Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইরাকে আইএস যোদ্ধাদের বিদেশি স্ত্রীদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হচ্ছে

‘মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখতে হবে’

ভয়েস অব আমেরিকা | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

‘মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।’ সোম ও মঙ্গলবার বাগদাদের একটি আদালতে বিচারক সতেরো বার এ আদেশটি পাঠ করেন। অর্থাৎ ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সতেরো জন নিহত বা আটক যোদ্ধার স্ত্রীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন তিনি। এ ছাড়া ছয় জন নারীকে আজীবন কারাদন্ড প্রদান করেন।
বাগদাদ হাইকোর্টের মুখপাত্র বিচারক আবদুল সাতার বায়রাকদারের মতে, কিছু আইএস সমর্থকের কাছে মৃত্যুদন্ডের আদেশ ভালো জিনিস বলে ব্যাখ্যা করা হতে পারে। তিনি বলেন, তারা মনে করে যে, তারা যদি নিহত হয় তাহলে তারা শহীদ হিসেবে বেহেশতে যাবে।
বায়রাকদার বলেন, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত নারীরা ইরাকের আইএস যোদ্ধাদের ৫৬০ জন বিদেশী স্ত্রীর কয়েকজন। আটক নারীদের সাথে ৯শ’ শিশু রয়েছে। এ শিশুদের প্রত্যেকের পিতা নিহত, নিখোঁজ অথবা অভিযুক্ত হিসেবে আটক।
দোষী? আমি জানি না
তুরস্কের ২৬ বছর বয়স্কা সোফিয়া মোহাম্মদ আইএস নিয়ন্ত্রিত ইরাকে বসবাসের জন্য স্বামী ও ভাইয়ের সাথে দেশ ত্যাগ করেন। আরো অনেক নারীর মত তিনিও তার শিশুকে নিয়ে আদালতে এসেছিলেন। সেখানে বিচারের জন্য সব আসামীকে একটি কাঠের খাঁচায় রাখা হয়েছিল। তিনি ঐতিহ্যবাহী কালো পোশাক পরিহিত ছিলেন, তবে তার মুখ খোলা ছিল।
বিচারক বিচারপূর্বকালীন তদন্তের কাগজপত্র পরীক্ষা করেন ও তাকে জিজ্ঞেস করেন, এটা কি সত্য যে, স্বামী যুদ্ধে নিহত হওয়ার পর প্রতি মাসে আইএস-র কাছ থেকে তিনি ৫০ ডলার মাসোহারা পেতেন?
সোফিয়া বিচারককে বলেন, এটা সত্য যে, আমার স্বামী ও আমার ভাই আইএসের পক্ষে কাজ করতেন। তাদের ঘাঁটিতে বিমান হামলায় তারা নিহত হন।
বিচারক তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি দোষী না নির্দোষ? সোফিয়া তুর্কি ভাষায় জবাব দেন, আমি জানি না।
আদালতের নিয়োজিত দোভাষী তার কাছে ঝুঁকে পড়ে জিজ্ঞেস করেন, আমি বিচারককে কী বলব?
ঐদিন বিচারাধীন তুরস্ক ও আজারবাইজানের দু’মহিলার মত তিনি স্বীকার করেন যে, আইএস যোদ্ধাদের সাথে বাস করার জন্য তিনি বেআইনিভাবে ইরাকে প্রবেশ করেছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে সরাসরি সহিংসতার কোনো অভিযোগ নেই। ইরাকি আইন অনুযায়ী সন্ত্রাসী গ্রæপকে সহায়তা করা হামলার পরিকল্পনা বা হামলা চালানোর মত সমান অপরাধ।
সোফিয়া বলেন, আমি মনে করি আমি নিরপরাধ।
১৫ মিনিট পর সোফিয়া ও আরো ৬ নারীকে কাঠগড়ায় তোলা হয় ও একের পর এক তাদের দন্ডাদেশ পড়ে শোনানো হয়। তাদের প্রত্যেককে বলা হয় যে, তারা দশ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন অথবা ৩০ দিনের মধ্যে তাদের পক্ষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপিল দায়ের হবে।
তাদের প্রত্যেককে যখন ‘মৃত্যু পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখতে হবে’ দন্ড পাঠ করে শোনানো হয়, সে সময় তাদের কাউকে কাঁদতে দেখা যায়নি, কেউ চিৎকার করেননি।
সন্তানেরা
আদালতে শুধু বাচ্চা শিশু ও ক্ষুদে ছেলেমেয়েদের শুধু একজন মহিলা রক্ষীর প্রহরায় তাদের মায়ের সাথে থাকার অনুমতি দেয়া হয়। একজন সাদা পোশাকের রক্ষী ফিসফিস করে বলেন, এ মহিলাদের দন্ড হলে বাচ্চাদের কী হবে আমরা জানি না। কেউ জানে না কী করতে হবে।
বায়রাদারের মতে, পিতৃহীন বিদেশী নাগরিক এ ছেলেমেয়েরা নিজ নিজ দেশ কর্তৃক পালিত হবে। কিন্তু কিছু দেশ আইএস যোদ্ধাদের সন্তানদের দায়িত্ব নিতে কোনো আগ্রহ দেখায়নি।
আইএসের তিন বছরের বেশি দখলকালীন সময়ে নগর, শহর ও গ্রামের যোদ্ধাদের জন্ম নেয়া সন্তানরা যদি এদেশে থেকে যায় তবে তারা কলংকিত বলে গণ্য হবে বলে নিনেভেহ প্রদেশের মহিলা ও শিশু অধিদফতরের পরিচালক সুকায়না মোহাম্মদ জানান।
মসুলে জানুয়ারিতে এক সাক্ষাতকারে সুকায়না বলেন, আমরা বিদেশী ছেলেমেয়েদের বাগদাদ পাঠাচ্ছি। এটি এক জটিল কাজ। বায়রাকদার বলেন, আবার দন্ডিত মায়েদের সাথে শিশুদের রাখাও ঝামেলা। কিছু নারী আমাদের বলেছেন যে, তারা আইএসকে ফিরিয়ে আনতে তাদের সন্তানদের বড় করবেন।
আইএসকে সমর্থন
আদালত কক্ষে ২০-এর ঘরে বয়স এমন এক তুর্কি নারী ইমরান আলি আইএসকে ধার্মিকতার রক্ষাকারী বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি আইএসকে সমর্থন ও বেআইনিভাবে ইরাকে প্রবেশের কথা স্বীকার করেন, কিন্তু তা করে তিনি কোনো অন্যায় করেননি বলে মনে করেন। তিনি বলেন, তিনি নির্দোষ।
তিনি বিচারককে বলেন, তিনি ইসলামিক স্টেটে বাস করতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, আমার দেশে যথাযথ ধর্মীয় রীতিতে পোশাক পরতে পারিনি। কয়েকজন নারী তাদের স্বামীদের আইএসের সাথে সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেন। অথবা বলেন যে, স্বামীরা কী কাজ করতেন তা তারা জানতেন না। কেউ এ গ্রæপের নিন্দা করেনি। ইমরান বলেন, আমি নির্দোষ। অভিযুক্ত হওয়ার মত কিছু করিনি।
এ সময় বিচারক তাকে প্রশ্ন করেন, তাহলে আপনি বাগদাদে এ খাঁচায় কেন? আমরা কি আপনাকে আমন্ত্রণ করে এনেছি? নাকি আপনি মসুলে আইএসকে সাহায্য করতে এসেছিলেন?
অস্বস্তিকর ব্যবস্থা
ইমরানের প্রকাশ্য বিচার ৫ মিনিটে শেষ করে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। বিচারকরা বলেন, কয়েক মাস তদন্ত ও প্রতিটি মামলা কয়েক ডজন কর্মকর্তা পর্যালোচনা করার পর দীর্ঘ আপিল প্রক্রিয়ার শেষে এ সংক্ষিপ্ত বিচার অনুষ্ঠিত হয়।
যেখানে হাজার হাজার অভিযুক্ত তাদের শ’ শ’ বিদেশী স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে বিচারের অপেক্ষা করছে সেখানে দ্রুত বিচার একটি অগ্রাধিকার। একটি আদালত কক্ষে তিনজন বিচারকের একটি প্যানেল ডজন খানেক বা তারও বেশি মামলাকে একদিনে বিচার করতে ও দন্ড দেয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
আদালতের বাইরে ফুয়াদ আহমেদ ফারমান নামে এক আইনজীবী বলেন, দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার সকল ইরাকির জন্যই মঙ্গলকর হবে। কিন্তু বর্তমানের মত দ্রুত বিচার কাজ চললে তাতে অনেক ত্রুটি থাকবে।
তিনি বলেন, কোনো সাক্ষী নেই। কোনো সাক্ষী ছাড়াই লোকজন দন্ডিত হচ্ছে। সাক্ষী থাকলে লোকজন খালাস পেতে পারে। শেষে তিনি বলেন, আল্লাহ আমাদের সবার বিচার করবেন।



 

Show all comments
  • Foysal Hasan ২৪ মার্চ, ২০১৮, ১১:৪৮ এএম says : 0
    না এটা ঠিক হবে না
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরাক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ