Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে শত্রু সম্পত্তি বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু মুসলিমদের সঙ্গে বৈষম্যের অভিযোগ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

‘শত্রু সম্পত্তি’ নিলামে দিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন রুপি কামানোর পরিকল্পনা করেছে ভারত সরকার। পাকিস্তান ও চীনের সাথে যুদ্ধের সময় যে সব নাগরিক ওই সব দেশে চলে গেছে, তাদের ফেলে যাওয়া জমি ও ঘরবাড়ি নিলামে তোলা হবে। এ ধরনের পরিত্যক্ত সম্পত্তির সংখ্যা প্রায় ৯২৮০টি। কিছু সম্পত্তি আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে গেছেন অনেকে। ১৯৪৭, ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর যারা পাকিস্তানের নাগরিক হয়েছেন, তাদের সম্পত্তি এর আওতায় পড়বে। একইভাবে ১৯৬২ সালে চীনের সাথে যুদ্ধ চলাকালে এবং যুদ্ধের পর যারা চীনে চলে গেছেন, তাদের ফেলে যাওয়া ১২৬টি সম্পত্তিও এই নিলামের আওতায় পড়বে। সম্প্রতি এই সম্পত্তিগুলো বিক্রিয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে নির্দেশনা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যে সরকারী সংস্থা এই সব সম্পত্তির দেখাশোনা করে, সেই কাস্টডিয়ান অব এনিমি প্রপার্টিজকে (সিইপি) বলা হয়েছে তিন মাসের মধ্যে সমস্ত সম্পত্তির তালিকা দিতে। জেলা পর্যায়ের কমিটি এই সব সম্পত্তির মূল্য যাচাই করবে। স্থানীয়ভাবে রিয়েল স্টেট মূল্যের ভিত্তিতে এগুলোর দাম নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু জুনিয়র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হান্সরাজ গঙ্গারাম অহির গত বছর পার্লামেন্টকে জানিয়েছিলেন যে, সরকারের হিসেবে এই সম্পত্তির মূল্য এক ট্রিলিয়ন রুপিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সরকার যেভাবে এই সম্পত্তির শ্রেণীবিভাগ করেছে, সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। কিছু আইনজীবী দাবি করেছেন, ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে এতে বৈষম্য করা হয়েছে। সোনিপাতের জিন্দাল গ্লোবাল ল স্কুলের শিক্ষক ঐশ্বরিয়া পান্ডিত শত্রু সম্পত্তি বিষয়ক আইন নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বললেন, ১৯৬৮ সালে যখন এনিমি প্রপার্টিজ অর্ডিন্যান্স পাস করা হয়, পাকিস্তান ও চীনের সাথে ততদিনে যুদ্ধ হয়ে গেছে ভারতের। সিইপি তখন এইসব সম্পত্তির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয় যাতে এগুলো কোন দেশদ্রোহি কাজে ব্যবহার না হয়। পান্ডিত দ্য ন্যাশনালকে বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপের নজির রয়েছে আন্তর্জাতিক আইনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন একই কাজ করেছিল। যারা প্রতিপক্ষের শিবিরে ভিড়েছিল, তাদের সম্পত্তি রাষ্ট্র নিয়ে নিয়েছিল।” পান্ডিত বলেন, এই ধরনের আইনের একটা দিক হলো অস্থিতিশীলতার ইতি ঘটলে সম্পত্তিগুলো ফিরিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু সেটা কখনই হয়নি। ১৯৬৮ সালের অধ্যাদেশ পরবর্তীতে নবায়ন করেছে ভারত সরকার। গত বছর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন পার্লামেন্ট ওই অধ্যাদেশের বদলে একটা আইন প্রণয়ন করে যেখানে মূল নীতিমালাকে আরও কঠোর করা হয়েছে। আইন অনুসারে পাকিস্তান ও চীনে চলে যাওয়ার আগে যারা উত্তরাধীকার ও স্বজনদের কাছে সম্পত্তি দিয়ে গেছেন, সেগুলোও শত্রু সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। মনে করুন, কোন বাবা দিল্লী থেকে করাচি চলে যাওয়ার আগে তার দিল্লীর বাড়িটি সন্তানের কাছে দিয়ে গেছেন। কিন্তু ছেলে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে দিল্লীতে থেকে গেলেও এবং কখনও পাকিস্তানে না গেলেও তার বাড়ি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হতে পারে। নতুন আইন চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়েছে। পার্লামেন্টে, এটা নিয়ে বিতর্কের সময়, সিনিয়র কংগ্রেস রাজনীতিবিদ শশী থারুর বলেন যে, এই আইনে সচেতনভাবে দুই ধরনের ভারতীয় নাগরিক তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। যদি কোন না কোনভাবে দুই ধরনের ভারতীয় নাগরিক তৈরি হয় এবং এক ধরনের নাগরিকের অধিকার অন্য ধরনের নাগরিকের মতো না হয়, তাহলে সেটা একটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার হবে।” সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ৩১ মার্চ, ২০১৮, ১০:৪৫ পিএম says : 0
    আমি বাংলাদেশের কূটনৈতিক বুঝিনা কারন আমি কানাডায় বাস করি এখানে আমেরিকা যদি কানাডাকে নিয়ে কোন কিছু করতে চায় তাহলে কানাডাও সেই ভাবেই তাঁর আইন প্রণয়ন করে এতে করে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে একটা সামজ্যস বজায় থাকে। কিন্তু আমি দেখে আসছি ভারত যেভাবে তাদের করা শত্রু সম্পত্তি এমনকি একসময়ে ভারত বিভক্তির পর এজ বদল আইন করেছিল সেটাও তদানিন্তন পূর্বপাকিস্তান এবং এখন বাংলাদেশ এইসব আইন থেকে লাভবান হননি বরং বঞ্চিত হয়েছে। এর কারন আমি মনে করি কূটনৈতিক বৈষম্য তাই না?? বাংলাদেশের কূটনীতিবিদরা তোষামোদই কূটনীতিতে অভ্যস্ত কিন্তু ভারত প্রকৃত কূটনীতি সাথে অপর পক্ষকে দাবানো কূটনীতিতে বিশ্বাসী তাই তারা শক্তিশালী দেশ গুলোর সাথে সঠিক কায়দায় চলেন যাতে নিজের দেশ লাভবান নাহলেও কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়; এবং দুর্বল দেশের সাথে প্রভু শুলভ মানে দুর্বলকে ঠকিয়ে খাওয়া কায়দা করেন এটাই সত্য। আল্লাহ আমাদের কূটনীতিবিদদেরকে সঠিকভাবে সঠিক পথে থেকে সঠিক কাজ করার ক্ষমতা দান করুন। আমীন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ