Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

১৭ বাংলাদেশির লাশ শনাক্ত

নেপালের পার্লামেন্টে শোকপ্রস্তাব অনুমোদন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:১৪ এএম, ১৮ মার্চ, ২০১৮

নেপালের ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালে ১৭ বাংলাদেশিসহ ২৮ জনের লাশ শনাক্তের কথা জানিয়েছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের পাঁচ দিন পর ফরেনসিক পরীক্ষা শেষে এসব লাশ উপস্থিত নিকট স্বজনদের দেখানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এদিকে নেপালের একাধিক ওয়েবসাইটে পোস্ট করা ভিডিওতে বিমানটিকে বিমানবন্দরের ১৮ কিলোমিটার দূরে থাকতেই ল্যান্ডিং গিয়ার খুলে মাটির ২শ’ ফুটের কাছে নেমে এসে উড়তে দেখা গেছে। বাংলাদেশ থেকে নেপাল যাওয়া মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোন প্রকার ঘাটতি ছিল না বলে উল্লেখ করেছেন। ওদিকে বিমান দুর্ঘটনার ৪ দিন পর নেপালের পার্লামেন্টে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
খবরে বলা হয়েছে, গতকাল সন্ধ্যায় কাঠমাÐুর হাসপাতালের মহারাজগঞ্জ ক্যাম্পাসের ইন্সটিটিউট অব মেডিসিন-এর সামনে ফরেনসিক বিভাগের পক্ষ থেকে লাশগুলোর নাম প্রকাশ করেন হাসপাতালটির ফরেনসিক বিভাগের প্রধান প্রমোদ শ্রেষ্ঠা। এসময় বাংলাদেশি মেডিক্যাল টিম এর সদস্য ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এর ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিংয়ে বলা হয় মোট ২৮টি লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ জন বাংলাদেশি, ১০ জন নেপালি ও একজন চীনা নাগরিক। নেপালি ও চীনা নাগরিকের লাশ স্বজনদের দেখানোর পর বাংলাদেশি নাগরিকদের লাশ দেখানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। পরে বাংলাদেশিদের লাশের তালিকা পরে শোনান ডা. সোহেল মাহমুদ।
শনাক্ত হওয়া নিহত বাংলাদেশিরা হচ্ছেন, অনিরুদ্ধ জামান, তাহিরা তানভীন শশী, মিনহাজ বিন নাসির, রাকিবুল হাসান, মতিউর রহমান, রফিক উজ জামান, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, আকতার বেগম, হাসান ইমাম, এসএম মাহমুদুর রহমান, বিলকিস আরা, বিমানটির পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ ও কেবিন ক্রু খাজা সাইফুল্লাহ।
ডা. সোহেল মাহমুদ ব্রিফিংয়ে জানান, নেপালি ও চীনা নাগরিকের লাশ স্বজনরা গ্রহণ করার পর বাংলাদেশিরা লাশ দেখার সুযোগ পাবেন। হতাহত ৩৬ বাংলাদেশির মধ্যে ১৭ জনের লাশ শনাক্ত সম্ভব হয়েছে। নিহত অপর বাংলাদেশিদের লাশ শনাক্তে ডিএনএ টেস্ট লাগবে। আর আহত ১০ জন নেপাল, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শনাক্ত হওয়া তালিকায় রফিকুজ্জামান ও তার ছেলে অনিরুদ্ধের নাম থাকলেও তার স্ত্রী সানজিদা হকের নাম নেই। বৈশাখী টেলিভিশনের রিপোর্টার আহমেদ ফয়সালের লাশ গতকাল শনাক্ত করা গেছে। এর আগে গতকাল লাশের তালিকা দেওয়া হবে শুনে সারাদিন হাসপাতালের সামনে ভিড় করেন অপেক্ষমাণ স্বজনরা। ব্রিফিংয়ের সময় তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
গত ১২ মার্চ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগ-মুহূর্তে পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। ৬৭ যাত্রী ও চার ক্রুসহ ৭১ জন আরোহী ছিলেন ওই ফ্লাইটে। এর মধ্যে ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশের ২৬ জন ও নেপালের ২২ জন। এছাড়া চীনের একজন যাত্রী নিহত হন। আহতদের মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশি, ১২ জন নেপালের ও একজন মালদ্বীপের নাগরিক।
ওই ফ্লাইটে থাকা আহত ১০ বাংলাদেশির মধ্যে পাঁচ জন নেপালের হাসপাতাল ছেড়েছেন। তাদের মধ্যে রেজওয়ানুলকে কাঠমাÐুর ওএম হাসপাতাল থেকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে। আর শাহরিন আহমেদ, রুবায়েত, মেহেদী হাসান, তার স্ত্রী সৈয়দা কামরুন নাহার স্বর্ণা ও মেহেদীর ভাবি আলমুন নাহার অ্যানি দেশে ফিরেছেন। তাদের ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে।
১৮ কি.মি. দূরে থাকতেই ল্যান্ডিং গিয়ার খুলে মাটির ২শ’ ফুটের কাছে নেমে আসে বিমানটি!
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরের গাগালপেদি এলাকায় থাকতেই ইউএস-বাংলার (ফ্লাইট-২১১) বিমানটি ভূপৃষ্ঠের ২০০ ফুট কাছাকাছি নেমে আসে। এ সময় বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ার বের হয়ে থাকতে দেখা যায়। নেপালের স্থানীয় শিখরনিউজডটকমে গত বুধবার প্রকাশিত একটি ভিডিও নিয়ে দেশটির অপর এক সংবাদমাধ্যম কাঠমাÐু পোস্ট বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন ছাপে।
তাতে আরো বলা হয়, ‘দূর থেকে একটি উজ্জ্বল সাদা আলো ছড়িয়ে বিমানটি অনেক নিচু থেকে উপরের দিকে ঢাল তৈরি করে উড়ে যাচ্ছে। ভিডিওটি দেখে মনে হচ্ছে, বিমানটি কাছের কোনো পাহাড়ের পাদদেশে বিধ্বস্ত হতে যাচ্ছে। এসময় ভিডিওটি ধারণকারী স্থানীয়দের বলতে শোনা যায়, ‘পথ হারিয়ে বিমানটি উড়ছে আর উড়ছে। এটা কোন কোম্পানির বিমান? মনে হচ্ছে নতুন।’ কাঠমাÐু পোস্ট ও শিখরনিউজডটকম-এ ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।
নেপালের পার্লামেন্টে শোকপ্রস্তাব অনুমোদন
ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার চারদিন পরে নেপালের প্রতিনিধি পরিষদে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। নিহতদের স্মরণে এই শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার কৃষ্ণা বাহাদুর মাহারা। সর্বসম্মতিক্রমে ওই প্রস্তাব পাস করে প্রতিনিধি পরিষদ। সেখানে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ট্র্যাজেডিতে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়।
শোক প্রস্তাবকে অনুমোদন করে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পার্লামেন্টে ভাষণ দেন। এ সময় তিনি নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন। পাশাপাশি দেশের এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির নিরাপত্তার মান বৃদ্ধিতে তার প্রতিশ্রæতির কথা বলেন।
‘নেপালে চিকিৎসায় ঘাটতি ছিল না’
নেপালে যাওয়া বাংলাদেশি চিকিৎসকেরা বলেছেন, বিমান বিধ্বস্তে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় এখানে কোনো ঘাটতি ছিল না। নেপালের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার সঙ্গেই যথাসম্ভব সেবা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে নেপালে যাওয়া মেডিকেল দলের সদস্য হোসাইন ইমাম গতকাল শনিবার বাংলাদেশী সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক। হোসাইন ইমাম বলেন, ‘এই মেডিকেল দলের সদস্যরা নেপালে আসার পর সমস্ত রোগীকে আমরা দেখেছি। পুরো চিকিৎসাব্যবস্থাকে আমরা আমাদের মতো করে পর্যালোচনা করেছি।’
হোসাইন ইমাম বলেন, ‘নেপালে সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে তারা যথাসম্ভব চেষ্টা করেছে এই রোগীগুলোকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। চিকিৎসাব্যবস্থায় আমার মনে হয় না কোথাও কোনো ঘাটতি রেখেছে। যখন যেটা দরকার, তখনই সেটা করেছে। যে কারণে আহত যেসব রোগী এখানে ভর্তি হয়েছেন, তারা কিন্তু কেউ খারাপ হননি। তারা একটা স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছেন। এখন পরবর্তী চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হবে।’
নেপালি চিকিৎসক, প্রশাসন ও সরকারকে ধন্যবাদ দেন অধ্যাপক ইমাম। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের একটি অবস্থায় যে ধরনের চিকিৎসা দরকার, তারা তাদের সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে থেকে তার যথাসম্ভব করার চেষ্টা করেছে।’
আহত বাংলাদেশিদের প্রায় সবাই ছিলেন কাঠমাÐু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আর একজন আছেন নরভিক হাসপাতালে। গতকাল পর্যন্ত মোট পাঁচজন দেশে ফিরেছেন।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কাঠমাÐু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন চারজন বাংলাদেশি আছেন। হোসাইন ইমাম বলেন, ‘এর মধ্যে তিনজনকে আমরা মনে করেছি তারা সাধারণ ফ্লাইটে মেডিকেল সহায়তায় দেশে ফেরত যেতে পারেন। দুজন রোগীর অবস্থা বেশ জটিল। তারা হলেন ইমরানা কবির ও ইয়াকুব আলী। ইমরানার বাবা গত শুক্রবার নেপাল গেছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠাতে চান তাদের পরিবার। আমরাও মনে করেছি তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠাতে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া গেলেই তাকে পাঠানো হবে।’
অন্য এক আহত ইয়াকুব আলী আছেন নরভিক হাসপাতালে। হোসাইন ইমাম বলেন, তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তবে তার অবস্থা স্থিতিশীল। তারপরও মাথার বিষয়। তাকে দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে পাঠানোর বিষয়ে কথা চলছে।
বিমান দুর্ঘটনায় আহত আরও ১ জন ঢামেকে ভর্তি
নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত শেখ রাশেদ রুবায়েত নামে আরও ১ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হয়।
এর আগে বিকেল ৩টা ৫ মিনিটের দিকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০০৭২ ফ্লাইট তাকে নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে শেখ রাশেদ রুবায়েতকে একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
শেখ রাশেদ রুবায়েত আহত অন্যান্যদের চেয়ে কিছুটা ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, আহত যারা এ পর্যন্ত এসেছে তাদের চেয়ে রুবায়েতের অবস্থা ভালো। তবে এখানে আনার পর প্রাথমিকভাবে আমরা যা দেখেছি তাতে মনে হচ্ছে তার শ্বাস-প্রশ্বাসে তেমন সমস্যা নেই। তার বুকের একটা হাড় ভেঙেছে। ডান পায়ে ইনজুরি রয়েছে। এছাড়া তেমন কোনো বার্ন নেই। আশা করছি তিনি দ্রæত সুস্থ হয়ে উঠবেন। তিনি আরও বলেন রোববার বেলা ১০টায় আমাদের ১৩ সদস্যের মেডিকেল টিম পুরোপুরি পর্যবেক্ষণ করে তাদের সার্বিক অবস্থার বিষয়ে জানাবেন। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ