Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিরাপত্তাহীন ফ্লাইওভার

বেপরোয়া ছিনতাইকারীচক্র : মহাখালী বাদে সবগুলো ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা মাদকাসক্তদের দখলে : উদাসীন পুলিশ : সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রাতের ফ্লাইওভার এখন অনেকের কাছেই আতঙ্কের নাম। দিনে ফ্লাইওভারগুলোর নিচে মাদকাসক্ত ও ছিনতাইকারীদের আড্ডা। গভীর রাতে ফ্লাইওভারের উপরে অবাধে বিচরণ। সুযোগ পেলেই তারা লুটে নেয় টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। ছিনতাইয়ের পর গাড়ি থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতেও তারা দ্বিধা করে না। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে মগবাজার ফ্লাইওভারে চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার চালক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে তাদের কাছে থাকা সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
এর আগেও ঘটেছে অনেক ঘটনা। এর মধ্যে মগবাজার ফ্লাইওভারে আরোহীকে জিম্মি করে মোটরসাইকেল ছিনতাই করে। গভীর রাতে কুড়িল ফ্লাইওভারে ছিনতাইকারীরা গাড়ি থামাতে ব্যর্থ হয়ে পেছন থেকে ককটেল পর্যন্ত ছুঁড়ে মারে। এসব ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে ন্যূনতম নিরাপত্তাসেবাও পাচ্ছে না। অজুহাত হিসেবে পুলিশ বলছে, তাদের লোকবল কম।
ভুক্তভোগিদের মতে, ফ্লাইওভারের উপরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করলে অপরাধ প্রবণতা অনেকটাই কমে যেতো। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বসেই ফ্লাইওভারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারতো। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ফ্লাইওভার নিরাপত্তাহীন- এটা ঢালাওভাবে বলা যাবে না। মাঝেমধ্যে ফ্লাইওভারের উপরে ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগ পেলে দ্রæত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। ফ্লাইওভারগুলোতে রাতে টহল পুলিশের পাশাপাশি থানার পুলিশও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হবে বলে তিনি জানান। ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, রাতে ফ্লাইওভারের দিকে তাদের (ট্রাফিক বিভাগ) নজরদারি কম থাকে। তিনি বলেন, সিসি ক্যামেরা স্থাপন করলে ফ্লাইওভারের উপরের অপরাধ অনেকটাই কমে যাবে। ফ্লাইওভারগুলো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনার চিন্তাভাবনা চলছে জানিয়ে ডিএমপির আরেক কর্মকর্তা বলেন, শিগগিরি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
রাজধানীর গুলিস্তান, মগবাজার, মহাখালী, খিলগাঁও, বনানী ও তেজগাঁও এলাকায় মোট ৬টি ফ্লাইওভার রয়েছে। মহাখালী ফ্লাইওভার বাদে প্রায় সবকটি ফ্লাইওভারের নিচে দিনের আলোতেই চলে মাদক সেবন ও বিক্রি এবং সন্ধ্যার পর পর শুরু হয় ছিনতাইকারীদের বিচরণ। তারা গাড়ি পার্কিং করে সাধারণ মানুষের মতো আড্ডা দেয় এবং ছিনতাইয়ের সুযোগের জন্য অপেক্ষা করে। রাতের বেশির ভাগ সময় ফ্লাইওভারগুলো থাকে অন্ধকারে। এই সুযোগে ছিনতাইকারীরা বিভিন্ন কৌশলে সাধারণ যাত্রীদেরকে জিম্মি করে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। গত বছর মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপর থেকে ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র সাইফুল ইসলামকে (২৫) গুলি করে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এর কিছুদিন আগে মহাখালী ফ্লাইওভার থেকেই অস্ত্রের মুখে বিমানবন্দরগামী একটি প্রাইভেট কার ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন ফ্লাইওভারে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও নীরব কর্তৃপক্ষ। ভুক্তভোগীদের অনেকেই উল্টো হয়রানির ভয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি কিংবা মামলা করতে যান না। তাদের মতে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উদাসীনতার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ ফ্লাইওভারের নিচে দিনে-দুপুরেই চলে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক বেচাকেনা। একই স্থানে নিরাপদে মাদক সেবন করে অপরাধীরা সময় সুযোগ বুঝে অংশ নেয় ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। আবার অনেক অপরাধী সাধারণ দর্শনার্থীর বেশে ফ্লাইওভারের উপরে উঠে শিকারের আশায় অপেক্ষা করতে থাকে। তার সিগন্যাল পাওয়ার পরই অপর সহযোগীরা মোটরসাইকেলে করে বাজপাখির মতো উড়ন্ত ছিনতাইয়ে অংশ নেয়। মুহূর্তের মধ্যেই মোটরসাইকেল কিংবা প্রাইভেট কার ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়। অন্যদিকে, বিভিন্ন ছিনতাইকারী চক্র তাদের কাজের সুবিধার জন্য বিরূপ আবহাওয়াকে বেছে নেয়। ঝড়, বৃষ্টি কিংবা কুয়াশাচ্ছন্ন রাতে সুযোগ খোঁজে তারা। মাঝে মধ্যেই তারা বিদ্যুৎ বিভাগের দুর্নীতিবাজ মেরামতকারীদের ম্যানেজ করে ফ্লাইওভারের ল্যাম্পপোস্ট দীর্ঘদিন ধরে অচল করে রাখে। ভুক্তভোগিরা জানান, অন্য এলাকা থেকে ফ্লাইওভারে নজরদারি কম থাকায় ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের জন্য ইতোমধ্যেই নিরাপদ জোন হিসেবে বেছে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত বছর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপর এক তরুণীর বস্তাবন্দী লাশ ফেলে রেখে গিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, ব্যবসায়িক কাজের জন্য মাঝে মধ্যেই আমাকে ঢাকার বাহিরে যেতে হয়। তবে ছিনতাইকারীদের ভয়ে কখনো সন্ধ্যার পর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে যাওয়ার সাহস পাই না। তিনি বলেন, ছিনতাইকারীরা সবকিছু নেওয়ার পরও শারীরিকভাবে আঘাত করে যায়। তবে সব কিছু জানার পরও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সত্যিই বিষয়টি হতাশাজনক।
এদিকে, ফ্লাইওভারগুলোর নিচের জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় মাদকাসক্তদের আড্ডাসহ অপরাধ কর্মকান্ড বেড়েছে। গত বছর উদ্বোধনের কয়েক দিনের মধ্যেই মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচে চায়ের দোকান, অবৈধ পার্কিং, ফলের দোকান দিয়ে দখল করা হয়েছে ফাঁকা জায়গা। আর রাত হলেই ফ্লাইওভারের নিচে বসছে মাদকের আড্ডা। গুলিস্তানে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ঘোড়ার আস্তাবল, বাসস্ট্যান্ড, জুতার মার্কেট, মুদি দোকান আর হকারদের আবাসস্থল বহুদিন ধরেই। কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচের অংশও চলে গেছে অবৈধ দখলকারীদের হাতে। শুধু মহাখালী এবং বনানী ফ্লাইওভার নিচের অংশ এখনো ফাঁকা আছে। ফ্লাইওভারগুলোকে দখলদারমুক্ত করা না গেলে নিরাপত্তা জোরদার করা যাবে না বলে অভিজ্ঞজনদের অভিমত।



 

Show all comments
  • তামিম ১১ মার্চ, ২০১৮, ৪:৫৬ এএম says : 0
    আমার মতে এর জন্য প্রশাসন দায়ি।
    Total Reply(1) Reply
    • রুবেল ১১ মার্চ, ২০১৮, ৪:৫৮ এএম says : 4
      একদম ঠিক কথা বলেছেন। তারা চাইলে সাতদিনের মধ্যে ঠিক করে ফেলতে পারেন।

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফ্লাইওভার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ