Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খালেদা জিয়াকে বন্দী করে সরকার বড় ভুল করেছে -কর্নেল অলি আহমেদ

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে সরকার বড় ভুল করেছে বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান ড. কর্ণেল (অব.) অলি আহমদ। তিনি বলেন, সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত, প্রতিশোধপরায়ণতা ও প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়া ও বিএনপির জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে, আইন লঙ্ঘন করে, সংবিধান না মেনে নির্জন-পরিত্যক্ত কারাগারে বন্দি করার কারণে সরকারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল (শনিবার) সকালে সেগুনবাগিচার স্বাধীনতা হলে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত “স্বাধীনতার ৪৭ বছর: গণতন্ত্রের সংকট” শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। 

কর্ণেল অলি আহমদ বলেন, খালেদা জিয়া শুধু একজন ব্যক্তি নন তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে জন নন্দিত ব্যক্তি। আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়াকে বন্দী করে সবচেয়ে বড় ভুল করেছেন। তার জন্য দেশের মানুষ নীরবে কাঁদছে। ৭৩ বছরের একজন মানুষকে যিনি তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাকে নির্জন কারাগারে রাম-সীতার বনবাসে পাঠিয়ে জনগণের হৃদয়ে আঘাত করেছে বর্তমান সরকার। সরকার জনগণের কাছে ধরা পড়ে গেছে। তারা খালেদা জিয়াকে বন্দী করে নির্বাচনের মাঠ থেকে প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দিয়ে আবারও ক্ষমতা দখল করতে চায় সেটা জনগণ বুঝে গেছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে এক টাকাও দুর্নীতি হয়নি জানিয়ে কর্ণেল অলি আহমদ বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান কেউ এক টাকাও মেরে খাননি। পুরো টাকাই ব্যাংকে আছে। দুই কোটি টাকা এখন ছয় কোটি টাকা হয়েছে। কিছু পদ্ধতিগত ভুল ছিল। অভিজ্ঞতার অভাব এবং না জানার কারণেই এ পদ্ধতিগত ভুল হয়েছে। পদ্ধতিগত ভুলের জন্য তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা হতে পারে না। জনগণ এ সাজা মেনে নেয়নি। দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। ব্যাংক লুট হয়ে যাচ্ছে। বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। শেয়ার বাজার লুট হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সরকার কিছুই করছে না। অথচ পদ্ধতিগত ভুলের জন্য দেশের সবচেয়ে জননন্দিত নেতৃকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। খালেদা জিয়াকে বন্দীর প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বারবার গনতন্ত্র হত্যা করেছে। বিএনপি বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংসদীয় গণতন্ত্র এনেছে এবং হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আগামী এক বছর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সংকটপূর্ণ সময়। কারণ, সরকারের ভুল রাজনীতির কারণে এবং সর্বত্র দলীয়করণের ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ। অর্থনৈতিকভাবে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং সাধারণ গরিব মানুষ অসহায় জীবনযাপন করছেন। দেশে এখন প্রতিনিয়ত হত্যা, গুম, নির্যাতন আর দুর্নীতি হচ্ছে; প্রশ্নপত্র ফাঁসের পাশাপাশি ব্যাংক লুটপাট হচ্ছে। হলমার্ক, ডেসটিনি, শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন লুটপাট-কেলেঙ্কারির শিকার মানুষ। উন্নয়নের নামে মেগা প্রকল্প গ্রামেগঞ্জে তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি। গ্রামের অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য আনতে পারেনি। গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচার দলীয়করণের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। সুশাসন সুদূরপরাহত। এসব কারণে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নেই, সরকার জনবিচ্ছিন্ন। এখন জনগণ সোচ্চার হয়ে রাস্তায় নামার অপেক্ষায়।
এলডিপি চেয়ারম্যান বলেন, খালেদা জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, জনগণের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। দেশের মানুষ মনে করে, তার নামে মিথ্যা মামলা ও তথ্য দিয়ে অবিচার করা হয়েছে। মানসিকভাবে নির্যাতন করার জন্য পরিত্যক্ত, নির্জন কারাগারে জেল দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সরকারের প্রতিহিংসার শিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মিথ্যা মামলা থেকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে মুক্ত করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করতে হবে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়ে সরকার গঠন নিশ্চিত করতে হবে। এতে জনগণ তাদের জানমাল এবং সামাজিক নিরাপত্তা পাবে। দেশের বিভেদ-কলহ, হানাহানি, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধের রাজনীতি বন্ধ হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জিয়া এবং খালেদা জিয়ার হাত ধরেই বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। এখন আবার গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এসেছে জিয়ার হাত ধরে। দুরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজনীতিক জিয়াউর রহমানের প্রচেষ্ঠায় বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। জিয়ার আমলেই লাখ লাখ শ্রমিককে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল। এখন ১৭০টি দেশে প্রায় ৯০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী কাজ করছে। গার্মেন্টস শ্রমিক এবং প্রবাসী শ্রমিকদের কষ্টে অর্জিত রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে ঘুড়িয়ে দিয়েছেন। সবুজ বিপ্লব জিয়াই করেছিলেন। তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশকে তিনিই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, উন্নয়ন, গণতন্ত্র এসবের সাথে জিয়া একাকার হয়ে গেছেন। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পক্ষান্তরে বাংলাদেশের সাথে ষড়যন্ত্র। খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতারের মাধ্যমে দেশকে গণতন্ত্রহীন করতে চায়। এটা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, পাবলিক ব্যাংকে লুট হচ্ছে। শেয়ার বাজার লুট হয়ে গেছে। গোটা দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। অথচ মিথ্যা মামলায় যেখানে এক টাকাও চুরি হয়নি খালেদা জিয়াকে বন্দী করা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে এ গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সরকার ২০১৪ সালের মত আবার ক্ষমতা দখল করতে চায়।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব গিয়াস উদ্দিন সেলিম, কল্যাণ পার্টির সাহিদুর রহমান, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ছাত্রদল নেতা নাজমুল হাসান, সাইদুর রহমান তামান্না, মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।



 

Show all comments
  • গনতন্ত্র ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১:১০ এএম says : 0
    ..............রা এসব মুল্যবান কথা বুঝার জ্ঞান রাখেন কিনা, জনগনের সন্দেহ আছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ