Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপির জয় সহজ নাও হতে পারে

ইউপি ও বিহারের উপনির্বাচনের ফল

কোয়ার্টজ | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

গুরুত¦পূর্ণ ছিল ইউপি ও বিহারের উপ নির্বাচনগুলো। তাতে পরাজয় ঘটেছে বিজেপির। আর এ পরাজয় ভারতে বড় রকমের রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের পথ প্রশস্ত করেছে। সে সাথে তা প্রভাব ফেলতে পারে প্রধানমন্ত্রী মোদির অর্থনৈতিক কর্মসূচির ক্ষেত্রেও। ভারতে আগাম নির্বাচনের আগে তার হাতে আর এক বছরের সামান্য বেশি কিছু সময় আছে।
১৪ মার্চ উত্তর প্রদেশ ও বিহারে ৩টি লোকসভা আসন ও দু’টি বিধানসভা আসনের উপ নির্বাচনের ফল প্রকাশ করা হয়। এগুলোর মধ্যে মোদির বিজেপি শুধু একটিতে জিতেছে।
বিজেপির এ পরাজয় দেশব্যাপী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। আগামী কয়েক মাসে কর্নাটক, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এগুলোর ফলাফল ২০১৯ সালে মোদির প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন সফল করতে বা ভেঙ্গে দিতে পারে।
ভূমিকম্প
ভারতীয় রাজনীতিতে একটি কথা চালু আছে- নয়াদিল্লীতে যাবার পথ গেছে লক্ষৌ দিয়ে। লক্ষৌভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের (ইউপি) রাজধানী। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোদি এ রাজ্যের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৭৩টি পেয়ে জয়ী হন। ২০১৭ সালে বিজেপি রাজ্য বিধান সভা নির্বাচনে ভ‚মিধস বিজয় লাভ করে। এর ফলে যোগী আদিত্যনাথ রাজ্যের মুখ্যমস্ত্রী হন।
আদিত্যনাথের মধুচন্দ্রিমার দিন শেষ হয়েছে। ১৪ মার্চ বিজেপি গোরখপুর লোকসভা আসনে উপনির্বাচনে পরাজয়ের ধাক্কা খেয়েছে। একাধিক দশক যাবত বিজেপি এ আসনে প্রতিনিধিত¦ করছিল। আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। বিজেপি এ প্রদেশে আরেকটি লোকসভা আসনেও হেরেছে। সেটি হচ্ছে ফুলপুর। উপ মুখ্যমন্ত্রী কেশব মৌর্যের ছেড়ে যাওয়া আসন এটি।
ইউপি ও পার্শ্ববর্তী বিহারের অররিয়া আসনে পরাজয়ে লোকসভায় বিজেপির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর কোনো প্রভাব পড়বে না। লোকসভার ৫৪৩টি আসনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের ২৯৩টি (তেলেগু দেসম ও শিবসেনা ছাড়া) আসন রয়েছে। শুধু বিজেপিরই রয়েছে ২৭৩ আসনের নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে অতি সাম্প্রতিক বিরাট বিজয় সত্তে¦ও এ পরাজয় রাজনৈতিক রাজধানীতে শূন্যতার দীর্ঘশ^াস সৃষ্টি করেছে।
এবং এটা আরো লোকরঞ্জনবাদ বা অনুসিদ্ধান্ত , অল্প কিছু অপ্রীতিকর সংস্কার বোঝাতে পারে। এ ছাড়া লোকসভার আসন সংখ্যা অন্যদের আনন্দ বিনাশক হতে পারে।
অর্থনীতির মন্থর গতি
দীর্ঘদিনের স্থগিত শ্রম সংস্কার বিল ৬ এপ্রিলের আগে লোকসভায় পেশ করা হবে। যদিও পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বিজেপির অনায়াস সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে তবুও তারা ফ্লোর ব্যবস্থাপনা ও ক্ষুদ্র দলগুলোর পেশি প্রদর্শনীর সম্মুখীন হতে পারে।
মোদি সরকারের প্রথমার্ধ মেয়াদে ক্রমবর্ধমান সংস্কারের ঘটনা ঘটেছে। অর্থনৈতিক সংস্কারের লক্স্যে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর নোট বাতিলের কঠোর পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়। বহু প্রচারিত পণ্য ও সেবা কর (জিএসটি) এখনো অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হয়ে ওঠেনি। আসলে জিএসটি স্বল্প মেয়াদে রাজ্য সরকারগুলোর গুরুত¦পূর্ণ রাজস্বকে কেড়ে নিয়েছে। এদিকে অর্থ কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ তহবিল আরো সংকুচিত জটিলতা সৃষ্টি করেছে।
নিজ রাজ্য গুজরাটের নির্বাচনে নিষ্প্রভ তৎপরতা প্রদর্শনের পর মোদি গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বাজেটে সুবিধা প্রদানের চেষ্টা করেন। কিন্ত গ্রামীণ এলাকার জনগণ এখনো বঞ্চিত ও ক্ষুব্ধ। দেশের ৪০ শতাংশ জনগণকে আওতায় এনে তার সরকারের উচ্চাকাক্সক্ষী পরিকল্পনা শুরু হতে এক বছর লাগবে এবং সর্বশেষ ব্যক্তির কাছে পৌঁছতে যাবে ২০ বছর।
মোটকথা, দেশের কাঠামোগত সমস্যার বাক্সের বাইরের সমাধান চোখে পড়ছে না। এদিকে কু ঋণের কারণে চাপের কারণে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সমস্যা এবং এখন ব্যাপক জালিয়াতির শিকার। প্রক্রিয়াধীন পুনঃমূলধন প্রদান প্রক্রিয়া এ ক্ষেত্রে ব্যাপক সহায়ক হবে। মোদির অবকাঠামো খাত উন্নয়ন প্রচেষ্টা এখনো গতি লাভ করেনি।
উপরোক্ত সব কারণে বিরোধী দলের রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস সরকারের দুঃশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রশ্ন
বিজেপি সাফল্যের সাথে উত্তরপূর্ব ভারতের মত অঞ্চলগুলোতে হানা দিয়েছে যেমন দিয়েছিল ২০১৪-তে উত্তর প্রদেশে। তবে বিরোধী দলগুলো যদি এ সব নবলব্ধ স্থানগুলোতে ‘ইউপি মডেলে’ প্রতিদ্বিদ্বতা করে তাহলে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল সেখানে ব্যাপক ঘাটতির সম্মুখীন হবে। ইউপি মডেল হচ্ছেঃ রাজ্যের দু’টি শীর্ষ স্থানীয় দল ও সাবেক শক্তিশালী প্রতিদ্ব›দ্বী সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বহুজন সমাজবাদী পার্টি (বিএসপি) সম্মিলিত হয়েছে এটা নিশ্চিত করতে যে বিরোধী দলের ভোট যেন ভাগ না হয়।
বিজেপির জন্য এখন পরিস্থিতি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে যেহেতু তার প্রধান মিত্ররাও দল ছেড়ে সরে পড়ছে। টিডিপি অননুক‚ল আচরণের জন্য মোদির মন্ত্রীসভা থেকে তাদের মন্ত্রীদের অপসারণ করেছে। মহারাষ্ট্র ভিত্তিক শিব সেনা বিজেপির সাথে তাদের দীর্ঘ দিনের মৈত্রী ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি বিহারে এনডিএ-র মিত্র জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) অররিয়া ও জাহানাবাদের লোকসভা আসনে জাতীয় দলের পরাজয় গুরুতে¦র সাথে বিবেচনা করছে।
উপ নির্বাচনের ফল ইঙ্গিত দেয় যে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফল পূর্বজ্ঞাত নয়। যাহোক, নির্বাচন সংখ্যার ব্যাপার নয়। সুতরাং খেলা উন্মুক্ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিজেপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ