Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতের অযৌক্তিক চাপ : ঝুলে যাচ্ছে চীনের দরপ্রস্তাব

| প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার হতে দর প্রস্তাবে অংশ নিয়ে শেয়ার কেনার আগ্রহ দেখায় চীনের বৃহৎ দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ সেনজেন ও সাংহাইয়ের সমন্বয়ে গঠিত জোট এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, নাসডাক ও ফ্রন্টিয়ারের সমন্বয়ে গঠিত জোট। এ দুটি জোট আলাদাভাবে দর প্রস্তাব করে। তাতে সর্বোচ্চ ২২ টাকা দর প্রস্তাব করে সেনজেন ও সাংহাই জোট। আর ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, নাসডাক ও ফ্রন্টিয়ারের জোট শেয়ারের জন্য দর প্রস্তাব করে ১৫ টাকা। এ অবস্থায় গত শনিবার ডিএসইর পরিচালনা পরিষদের (বোর্ড) সভায় সর্বোচ্চ দরদাতা চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত অংশীদার করার বিষয়ে একমত হয় ডিএসইর বোর্ড। এরপরই দেখা দেয় বিপত্তি। দর প্রস্তাবে পিছিয়ে থাকা জোটের হয়ে বিভিন্ন পর্যায় থেকে চাপ তৈরি হয়। এ নিয়ে ডিএসইর বর্তমান শেয়ারধারীদের মধ্যে একধরনের অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। আর বিপাকে পরেছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পরিষদ।
এজন্য চাপ দিতে গত শনিবার ডিএসইর পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তের পর ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিক্রম লিমা ঢাকায় আসেন। ইতিমধ্যে তিনি ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ডিএসইর চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেন। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। পাশাপাশি ডিএসইর সাবেক একজন সভাপতি এবং কয়েকজন প্রভাবশালী শেয়ারহোল্ডারের সঙ্গে ফের বৈঠক করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। সেখানে তারা চীনের কাছে শেয়ার বিক্রির ব্যাপারে পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তের কথা জানান। কিন্তু ভারতও ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার হতে চাওয়ায় দ্বিধাদ্ব›েদ্ব পরে যায় ডিএসই এবং বিএসইসি।
জানা গেছে, গতকাল সোমবারে বিএসইসির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ডিএসইর নেতাদের খায়রুল হোসেন বলেন, ভারতের স্টক এক্সচেঞ্জকে শেয়ার দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিষয়টি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা জানতে চান তিনি। এ সময়ে সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের কিছু নির্দেশনার কথা জানান তিনি। তবে আমন্ত্রিত সদস্যরা বলেন, এটি সম্ভব নয়। বিএসইসির চেয়ারম্যানকে তারা বলেন, আপনি দেশ এবং স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের বঞ্চিত করবেন না। স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যরা কোনোভাবেই এই দামে ভারতকে শেয়ার দিতে চায় না। বিষয়টি আপনি বিবেচনা করবেন। তবে স্টক এক্সচেঞ্জের সদ্যদের বঞ্চিত করা হবে না বলে শেষ পর্যন্ত আশ্বাস দিয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান।
জানা গেছে, চীনের শেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই। গত মঙ্গলবার এ ব্যাপারে প্রাথমিক এবং শনিবারের পরিচালনা পরিষদের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই। স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশনের (ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা আলাদাকরণ) শর্ত অনুসারে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে তাদের কাছে এ শেয়ার বিক্রি করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের দাম ২২ টাকা দিচ্ছে চীনা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এ শেয়ারের মূল্য দিতে চায় ১৫ টাকা।
জানা গেছে, চীনের সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ার ২২ টাকা দর প্রস্তাব করেছে। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠান দুটি ৯৯২ কোটি টাকা দর প্রস্তাব করে। একই সঙ্গে ডিএসইর কার্যক্রমের মানোন্নয়নে বিনামূল্যে উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহ করবে। যার বাজারমূল্য ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় ৩০৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই) নেতৃত্বাধীন জোট শেয়ারপ্রতি ১৫ টাকা দরে মোট ৬৭৬ কোটি টাকা দিতে চেয়েছে। তাছাড়া জোটে নাসডাক থাকলেও তারা কোনো শেয়ার নেবে না। জোটটি মোট ২৫ দশমিক ০১ শতাংশ কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে এনএসই ২২ দশমিক ০১ শতাংশ শেয়ার নিতে চায়। বাকি ৩ শতাংশ শেয়ার নেবে ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ। এছাড়াও আগামী ৫ বছরের মধ্যে যে কোনো প্রক্রিয়ায় তাদের বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও বোর্ডে মোট দু’জন সদস্য থাকার প্রস্তাব করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু আইনে আছে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মাত্র একজন সদস্য রাখা যাবে।
কেন চীনকে কৌশলগত অংশীদার পেতে চায় ডিএসই : আইন ও ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিম অনুযায়ী সব ধরনের নিয়ম মেনে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে চায় সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ। এছাড়া শেয়ার কেনার জন্য বেশি দাম প্রস্তাব করেছে তারা। পাশাপাশি যুক্তিগত সহায়তার বিষয়টিও পরিষ্কার করেছে এ কনসোর্টিয়াম। সবশেষ যুক্তি হল কোনো ভায়ার মাধ্যমে নয়, তারা সরাসরি শেয়ার কেনার প্রস্তাব দেয়। অন্যদিকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নাম ব্যবহার করা হলেও সরাসরি তারা নয়।



 

Show all comments
  • Ashraf ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৩:৩৬ এএম says : 0
    মাড়োয়ারি ডাকাতদের লুটের পথ বন্ধ হবে তাই তাদের আপত্তি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিএসই

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ