Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বেগম খালেদা জিয়ার সাজা এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্বাধীন দেশে আলাদা জাতিসত্ত¡া ও আত্মপরিচয় নিয়ে বসবাসের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আমরা যে ‘বাংলাদেশী’, স্বাধীন হওয়ার আগে এবং পরেÑএ বিষয়টি স্পষ্টভাবে নির্ধারিত ছিল না। বাঙ্গালী হিসেবেই পরিচিত ছিলাম। বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা আসামসহ বাংলাদেশের বাইরে যেসব বাংলা ভাষাভাষী রয়েছে, তাদের সাথে ভাষাগত মিলের কারণে আমরাও বাঙ্গালী হিসেবেই পরিচিত ছিলাম। অথচ ভাষা এক হলেও জাতীয়তাবাদ যে আলাদা, এ বিষয়টি প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি মনে করেছিলেন, আমরা স্বাধীন দেশের আলাদা নাগরিক এবং আমাদের স্বতন্ত্র সত্ত¡া রয়েছে। বিষয়টি উপলব্ধি করে তিনি স্বাধীন দেশের আলাদা নাগরিক হিসেবে ‘বাংলাদেশী’ জাতীয়তাবাদের আদর্শ নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। অন্যান্য বাংলা ভাষাভাষী থেকে আমাদের স্বাধীন ভূখÐে জাতি হিসেবে আলাদা করেছিলেন। ইংরেজি ভাষায় কথা বললেই যে একজন আমেরিকান, অস্ট্রেলিয়ান কিংবা নিউজিল্যান্ডার বৃটিশ হয়ে যায় না, তেমনি বাংলা ভাষায় কথা বললেই একজন বাঙ্গালী বাংলাদেশী হয় না, ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ প্রবর্তনের মধ্য দিয়েই জিয়াউর রহমান তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত থাকার জন্য তার এই জাতীয়তাবাদের ধারণাও রক্ষাকবচ হয়ে উঠে। ফলে তার প্রবর্তিত ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ আদর্শটি দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করে। জাতীয়ভাবেও আমাদের পরিচয় লেখা হয় ‘বাংলাদেশী’। জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদের এই আদর্শের উপরই সর্বপ্রথম গড়ে উঠে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তথা বিএনপি। দলটির মৌলিক এই আদর্শ বাংলাদেশের মানুষের কাছেও ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। জিয়াউর রহমানের এই জাতীয়তাবাদের আদর্শের টানে ভিন্নমতের অনেক নেতা ও সাধারণ মানুষ দলটিতে যোগ ও সমর্থন দেয়। বাংলাদেশে জাতিসত্ত¡ার পরিচয় নিয়ে গড়া বিএনপি অল্প সময়ে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে উঠে। জিয়াউর রহমান হয়ে উঠেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আদর্শের প্রতীক। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে জিয়াউর রহমানের মৃত্যু হলে তার প্রবর্তিত আদর্শ এগিয়ে নিতে হাল ধরেন তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি এমন এক সময় দলটির নেতৃত্বে আসেন, যখন এ দলের অনেক বড় বড় নেতা দল ছেড়ে যান এবং দলটি হয়ে পড়ে নাজুক ও ভঙ্গুর। এ অবস্থায়, সময়ের প্রয়োজনে জাতীয়তাবাদী আদর্শকে এগিয়ে নিতে এবং মানুষের সেন্টিমেন্টকে ধরে রাখতে খালেদা জিয়ার কোনো বিকল্প ছিল না। রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ খালেদা জিয়া, অবিশ্রান্ত পরিশ্রম করে জাতীয়তাবাদের এ ধারণাকে এগিয়ে নিতে সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। তার এই সংগ্রামের কারণে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবীত হতে থাকে এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। জাতীয়তাবাদী আদর্শের মানুষ দিক-নিশানা পান। খালেদা জিয়ার দৃঢ় ও আপসহীন নেতৃত্বের কারণে ’৯১ সালে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শের দল বিএনপি ক্ষমতায় আসে। তিন হন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। হয়ে উঠেন ‘বাংলাদশী জাতীয়তাবাদে’র প্রতীক।

দুই.
গত ৮ ফেব্রæয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে বেগম খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সশ্রম কারাদÐ হয়েছে। তার ছেলে তারেক রহমানসহ ৫ জনকে ১০ বছরের কারাদÐ ও ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। বিশেষ আদালতের রায় সঠিক না বেঠিক, এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক ও রাজনৈতিক লাভ-লোকসানের হিসাব হতে পারে এবং তা হচ্ছেও। তবে এর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে আপিল ও শুনানির মাধ্যমে সর্বোচ্চ আদালতে। রায়ের বিষয়টি যদি বৃহৎ পরিসরে গভীরভাবে বিবেচনা করা হয়, তবে দেখা যাবে, এটা ব্যক্তি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নয়, বরং দলটির আদর্শ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে গেছে। কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শের ধারক ও বাহক হিসেবে সাধারণত দলের প্রধানকেই ধরা হয়। দল প্রধানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাÐের পর আওয়ামী লীগের অবস্থা অত্যন্ত করুণ হয়ে পড়ার কথা সবারই জানা। অত্যন্ত কঠিন পথ অতিক্রমকালে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে এগিয়ে নিতে অনিবার্যভাবেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এর কারণ, দলের আদর্শের অনুসারীদের সেন্টিমেন্ট ধারণ এবং তাদের আশ্বস্ত করার জন্য সে সময়ের নেতৃবৃন্দ মনে করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের আদর্শ ধরে রাখা সম্ভব হবে না। তদ্রæপ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ আদর্শ এগিয়ে নেয়া এবং এর অনুসারীদের সেন্টিমেন্ট ধরে রাখার জন্য খালেদা জিয়ার বিকল্প ছিল না বলে সে সময়ের নেতৃবৃন্দ মনে করেছিলেন। এটা আজ বাস্তব যে, এই দুই নেত্রীই দুই ধারার আদর্শের প্রধান ধারক, বাহক এবং প্রতীক। শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে যেমন আওয়ামী লীগের কথা চিন্তা করা যায় না, তেমনি খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে বিএনপির কথা চিন্তা করা যায় না। ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের সময় এই দুইজনকে মাইনাস করার প্রচেষ্টার সময়কালে স্ব স্ব দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সেন্টিমেন্ট থেকেই তা বোঝা গেছে। শত চেষ্টা করেও তাদের মাইনাস করা যায়নি। রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলে পারিবারিক লিগ্যাসি বা ধারাবাহিকতার বিষয়টি খুবই সাধারণ এবং শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা বিশ্বেই এই নজির রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে পারিবারিক লিগ্যাসি বেশি দেখা যায়। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ অন্যান্য দেশে দল প্রধানের অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে দলের দায়িত্ব দেয়ার অসংখ্য নজির রয়েছে। ভারতের কংগ্রেসের কথা যদি বিবেচনা করা হয় তবে দেখা যাবে, জহরলাল নেহরুর পর দলের আদর্শ ধরে রাখার প্রয়োজনে একটা সময় তার কন্যা ইন্দিরা গান্ধীকে দল প্রধান করা হয়, ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর তার পুত্র রাজীব গান্ধী, রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং বর্তমানে রাজীব গান্ধীর পুত্র রাহুল গান্ধীকে দল প্রধান করা হয়েছে। অর্থাৎ কংগ্রেস বলতে গান্ধী পরিবারকেই বোঝায়। পাকিস্তানেও পিপলস পার্টিতে জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজীর ভুট্টো এবং তার মৃত্যুর পর তার স্বামী আসিফ আলী জারদারিকে দল প্রধান করা হয়। শ্রীলঙ্কায়ও বন্দরনায়েক পরিবারের ধারাবাহিকতা ছিল। রাজনৈতিক দলে পরিবারের এই ধারাবাহিক নেতৃত্ব আসার মূল কারণই হচ্ছে, দলের আদর্শ ধরে রাখার পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের আবেগ-অনুভূতিকে ধরে রাখা। সংশ্লিষ্ট দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতারাও জানেন, দল ও দলের প্রতিষ্ঠাতার আদর্শ বহন করে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তার পরিবার ছাড়া অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়। দল সমর্থকরা এর বাইরে তা সহজে গ্রহণ করে না। তারা দলের প্রতিষ্ঠাতা বা দল প্রধানকেই আদর্শের কান্ডারি বা প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে। এদের কারো মৃত্যু বা অনুপস্থিতির অর্থই হলো দলের আদর্শ হুমকি বা বিলীন হওয়ার মুখে পড়া। সাজার কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে যদি অনুপস্থিত থাকতে হয়, তবে তার দলের আদর্শ ও ঐক্য যে নাজুক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। আবার তার অনুপস্থিতিতে লিগ্যাসি রক্ষা করে তার পুত্র যে দেশে ফিরে দলের হাল ধরবেন সে পথও আপাতত রুদ্ধ। বলা যায়, যে জাতীয়তাবাদের আদর্শের ভিত্তিতে বিএনপি নামক দলটি গঠিত হয়েছ, সে আদর্শ এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। দলটিকে অস্তিত্বহীন বা আদর্শ থেকে বিচ্যুত ও বিভক্ত করার ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ এক ধরনের সূ² ষড়যন্ত্রে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এ ষড়যন্ত্র ততক্ষণ পর্যন্ত সফল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত দলটির শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার প্রতি অবিচল আস্থা, বিশ্বাস ও অনুগত থাকেন। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে এবং সুবিধাবাদী মনোভাব পরিদৃষ্ট হয়ে উঠে তবে জাতীয়তাবাদের আদর্শ ঝুঁকিতে পড়বে। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী সাধারণ মানুষের মন থেকে তা কোনোভাবেই মুছে ফেলা সম্ভব নয়। দলগতভাবে বিএনপির তৃণমূলে এ আদর্শ অত্যন্ত দৃঢ় হয়ে আছে। দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অন্তরে কেবল জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শ প্রোথিত হয়ে আছে। নিঃস্বার্থভাবে তারা এ আদর্শ ধারণ করেছে। একটি দলের আদর্শ ব্যাপক সংখ্যক জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা সহজ কাজ নয়। এজন্য আদর্শের উদ্ভাবক, প্রবর্তক এবং এর ধারক-বাহকদের অসম্ভব পরিশ্রম করতে হয়। জনগণের কাছে প্রতিনিয়ত যেতে হয় এবং আদর্শের কল্যাণ ও উপযোগিতা অনুপুঙ্খভাবে বোঝাতে হয়। আদর্শের শ্লোগান নিয়ে রাজপথে হাঁটা থেকে শুরু করে সংগ্রামী পথ অবলম্বন করতে হয়। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বেগম খালেদা জিয়া এককভাবেই এ কাজটি করেছেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ভঙ্গুর একটি দল নিয়ে তিনি রাস্তায় রাস্তায় হেঁটেছেন। জেল-জুলুম, টিয়ারশেল থেকে শুরু করে নানাবিধ নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। শত বাঁধা সত্তে¡ও তিনি জাতীয়তাবাদের আদর্শের নিশান উড়িয়ে এগিয়ে গেছেন। তার এই অবিচল নেতৃত্বের কারণেই আমাদের দেশাত্ববোধের আদর্শ জাতীয়তাবাদ ব্যাপক মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে এবং তার অনুসারী করেছে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ এবং তা বাংলাদেশের মানুষের কাছে চির জাগরুক করার ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার যে জনপ্রিয়তা, তা ধ্বংস করতেই মূলত তার ওপর আঘাত করা হয়েছে। কারণ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে যারা বিশ্বাস করে না এবং যারা জানে এ আদর্শ ধ্বংস করতে না পারলে সা¤্রাজ্যবাদের সহযোগিতা এবং তাদের লুটপাট ও শোষণের শাসন কায়েম করা যাবে না, তারাই বেগম খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেয়ার পন্থা অবলম্বন করে চলেছে। শুধু তাই নয়, তার অনুপস্থিতিতে যাতে তার বংশধরদের কেউ জাতীয়তাবাদের আদর্শ বহন করে নিয়ে যেতে না পারে, এ প্রক্রিয়াও চলছে।
তিন.
বিএনপির নেতা-কর্মীদের এটা বুঝতে হবে, জিয়াউর রহমানের প্রবর্তিত আদর্শ ও তার পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য এক ভয়ংকর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় তাদের সুসংহত ও ঐক্যবদ্ধ এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শকে কঠোরভাবে আঁকড়ে থাকা ছাড়া গতি নাই। এজন্য তাদের ধৈর্য্যসহকারে অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার সাজা নিয়ে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তার কথাটি হলো, আইন অনুযায়ী যে কারো বিচার ও শাস্তি হতেই পারে। কিন্তু সেটা শুধু শাস্তি দেয়ার জন্য বিচার হিসেবে জনমনে প্রতিভাত হওয়া উচিত নয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিচার অনেকটা সেভাবেই প্রতিভাত হয়েছে। তার এ কথা থেকে এটাই স্পষ্ট বেগম খালেদা জিয়ার সাজার বিষয়টি শুধু শাস্তি দেয়ার জন্যই দেয়া। এ শাস্তি দেয়ার পেছনে, জাতীয়তাবাদী আদর্শকে ধ্বংস করে দেয়ার সুদূরপ্রসারী নীলনকশা রয়েছে। যতই দিন যাবে তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং বিএনপিকে ধ্বংস করার একের পর এক ঘটনা দ্রæত ঘটতে থাকবে। যেহেতু দল প্রধানকে কারারুদ্ধ করা গেছে, তাই এখন বাইরে দলটির যেসব নীতিনির্ধারক রয়েছে, তাদের কাবু করতে নানা রাকম ফন্দি ফিকির হতে পারে। বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টির ফাঁদ এবং তাতে যদি কেউ কেউ পা দিয়ে বসে তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দলটির উপর দিয়ে অনেক ঝড়ই বয়ে যাবে। এ অবস্থার মধ্যেই ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের আয়োজন করবে। অর্থাৎ বিএনপিকে অপ্রস্তুত রেখে নির্বাচনের আয়োজন করা হবে, যাতে নির্বাচনী প্রচারণামূলক কোনো কাজ করতে না পারে। তবে এটা অনুমান করতে অসুবিধা হচ্ছে না, সরকার কোনোভাবেই বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে দেবে না। তাকে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অযোগ্যই করে রাখবে। আবার একটা ক্ষীণ আশাও করা যায়, আর তা হচ্ছে, যদি আদালত তাকে জামিন দেয় এবং তিনি জেল থেকে বের হয়ে আসতে পারেন, তবে নির্বাচন করতে না পারলেও নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করলে বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা যে সৃষ্টি হবে, তাতে সন্দেহ নেই। এর সবকিছুই নির্ভর করছে ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছার ওপর। আপাত দৃষ্টিতে সরকারের মনোভাব এবং বিএনপির প্রতি তার আচরণ আক্রমণাত্মক বলেই পরিদৃষ্ট হচ্ছে। তবে সময়ের আবর্তনের সাথে রাজনীতির গতিপ্রকৃতি কোনদিকে যায়, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যায় না। তাই এ মুহূর্তে সবার আগে প্রয়োজন দলটির শীর্ষ নেত্রীবৃন্দের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন সিদ্ধান্ত। তাদেরকে ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ আদর্শের অনুসারী নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মনোবল টিকিয়ে রাখতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে, বিএনপি একটি বৃহৎ ও ব্যাপক জনসমর্থিত দল। যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা দলটির রয়েছে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটি এর চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয়। ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও একই পরিস্থিতির শিকার হয়। এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দলটির ঘুরে দাঁড়ানোর মূল কারণ হচ্ছে, জিয়াউর রহমানের আদর্শ এবং খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্ব। দলের নেতা-কর্মীরা যদি একনিষ্ঠভাবে তাদের পথ অনুসরণ করে, তবে জাতীয়তাবাদের আদর্শের এই দলকে ঘুরে দাঁড়াতে বেগ পেতে হবে না।
চার.
বেগম খালেদা জিয়ার সাজা এবং জেলে যাওয়ার বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের রাজনৈতিক কূটকৌশল এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবেই পরিগণিত হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, মানুষ এখন খালেদা জিয়ার দুর্নীতির অভিযোগের সাথে হলমার্ক, ডেসটিনি, সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, শেয়ার বাজার, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাট এবং লক্ষ-কোটি টাকা বিদেশে পাচার হওয়ার সাথে জড়িতদের বিচার না হওয়ার সাথে তুলনা করছে। এছাড়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে করা দুর্নীতি মামলাসহ অন্যন্য মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া, ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ার পরও বহাল-তবিয়তে থাকার বিষয়গুলোও সাধারণ মানুষ জানে। ফলে খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ার বিষয়টি যে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কৌশল ও সিদ্ধান্ত, তা সাধারণ মানুষের মধ্যে বোধগম্য হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)Ñএর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মন্তব্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে বিচার হয় রাজনীতির নিক্তিতে। খালেদা জিয়ার সাজাও তার বাইরে নয়। পশ্চিমা দেশে দুর্নীতির দায়ে সাজা হলে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশে তেমনটি হয় না। রাজনীতিবিদদের মামলায় বিচার প্রক্রিয়া ও আদালতের ওপর সরকারের প্রভাবের বিষয়ে সন্দেহ থাকায়, সাজা হলেই বিরোধী রাজনীতিকদের দোষী হিসেবে দেখেন না তাদের সমর্থকরা। সরকারের প্রতিহিংসা হিসেবে দেখেন। পঞ্চাশের দশক থেকে এ ধারা চলে আসছে। তার এ মন্তব্য থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ প্রণোদিত হয়ে। কাজেই বিএনপির নেতা-কর্মীদের এ নিয়ে হতাশ বা ভীত হলে চলবে না। বরং জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদের আদর্শ ও দর্শনে উদ্ভুদ্ধ হয়ে, বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ়চেতা মনোভাব ও আপসহীনতাকে মনে রেখে নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম চালিয়ে গেলে তাদের দল ঘুরে দাঁড়াবে এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শ সমুন্নত থাকবে।



 

Show all comments
  • তামান্না ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৫:২৯ এএম says : 2
    বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ প্রণোদিত হয়ে। কাজেই বিএনপির নেতা-কর্মীদের এ নিয়ে হতাশ বা ভীত হলে চলবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • আশিক ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৫:২৯ এএম says : 10
    লেখাটি খুব ভালো লেগেছে । লেখককে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • নাসির ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৫:৩১ এএম says : 14
    বিএনপির নেতা-কর্মীদের এ নিয়ে হতাশ বা ভীত হলে চলবে না। বরং জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদের আদর্শ ও দর্শনে উদ্ভুদ্ধ হয়ে, বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ়চেতা মনোভাব ও আপসহীনতাকে মনে রেখে নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম চালিয়ে গেলে তাদের দল ঘুরে দাঁড়াবে এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শ সমুন্নত থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সাব্বির ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৫:৩২ এএম says : 7
    আশা করি বিএনপি নেতাকর্মীরা এই লেখাটা পড়বেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেগম খালেদা জিয়া


আরও
আরও পড়ুন