Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সুখবর বটে, তবে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কারণ নেই

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আবুল কাসেম হায়দার:
সুখবর হলো, চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা ১৫টি দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৩৪টি দেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সেখানে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বা এর বেশি প্রবৃদ্ধি হবে ১৫টি দেশের। এসব দেশের একটি বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশে। সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে ভারতে। চলতি অর্থবছরের পরের দুই বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। প্রতিবারই বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বৈশ্বিক মানদন্ড বাংলাদেশের ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি কম বলা যায় না। তবে প্রশ্ন হলো, চলতি অর্থ বছরে সরকার যে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, সে জন্য কী ধরনের সংস্কার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা আছে। বড় প্রকল্প শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাহলে এত প্রবৃদ্ধি কীভাবে হবে? এ ছাড়া নির্বাচনের বছরে সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণও কঠিন।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের সমান কিংবা বেশি প্রবৃদ্ধি হতে পারে এমন দেশগুরো হলো চীন, ভারত, ভুটান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, আইভরিকোস্ট, জিবুতি, ইথিওপিয়া, ঘানা, লাওস, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সেনেগাল ও তানজানিয়া। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর পেছনে মূল কারণ হলো উৎপাদন ও সেবা খাত থেকে অনেক বেশি মূল্য সংযোজন হয়েছে। এছাড়া ব্যাপক অভ্যন্তরীণ চাহিদাও উচ্চ প্রবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এ ছাড়া সরকারি বিনিয়োগও বেশ বেড়েছে। বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, বাংলাদেশের জন্য চলতি অর্থ বছরের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো এ বছর নির্বাচনের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে পারে। আস্থার অভাবে বিনিয়োগ আকৃষ্ট হচ্ছে না। আবার ব্যাংক খাতে খেলাপী ঋণ বেড়ে যাওয়া বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে ভারতে। দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকবে ভুটান। ভুটানের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া পাকিস্তান সাড়ে ৫ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ৫ শতাংশ, মালদ্বীপ ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, নেপাল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ ও আফগানিস্তান ৩ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে বিশ্বব্যাংক বলছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিনিয়োগে সঙ্কট এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দুর্বলতা আছে।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিদ্ব›দ্বী দেশগুলোও চলতি বছরে ভালো করবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রতিদ্ব›দ্বী দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম সাড়ে ৬ শতাংশ, মিয়ানমার ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, লাওস ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, কম্বোডিয়া ৬ দশমিক ৯ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৫ দশমিক ৩ শতাংশ ও মালয়েশিয়া ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে যাবে। চলতি বছরে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে, যা বাংলাদেশের সমান। যেখানে আগামী দুই বছর বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি বাড়বে, সেখানে চীনের কমবে। ২০১৯ সালে চীনে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ ও ২০২০ সালে ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।
চলতি বছরে সার্বিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে। সারা বিশ্বের গড় প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যিাংকের অঞ্চলভিত্তিক হিসাবে, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি ৬ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। এরপরের স্থানে পূর্ব ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।
প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে সরকারকে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন তাই বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১৭ সালে ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে বড় ধরনের বিপর্যয় লক্ষ করা যাচ্ছে। কেউ কেউ ২০১৭ সালকে ব্যাংকিং খাতের কেলেঙ্কারীর বছর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের সংস্কার, সংশোধন ও পরিবর্তন প্রয়োজন রয়েছে। ব্যাংকিং আইনের পরিবর্তন প্রয়োজন। ব্যাংকিং খাতকে স্বচ্ছতার মধ্যে আনতে হলে আইনের আমূল পরিবর্তন করা প্রয়োজন। বিশেষ করে একই পরিবারের চার জন পরিচালক হওয়ার বিধান ও পরপর ৯ বছর পরিচালক থাকার নিয়ম বাতিল করা প্রয়োজন।
নতুন কোন ব্যাংক না দেয়ার নিয়মে সরকারকে আসতে হবে। নতুন নতুন ব্যাংক দিয়ে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টির কোন প্রয়োজন নেই। এমনিতে বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ছাড়া প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করা যাবে না। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থানও তৈরি হবে না। তা না হলে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে না। দরিদ্র মানুষের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তবে আরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য অন্যান্য সূচকের প্রতি বেশি মনোযোগী হতে হবে। এই ক্ষেত্রে সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা বেশি প্রয়োজন। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করতে হবে।
লেখক: সাবেক সহসভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমএ, বিজেএমইএ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন