Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের মূল্যায়ন ‘ভারত বিএনপিকে নির্বাচনে দেখতে চায়’

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ভারতীয় শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়াান এক্সপ্রেস জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদন্ডাদেশ লাভের ঘটনাকে আইনের শাসনের দিক থেকে নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে মূল্যায়ন করেছে। মিডিয়া পরিষ্কার করেছে যে, খালেদা জিয়ার দন্ডাদেশ সত্ত্বেও দিল্লি আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ দেখতে আগ্রহী।
ভারতীয় মিডিয়া সাধারণভাবে বলেছে, মিসেস জিয়ার দÐাদেশকে সরকারিভাবে দিল্লি ‘পাথুরে নীরবতা’য় উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু তারা বেশি উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে, এই মামলার কারণে যদি খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়, আর তার পরিণতিতে বিএনপি যদি নির্বাচন বয়কট করে, তাহলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ একটি ‘কম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে’ রূপান্তরিত হতে পারে। বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়া এবং ইসলামী রেডিক্যালদের মনোভাব বিবেচনায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, আওয়ামী লীগের কোনো কোনো অংশের আপত্তি অগ্রাহ্য করে যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, সেই তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে। গত ৯ ফেব্রæয়াারি ‘একটি সংকীর্ণতম মাঠ’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলেছে, ‘দুর্নীতি মামলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতা বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর জেল হয়েছে। কিন্তু জনসাধারণের দৃষ্টিতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, খালেদা জিয়ার কারাবরণের ঘটনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপক রাজনৈতিক ক্ষমতা আরো বেশি সংহত করার পথ তৈরি করে দেবে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি নেত্রী ও তার দলকে যদি অংশগ্রহণ করতে না দেয়া হয়, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ অনুরূপ অবাধ ক্ষমতা আরো সুসংহত করতে পারে। অনেকের মতে, এমনকি তিনি বাংলাদেশকে একটি কম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে আগ্রহী হতে পারেন।
এক্সপ্রেস লিখেছে, অবশ্যই সেই দিনটি এখনো বেশ দূরে। কিন্তু বাস্তবতা এটাই রয়ে গেছে যে, ১৯৭৫ সালে আততায়ীর বুলেটে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যরা নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে একজন তেজদ্দীপ্ত সাহসী নারী হিসেবে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকারীর ভাবমূর্তি থেকে দ্রæত সুনাম ক্ষুন্নহয়েছে। একটি রক্তস্নাত যুদ্ধ থেকে জন্ম নেয়া দেশটি তখনো পর্যন্ত তারুণ্য উদ্দীপ্ত ছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশিরা ক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কারণ এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে, তিনি স্বজনপ্রীতি-দুর্নীতি এবং উপদলীয় কোন্দলকে মার্জনা করেছেন এবং তার ক্রমশ অজনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে এসব অবদান রেখেছে। সার্বিক বিচারে মিসেস জিয়ার বিরুদ্ধে তিনি নিজকে তার ভয়ানক ব্যক্তিগত বৈরিতার ঊর্ধ্বে উঠাতে সক্ষম হননি। তিনি বিশ্বাস করেন যে, জামায়াতে ইসলামী যে দলটির কিছু সদস্য স্বাধীনতা যুদ্ধকালে পাকিস্তানি শত্রæদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, তাদের সঙ্গে বিএনপির আঁতাত রয়েছে। এর কিছু অভিযোগের সত্যতা থাকতে পারে। শেখ হাসিনার ব্যাপক মানসিক আঘাত এবং প্রতিশোধের জন্য তার একটি ব্যক্তিগত অভিপ্রায় হয়তো বোধগম্য। কিন্তু একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, যার হাতে দেশটির নেতৃত্ব, তিনি যদি ঘৃণার বেদিতে দেশটির ভবিষ্যৎ সমর্পণ করেন, তাহলে তা শুধুই তাকে ¤øান করতে পারে এবং তার দেশকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
শেখ হাসিনা একটি গণতান্ত্রিক স্পেস বা স্থান সৃষ্টি করতে অসামর্থ্যরে পরিচয় দিচ্ছেন। যেখানে তার প্রতিদ্ব›িদ্ব রাজনৈতিক দলকে বাংলাদেশের জনগণ বিচার করতে পারবে। আর এর ফলে এমন একটি ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে, যাতে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ওই স্বাধীনতা যুদ্ধে খালেদা জিয়ার স্বামী তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান, যিনি ১৯৭১ সালের ২৭ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন। তিনিসহ অধিকাংশ বাংলাদেশি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। শেখ হাসিনা যদিও সন্ত্রাসী এবং ইসলামী উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তদুপরি তাকে দেখা হবে এমন একটি পরিস্থিতি তিনি সৃষ্টি করছেন, যা মিসেস জিয়াকে টেনে নামানোর এবং যাতে প্রকারান্তে একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রের বীজ বপন করা হবে। দুর্নীতির দায়ে বেগম জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত ভালোই করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আরো গভীরভাবে তলিয়ে দেখা দরকার যে, আজ তার দরকার একটি গণতান্ত্রিক এবং সহানুভূতিপ্রবণ জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে নেতৃত্ব দেয়া।
উল্লেখ্য যে, দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস গত ৮ ফেব্রæয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার কারাদÐের দিনেই পত্রিকাটির কনসাল্টিং এডিটর জ্যোতি মালহোত্রা লিখেছিলেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর জেল হওয়ার কারণে ঢাকা ঝড়ের মধ্যে পড়েছে। দিল্লিকে করেছে উদ্বিগ্ন। জিয়ার দÐাদেশ লাভে দিল্লিতে চলছে পাথুরে নীরবতা। দিল্লি বিশ্বাস করে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন আরো অধিকতর ক্ষমতার পরিধি বিস্তার করার ঝুঁকি নেবেন। কিন্তু তা সত্তে¡ও বাংলাদেশ শাসনে শেখ হাসিনাই ‘বেস্ট বেট’ (শ্রেষ্ঠ বাজি) রয়ে গেছেন। মালহোত্রা মনে করেন, খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদÐ বাংলাদেশকে একটি ঝড়-তুফানের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তার আশঙ্কা আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা থেকে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে।
দুই নেত্রীর মধ্যে তিক্ততার গভীরতার দিকে আলোকপাত করতে গিয়ে মালহোত্রা উল্লেখ করেছেন যে, দেশটির সবচেয়ে দুই ক্ষমতাধর নারীর মধ্যকার প্রতিদ্ব›িদ্বতার তীব্রতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রধান প্রতিদ্ব›িদ্বর উদ্দেশ্যে মন্তব্য করেন, ‘তিনি আজ কোথায়?’ মালহোত্রা অবশ্য স্পষ্ট করেছেন যে, মিসেস জিয়াকে যদি আগামী নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় এবং এর আগের নির্বাচনের মতো বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে, তাহলে শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ কোনো প্রকৃত বিরোধী দল ছাড়াই দেশ শাসন করবে। কিন্তু সেটা হবে দিল্লির অসস্তোষের কারণ। তার কথায়, সা¤প্রতিক মাসগুলোতে দিল্লিতে ঢাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী একটি স্টাবলিশমেন্ট, তারা ইসলামী উগ্রপন্থিদের তরফের চাপ এবং টানাপড়েনে মনোযোগী এবং একটি দ্রæত প্রভাবশালী হয়ে ওঠা চীন কর্তৃক ঢাকার প্রতি আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘটনাবলী সত্তে¡ও তারা এটা স্পষ্ট করেছে যে, ভারত শেখ হাসিনার ‘গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগের’ প্রতি সমর্থন দেবে। কিন্তু দিল্লি একইসঙ্গে শান্তভাবে শেখ হাসিনার প্রতি এই আহŸান রেখেছে যে, বিরোধী দল বিএনপি, যার সঙ্গে তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে দ্ব›েদ্ব লিপ্ত রয়েছেন; সেই দলটি যাতে দৃষ্টিগোচরভাবে আসন্ন নির্বাচনে ন্যুনতম অংশগ্রহণ করে, যাতে তা তিনি নিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে দিল্লির যুক্তি হলো একটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশটির গণতান্ত্রিক ভিন্নমত সিস্টেমের মধ্যে থেকে উত্তমরূপে মোকাবিলা করতে পারবে, বিরোধী দলকে বাইরে রেখে নয়।
মালহোত্রা আরো লিখেছেন, এটি একটি যুক্তি যে, যদিও শেখ হাসিনা তার প্রধানমন্ত্রিত্বের গত চার বছরে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, বেসামরিক স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর উপস্থিতি স¤প্রসারণ এবং বাংলাদেশে চীনাদের স্বাগত জানানোর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রভাবশালী হয়ে উঠলেও দিল্লির ওই পরামর্শের প্রতি সম্পূর্ণ বিরুদ্ধাচারণ করবে না। মালহোত্রার মতে, দিল্লি নির্দিষ্টভাবে ২০১৫ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফর থেকে দ্রæত চীনা প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি নজর রাখছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার সফরকালে ২৬ বিলিয়ন ডলারের একটি চেক কেটে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সেই থেকে বাংলাদেশিরা চীনের কাছ থেকে দুটি সাবমেরিন কিনেছেন এবং চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় চীনা কোম্পানিগুলোকে কিছু অবকাঠামো গড়ে তুলতে দিয়েছেন। দিল্লি এসব বিষয়কে একটি ‘পয়েন্ট’ হিসেবে নিয়েছে। সেকারণে ২০১৭ সালের অক্টোবরে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ মিসেস জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। যদিও আওয়ামী লীগের একটি অংশ বলেছিল, মিসেস জিয়ার সঙ্গে সুষমা স্বরাজের সাক্ষাৎ করা ঠিক হবে না।
মালহোত্রা তার উপসংহার টেনেছেন এই বলে যে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় মিসেস জিয়ার দÐাদেশ এবং যে মামলায় ২১ মিলিয়ন টাকা তছরুপের দায়ে তার ছেলে তারেক রহমানকে দশ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়, সেসব ঘটনাকে শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা আরো সংহত করার পথ হিসেবে নেবেন। তিনি এবং তার আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বাস করেন যে, দুর্নীতি দমন আদালত থেকে মা ও তার ছেলে উপযুক্ত শাস্তিই পেয়েছে। আদালত ব্যাখ্যা করেছে যে, বিদেশি অনুদান লাভ করার ঠিক আগে কেন ওই ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছিল।



 

Show all comments
  • রিপন ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:৪৬ এএম says : 0
    তাদের চাওয়া কী সব হবে ?
    Total Reply(0) Reply
  • লাভলু ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:৪৭ এএম says : 0
    অতিরিক্ত মাতুব্বারি ভালো নয়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ