Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আমেরিকা আফগানিস্তানের যুদ্ধে কখনো জয়ী হতে পারবে না

| প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দি ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট : ২০১৭ সালের শেষদিকে বিবিসি সাংবাদিকদের এক বিশদ অনুসন্ধান রিপোর্টে বলা হয়েছে যে তালিবান আফগানিস্তানের জেলাগুলোর মধ্যে চার শতাংশ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে। আর দেশের বাকি অংশের ৬৬ শতাংশ এলাকায় তাদের খোলাখুলি শারীরিক উপস্থিতি রয়েছে। তারা দেখতে পেয়েছেন যে আফগানিস্তানের প্রায় অর্ধেক লোক সে এলাকাগুলোতে বাস করে যেগুলো হয় তালিবান নিয়ন্ত্রিত অথবা তালিবানরা সেখানে সশরীরে উপস্থিত ও নিয়মিত হামলা চালায়।
যারা বিশ^াস করেন যে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান পরিস্থিতিকে পাল্টে দিয়েছে বা দেবে তাদের জন্য এ অনুস্ন্ধান রিপোর্ট অনুক‚ল নয়। সেখানে বর্তমানে ১৪ হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণকালে এ সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৫শ’। সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্টের কাছে আরো এক হাজার সৈন্য প্রেরণের সুপারিশ করেছে। ২০১১ সালে আফগানিস্তানে প্রায় এক লাখ মার্কিন সৈন্য মোতায়েন ছিল। তারা তালিবানদের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস ও আফগান সরকারের কতর্ৃৃত¦ সম্প্রসারিত করলেও তা স্থায়ী হয়নি। একদা ৭ গুণ বেশি সৈন্য যে কাজটি সম্পন্ন করেছিল এখন এ পরিমাণ সৈন্য সে কাজটি কীভাবে করবে বলা কঠিন। বহু বিশ্লেষকই মনে করেন, আমেরিকা আফগানিস্তানের যুদ্ধে কখনো জয়ী হতে পারবে না।
যুক্তরাষ্ট্র ১৬ বছর ধরে আফগানিস্তানে যুদ্ধ চালাচ্ছে। এতে ইতোমধ্যে ১ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। আটলান্টিকের সিনিয়র এডিটর কৃষ্ণদেব ক্যালামুর গত মাসে বলেন, মার্কিন হামলা শুরু হওয়ার পর তালিবান এখন সবচেয়ে বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। অন্যদিকে আফগানিস্তানে জাতিসংঘ মাদক ও অপরাধ বিষয়ক অফিস নভেম্বরে তাদের রিপোর্টে বলেছে যে আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন ও পপি চাষের এলাকা ২০১৭ সালে রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।
এ বাস্তবতার কারণে সেখানে আমেরিকার অব্যাহত সংশ্লিষ্টতার যৌক্তিকতা বিষয়ে এক ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েেেছ। কলম্বিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট স্কুল অব জার্নালিজমের ডিন ও দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন সন্ত্রাস দমন চেষ্টা বিষয়ে এক নতুন বইয়ের লেখক স্টিভ কোল বলেন যে নীতি নির্ধারকদের এখনো কিছু জরুরি প্রশ্নের জবাব দেয়া প্রয়োজন। যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে কেন? সেখানে মার্কিন সৈন্যদের প্রাণহানির পিছনে যুক্তি কি? কিভাবে এ যুদ্ধ শেষ হবে? পরিবর্তে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে অবস্থানের পক্ষে নানাপ্রকার যুক্তি তৈরি করেছে যার অর্থ সময়ের সাথে তাদের শক্তি শুধু বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত¦পূর্ণ জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে দীর্ঘ সময় তারা সেখানে থাকবে।
আফগানিস্তানে মার্কিন কমান্ডার যদি গত নভেম্বরে বলে থাকেন যে সেখানে যুদ্ধ এখনো অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র বলতে অপারগ বা বলতে চায় না যে কবে তারা আফগানিস্তান সৈন্য অপসারণ শুরু করবে। কিছু পর্যবেক্ষক মনে করেন যে যুক্তরাষ্ট্র যদি সৈন্য প্রত্যাহারের সময়সূচি ঘোষণা করলে তা তালিবানকে শক্তিশালী করবে। মার্কিন সৈন্যরা ১৬ বছর ধরে যুদ্ধ করলেও তালিবান হতাশাজনক রূপে শক্তিশালী ও তৎপর রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র যতদিন আফগানিস্তানে থাকবে ততদিন তালিবান যোদ্ধা সংগ্রহ করে যাবে।
সম্প্রতি কাবুলে এক ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণে ৯৫ জন নিহত ও ১৫৮ জন আহত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তালিবান নেতাদের সাথে আলোচনা বন্ধ করে দিয়েছেন। তার মনোভাব বোঝা যায়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ভারপ্রাপ্ত মার্কিন বিশেষ দূত লরেল মিলার বলেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিনিদের একমাত্র বাস্তব প্রত্যাহারের কৌশল হচ্ছে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমেরিকা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ