Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হাদীস সম্রাট ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বুখারী

শাহিদ হাতিমী | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:৪০ পিএম, ২৫ মার্চ, ২০১৮

\ শেষ \
এ সময় সমরকন্দের লোকেরা ইমাম বুখারীকে সমরকন্দ আগমনের জন্য বিশেষ অনুরোধ জানালেন। সে মতে তিনি সমরকন্দের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু কররেন। এমতাবস্থায় সংবাদ পেলেন যে, তার আগমন সম্পর্কে সমরকন্দবাসীদের মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ সংবাদে তিনি অত্যন্ত দুঃখিত হলেন এবং যাত্রা ভঙ্গ করে দিলেন।
ইমাম বুখারী (রহ.) উলিখিত ঘটনা সমূহে ব্যথিত হয়ে দুনিয়ার প্রতি ভীতশ্রদ্ধরূপে একদা তাহাজ্জুদ নামাযের পর এই বলে আলাহ তা’আলাকে ডাকলেন-“হে আলাহ! এই সুপ্রশস্ত জগৎ আমার জন্য সঙ্কীর্ণ হয়ে উঠেছে, অতএব হে প্রভু! তুমি আমাকে আপন কোলে উঠিয়ে নাও।” আলাহ তা’আলা স্বীয় মাহবুব ইমাম বুখারীর এ ডাক ব্যর্থ হতে দিলেন না। তার আবদার পূরণ করা হলো। এক মাসের মধ্যেই হাদীস শাস্ত্রের এই দীপ্ত সূর্য চিরতরে অস্তমিত হয়ে গেল।
আবদুল ওয়াহেদ ইবনে আদম নামক এক বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন-এক রাত্রে আমি রাসুলুলাহ সা. কে স্বপ্নে দেখলাম। তিনি স্বীয় সাহাবীগণের এক জামাত সহ একস্থানে অপেক্ষমান অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমি রাসূলুলাহ সা.কে সালাম করে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলুলাহ সা.! এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? রাসূলুলাহ সা. বললেন, মোহাম্মদ ইবনে ইসমাঈলের অপেক্ষা করছি। স্বপ্ন বর্ণনাকারী বলেন, কিছু দিন পরে যখন আমি ইমাম বুখারীর মৃত্যু সংবাদ পেলাম তখন হিসাব করে দেখলাম, আমি যে সময় স্বপ্ন দেখেছিলাম ঠিক সে সময়ই ইমাম বুখারীর মৃত্যু হয়েছিল। এ স্বপ্নের দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ইমাম বুখারীর পবিত্র আত্মা ইহকাল ত্যাগ করে পরকালের অতিথি হলে স্বয়ং রাসূলুলাহ সা. সাহাবীগণকে নিয়ে এই অতিথির অভ্যর্থনা করেন। হাদীসে আছে-হযরত রাসূলুলাহ সা. বলেছেন-যে ব্যক্তি স্বপ্নে আমাকে দেখে, সে বস্তুত: আমাকেই দেখে থাকে, কেননা শয়তান আমার রূপ ধারণ করতে পারে না।
গালেব ইবনে জিব্রিল নামক খরতঙ্গ গ্রামবাসী ইমাম বুখারী রহ. যার আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন, তিনি বর্ণনা করেছেন-ইমাম বুখারীকে কবরের মধ্যে রাখা মাত্রই কবরের চতুস্পার্শ্বে মেশকের ন্যায় সুগ্রাণ ও সুবাস ছড়াতে লাগল এবং ঐ সুবাস বহুদিন স্থায়ী ছিল। দেশ-বিদেশের লোক জিয়ারতের জন্য এসে তথাকার মাটি নেওয়া আরম্ভ করল। অবশেষে ঐ কবরকে মজবুত বেষ্টনী দ্বারা রক্ষা করতে হলো।
ইমাম বুখারী রহ. স্বয়ং বর্ণনা করেছেন, যৌবনের প্রারম্ভে একদা স্বপ্নে দেখলাম-আমি একটি পাখা হাতে নিয়ে হযরত রাসূলুলাহ সা. এর নিকট দাঁড়িয়ে আছি এবং ঐ পাখার দ্বারা রাসূলুলাহ সা. হতে মশা মাছি ইত্যাদি তাড়িয়ে দিচ্ছি। ভাল একজন তা’বীর বর্ণনাকারীর নিকট এ স্বপ্ন ব্যক্ত করলে তিনি আমাকে বললেন-তুমি এমন কোন কাজ করবে যদ্বারা রাসূলুলাহ সা. এর প্রতি মৌজু’ বা জাল ও মিথ্যা হাদীসের সম্বন্ধ করার মূল উৎপাটিত হয়ে যাবে। এ কথা শুনে আমার মনে প্রেরণা জাগল যে, আমি এমন এক কিতাব লিভ যার মধ্যে সন্দেহমুক্ত সহীহ হাদীস থাকবে। যে হাদীস সম্বন্ধে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ থাকবে তা গ্রহণ করবো না। এরূপ মনস্থ করে আমি পবিত্র মক্কা শরীফের মসজিদে হারামে বসে এ কিতাব লিখতে আরম্ভ করি।
তিনি আরও বর্ণনা করেছেন, আমি এ কিতাবের মধ্যে প্রতিটি হাদীস এতটুকু সতর্কতার সাথে গ্রহণ করেছি যে, আলাহ প্রদত্ত স্বীয় ক্ষমতা, জ্ঞান, ইলম ও অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রতিটি হাদীসকে সূক্ষরূপে বাছাই ও পরখ করে নেয়ার পরেও প্রত্যেকটি হাদীস লেখার পূর্বে গোছল করতঃ দু’রাকাত নামায পড়ে আলাহ তা’আলার নিকট এস্তেখারা করার পর যখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে এই হাদীসটি সন্দেহের লেশহীন ও সহীহ, তখনই আমি একে আমার এ কতাবের অন্তর্ভূক্ত করেছি; এর পূর্বে নয়। এ েিকতাবের পরিচ্ছেদ সমূহ পবিত্র মদীনায় রাসূলুলাহ সা. এর রওজা পাকের নিকটবর্তী বসে সাজিয়েছি এবং প্রতিটি পরিচ্ছেদত লিখতেও দু দু রাকাত নামায পড়েছি। এরূপে আমি স্বীয় কন্ঠস্থ ছয় লক্ষ হাদীস হতে বেছে ষোল বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে এ কিতাবটি সংকলন করেছি-এ আশায় অনুপ্রাণিত হয়ে যে, আমি যেন এ কিতাবকে নিয়ে আলাহর দরবারে হাজির হতে পারি।
নজম ইবনে ফোজাইল নামক বিশিষ্ট মোহাদ্দেস বর্ণনা করেছেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম-হযরত রাসূলুলাহ সা. স্বীয় রওজা শরীফ হতে বাইরে এসেছেন এবং বুখারী রহ. তার পিছনে হাটছেন। রাসূলুলাহ সা. যে যে স্থানে পা রেখে হাটছেন ইমাম বুখারী রহ. ঠিক ঐ স্থানে পা রেখে হাটছেন। বুখারা নিবাসী আবু হাতেম নামক বিশিষ্ট ব্যক্তিও এরূপ স্বপ্ন দেখেছেন বলে বর্ণনা আছে।
ইমাম বুখারী রহ. একজন বিশিষ্ট শার্গেদ বর্ণনা করেছেন, আমি রাসূলুলাহ সা. কে স্বপ্নে দেখলাম, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ? আমি আরজ করলাম, মোহাম্মদ ইবনে ইসমাঈলের নিকট যাচ্ছি। হযরত সা. বললেন, তাকে আমার সালাম বলবে।
২৫৬ হিজরী ১লা শাওয়াল শনিবার (শুক্রবার দিবাগত রাতে) সমরকান্দের অন্তর্গত খরতঙ্গ নামক গ্রামে ইহজগত হতে বিদায় গ্রহণ করেন। পরদিন (ঈদের দিন) জোহরের নামাযান্তে সেই গ্রামেই সমাহিত হন। তার বয়স তখন ১৩ দিন কম ৬২ বছর ছিল। মৃত্যুকালে তিনি কোন পুত্র সন্তান রেখে যান নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইমাম

৬ মার্চ, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ