Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মালিতে আইইডি বিস্ফোরণে চার বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত

গুরুতর আহত ৪ জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : মালিতে আইইডি বিস্ফোরণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োজিত চার বাংলাদেশি সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। গুরুত্বর আহত হয়েছেন আরও চার বাংলাদেশি। গত ২৮ ফের্রুয়ারী আফ্রিকার মালিতে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিট) দোয়েঞ্জা নামক স্থানে সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা শক্তিশালী ই¤েপ্রাভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইজ (আইইডি) এর ভয়াবহ বিস্ফোরণে চারজন নিহত এবং আরো চারজন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন ঃ ওয়ারেন্ট অফিসার আবুল কালাম, পিরোজপুর (৩৭ এডি রেজিঃ আর্টিঃ), ল্যান্স কর্পোরাল আকতার, ময়মনসিংহ (৯ ফিল্ড রেজিঃ আর্টিঃ), সৈনিক রায়হান, পাবনা (৩২ ইস্ট বেংগল) সৈনিক (পাঁচক) জামাল, চাপাইনবাবগঞ্জ (৩২ ইস্ট বেংগল)। আহতরা হলেন ঃ কর্পোরাল রাসেল, নঁওগা (৩২ ইস্ট বেংগল), সৈনিক আকরাম, রাজবাড়ী (৩২ ইস্ট বেংগল), সৈনিক নিউটন, যশোর (১৭ বীর), সৈনিক রাশেদ, কুড়িগ্রাম (৩২ ইস্ট বেংগল)। আইএসপিআরের পক্ষ থেকে এসব জানানো হয়েছে।
আইএসপিআরের পরিচালক লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নিহত ও আহতদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। নিহতদের লাশ বাংলাদেশে আসতে আরো ৪/৫দিন সময় লেগে যাবে। আহতদের উন্নত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আইএসপিআরের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয় যে, ব্যানব্যাট-৪ এর একটি লজিস্টিক কনভয় এস্কর্ট (নিরাপত্তা দল) গাঁও হতে মপতি যাওয়ার পথে বোনি- দোয়েঞ্জা সড়কে দোয়েঞ্জা হতে ৩৫ কিঃমিঃ পূর্বে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। ১৩টি এপিসি ও ২টি এমপিভি এর সমন¡য়ে কনভয় এস্কর্ট এর ৪ নম্বর এপিসিটি দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছালে এই বিস্ফোরণ ঘটে। দ্রæততার সাথে হেলিকপ্টারযোগে আহতদেরকে উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দুর্ঘটনাস্থল হতে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মালিতে নিয়োজিত অন্যান্য বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীগণ নিরাপদ আছেন। আফ্রিকান দেশটিতে দায়িত্বরত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন জানিয়েছে, একদিন আগে একই ধরনের ঘটনায় মালির ছয় সেনা নিহত হয়। ইসলামি জঙ্গিদের কারণে সহিংসতা বাড়ছে। উল্লেখ্য, এর আগে গত সেপ্টেম্বরে দেশটিতে বিদ্রোহীদের হামলায় তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত এবং চারজন আহত হন। এহেন ভয়াবহ আইইডি আক্রমনসহ নানাবিধ সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য মালিতে চলমান শান্তিরক্ষা মিশনকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুকিপূর্ন শান্তিরক্ষা মিশন অভিহিত করা হয়ে থাকে। কিন্তু বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ও দেশের জনগনের ভাবমূর্তিকে সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক শান্তিরক্ষীরা নিরলস পরিশ্রম এবং ত্যাগ শিকার করে যাচ্ছেন।
রায়হানের পাবনার বাড়িতে চলছে শোক-কান্না
পাবনা জেলা সংবাদদাতা : আফ্রিকার মালিতে বিষ্ফোরণে নিহত সেনা সদস্য মোহাম্মদ রায়হানের পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরের সোমাসনারী গ্রামের বাড়িতে এখন শোক কান্নার রোল। স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। আফ্রিকার মালির ডোয়েনঞ্জারীতে এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বিষ্ফোরণে বাংলাদেশের ৪ জন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিয়োজিত সদস্য নিহত হন। তাদের মধ্যে পাবনার সন্তান রায়হান নিহত হন। এই খবর পাওয়ার পর তাঁর গ্রামের বাড়িতে কান্না আর আহাজারি শুরু হয়। প্রতিবেশীরা সমবেদনা জানাতে বাড়িতে ভিড় করেছেন। নিহত রায়হান দুই কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর বড় কন্যার বয়স ৮ বছর এবং ছোট কন্যার ২ বছর বয়সী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে নিহত রায়হান বড়।
সূত্র মতে, শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিয়োজিত সদস্যরা মালির মোপটি প্রদেশের বোনি ও ডোয়েঞ্জা শহরের মধ্যবর্তী স্থানে সড়কে টহল দিচ্ছিলেন। বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে আকস্মিকভাবে আইইডি বিষ্ফোরিত হলে হতাহতের ঘটনা ঘটে। পাবনার মোহাম্মাদ রায়হান, পিরোজপুর জেলার আবুল কালাম (ওয়ারেন্ট অফিসার), চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার জামাল সৈনিক) এবং ময়মনসিংহ জেলার আকতার (ল্যান্স করপোরাল) নিহত হন।
নিহত জামালের বাড়িতে আহাজারি
শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি’র দোয়েঞ্জা নামক স্থানে ভয়াবহ বিস্ফোরণে চার বাংলাদেশি সৈনিকের মধ্যে জামাল হোসেনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের ধূমিহায়াতপুর-ঘাইসাপাড়া এলাকায়। নিহত জামালের পিতার নাম মো. মেসের আলী। নিহত জামাল হোসেনের চাচা রবিউল ইসলাম জানান, স্থানীয় সময় বুধবার দুপুর আনুমানিক আড়াইটায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টা) এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারা রাত সাড়ে ১১টার দিকে জামাল হোসেন নিহত হওয়ার খবর জানতে পারেন। একজন সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জামাল হোসেন নিহত হওয়ার বিষয়টি মোবাইল ফোনে পরিবারকে জানান। এরপর পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে পিতা মেসের আলী। মা ফেরদৌসি বেগম ছেলের ছবি বুকে ধরে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। আর স্ত্রী শিল্পী বেগম একমাত্র ৫ বছরের ছেলে শিমুলকে নিয়ে বিছানায় কাতর হয়ে পড়ে আছে। শুধু পরিবার নয়, জামালের বাড়ির আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এ শোক ছায়া। সকাল থেকে শত শত গ্রামবাসী তাদের বাড়িতে এসে শোকার্ত পরিবারটিকে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। মেসের আলীর তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে নিহত জামাল হোসেন ছিল সবার বড়। জামাল হোসেনের মা ফেরদৌসি বেগম জানান, দ্রæত ছেলের লাশ ফিরিয়ে দেয়া হোক পরিবারের কাছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শান্তিরক্ষী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ