Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাঙ্গুনিয়ায় বেপরোয়া বালু উত্তোলনে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা
রাঙ্গুনিয়ায় অর্ধশতাধিক স্পট থেকে বেপরোয়া বালু পাচার চলছে। নদী, খাল ও ছড়ার তলদেশ থেকে যান্ত্রিক ইঞ্জিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছে শতশত শ্রমিক। দৈনিক কয়েক হাজার ঘনফুট বালু বিভিন্ন যানবাহনে পরিবহন করা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় নদী ও খালের দু’পাশে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ও খাল ভাঙন রোধে রাঙ্গুনিয়ায় কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন বাস্তবায়িত হলেও বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ফলে সরকারের মহতি উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। কোদালা খাল, শিলক খাল, ইছামতি নদী, নিশ্চিন্তাপুরের সিলফলিয়া খাল, চন্দ্রঘোনা থানার ডংখালসহ বিভিন্ন ছড়া ও রাঙ্গুনিয়া অংশে কর্ণফুলী নদী এলাকায় কমপক্ষে অর্ধশতাধিক স্পটে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাহাড়সম বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে।
ইছামতি গ্রামের সবুজ বড়–য়া জানান, বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারনে ভারসাম্য হারাচ্ছে নদীর পাড়। ফলে ক্রমে ভেঙে চলেছে নদী, খাল পাড়ের বসতি এবং আবাদি জমি। পারুয়া ডিসি সড়ক, পদুয়া কালিন্দিরানী সড়ক, রাজানগর বগাবিল সড়ক, হোছনাবাদ ফুইট্যোগোদা সড়কসহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট বিপন্ন হতে চলেছে। রানীরহাট গ্রামের মোহাম্মদ রমিজ জানান, ইছামতির বালি উত্তোলনের প্রভাবে রানীরহাট কেয়াংঘাটের নিকটে দীর্ঘ এক কিলো বেশি অংশে ধসে পড়েছে। যা সংস্কারের মাধ্যমে বর্তমানে কোন প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। পারুয়া, রাজানগর, রাজাভুবন, খন্ডলিয়া পাড়া, গোয়াজ পাড়া, রাঙ্গুনিয়া পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ইছামতি নদীর ভাঙনের প্রভাব বিস্তৃত ঘটছে। অব্যাহত বালু উত্তোলনে ভাঙনের ব্যাপকতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এলাকার পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে।
কাউখালী ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ইছামতি কর্ণফুলী নদীতে মিলিত হয়। রাঙ্গুনিয়ার কৃষি, বানিজ্য এবং পরিবেশে অবদান রাখে এই নদী। প্রতিবছর বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের তোড়ে নেমে আসা বালুতে ইছামতি নদীর তলদেশ ভরাট হয়। এতে তলদেশের স্বাভাবিক নাব্যতায় পাড়ের ভারসাম্য রক্ষা হয়। স্রোতের প্রবাহ স্বাভাবিকভাবে গড়ায়। কিন্তু অবৈধ এবং অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর অস্বাভাবিক নাব্যতা বেড়ে তীরের ভারসাম্য হারায়। বিভিন্নস্থানে প্রবাহের পবিবর্তন ঘটে। সামান্য বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা বেড়ে যায়। ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে নদী।
হোছনাবাদ ইউনিয়নের নিশ্চিন্তাপুরের সিলফলিয়া খাল, ইছামতি নদীর রাজানগরের বগাবিলি এলাকার বেঙছড়ি, গোদারপাড়, আমতলী, ঠান্ডাছড়ি, কেয়াংঘাট, ফুলবাগিচা, গাবতলা, দক্ষিণ রাজানগর, দেয়ানবাজার, মধ্য পারুয়া, রাজাভুবন, উত্তর পারুয়া, কুমারপাড়া, শিলক-রাজারহাট কালিন্দিরানী সড়ক ও দশমাইল-বান্দরবান সড়কের একাধিক স্পটে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজার মেশিনে দীর্ঘ পাইপ টেনে তীরের জমিতে বালির পাহাড় গড়ে উঠেছে। বেপরোয়া বালু উত্তোলনের প্রভাবে শত শত এলাকাবাসী ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। পৌরসভার উত্তর ঘাটচেক সোনাইছড়ি, জলদাশ পাড়া, ইছাখালীসহ দশ গ্রামের দু’শতাধিক পরিবার এবং সোনাইছড়ি বৌদ্ধ বিহার ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে। বালু উত্তোলনে ক্ষতিকর প্রভাবে গত বর্ষায় ভারি বর্ষণের সময় রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় ধসে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বালু উত্তোলন বন্ধ করা না গেলে আবারো রাঙ্গুনিয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে পরিবেশবিদরা।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একাধিক অভিযান পরিচালনা করে ড্রেজার মেশিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে। রাঙ্গুনিয়ায় বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাপ্তাই নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন কুমার বড়–য়া বলেন, নদী ও খালপাড় ভাঙন রোধে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত সিসি ব্লক, আরসিসি ব্লক হুমকির মুখে পড়বে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আশঙ্কা

১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ