্যাকান্ড চালিয়েছে

রাখাইনে গণকবরের সন্ধানে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

| প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন পাঁচটি গণকবরের সন্ধান পাওয়ার খবরে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র। এপির প্রতিবেদনে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যাকাÐ চালিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) অনুসন্ধানে নতুন পাঁচটি গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় এই উদ্বেগ জানানো হয়। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে রাখাইনে নতুন পাঁচটি গণকবরের কথা। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থিনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফানে দুজারিক বলেন, এটা প্রমাণ করে রাখাইনে জাতিসংঘের প্রবেশের অনুমতি প্রয়োজন। এখন আমাদের সেখানে প্রবেশের অনুমতি নেই। আমরা তা চাই। এমন খবর যাচাইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। গণকবরের সন্ধানের খবরে জাতিসংঘের মতোই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, মানবাধিকার হরণ ও লঙ্ঘনে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে সহযোগিতাই আমাদের মূল লক্ষ্য। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় একটি তদন্তের মাধ্যমেই সত্যিকার অর্থে কী ঘটেছে তা জানা সম্ভব। বিশ্বের জানা উচিত আসলেই সেখানে (রাখাইন) কী ঘটেছে। অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমার সরকার রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিধনযজ্ঞ ও নিপীড়ন চালানোর কথা অস্বীকার করে আসছে। এপির অনুসন্ধানে মিয়ানমারে নতুন পাঁচটি গণকবর চিহ্নিত হয়েছে। রাখাইনের গু দার পাইনের একই এলাকার ওই পাঁচ গণকবরে চার শতাধিক মানুষের মরদেহ থাকতে পারে বলে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ২৪ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে নতুন গণকবরের সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এপি। নিপীড়নের অভিযোগকারীদের কেউ কেউ নিজেদের দাবির পক্ষে সময়-চিহ্নিত ভিডিও সরবরাহ করেছেন। পরে নির্দিষ্ট ওই অঞ্চলে গিয়ে অনুসন্ধানের চেষ্টা করলেও প্রবেশাধিকার না থাকায় ব্যর্থ হয় এপি। সাক্ষাৎকার দেওয়া রোহিঙ্গারা জানান, তারা প্রত্যেকেই গু দার পাইনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রবেশ পথের মূল রাস্তায় তিনটি গণকবর দেখেছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করেছেন, গ্রামের পার্বত্য এলাকার কবরস্থানের কাছে আরও বড় দুটি গণকবর রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সেনারা সেখানে রোহিঙ্গাদের একত্রিত করে হত্যা করেছে। এছাড়া গ্রামজুড়ে বেশ কিছু ছোট ছোট গণকবর থাকার কথাও জানিয়েছেন তারা। খবরে বলা হয়েছে, গু দার পাইনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কতোজন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এপির পাওয়া স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে গ্রামটি ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয় স¤প্রদায়ের নেতারা এখন পর্যন্ত ৭৫ জনের মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তবে গ্রামবাসীদের আত্মীয়দের সাক্ষাৎকার এবং গণকবর ও আশেপাশে তাদের দেখতে পাওয়া লাশের সংখ্যা বিচার করে নিহতের সংখ্যা চারশোর বেশি হতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো রাখাইনের ইনদিন গ্রামে দশ রোহিঙ্গাকে হত্যার স্বীকারোক্তি দেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারও আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী হিন্দুদের দুটি গণকবর সাংবাদিকদের দেখিয়ে দাবি করেছিল সশস্ত্র রোহিঙ্গারা এসব হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট পুলিশ ফাঁড়িতে সমন্বিত সশস্ত্র হামলার পর রাখাইনে অভিযান জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এ অভিযানে হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে সাড়ে ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। জাতিসংঘের মতে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গারা ২০১২ সালে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ ২৬ আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৯ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ডক্টরস উইদাউথ বর্ডারস। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, নিহতদের মধ্যে অন্তত ৬ হাজার ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে সহিংসতায়। এদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ৭৩০জন। রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে হত্যা, ধর্ষণ, গুম ও প্রহারের ঘটনা নথিবদ্ধ করেছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে রোহিঙ্গারা মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হয়ে থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘ এই ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয়’ উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছে। একে নিধনযজ্ঞ বলেছে যুক্তরাষ্ট্রও। আনাদোলু পোস্ট।



 

Show all comments
  • Mamun-or Rashid ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০৭ পিএম says : 0
    জাতিসংঘের কাজ শুধুমাত্র উদ্বেগ জানানো- ...............রা এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না শুধুমাত্র উদ্বেগ জানাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ