Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রতিটি শিশুকে লার্নিং চিপ দেয়া মনোবিজ্ঞানী প্লোমিনের মিশন

প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : জিন এবং আইকিউ ও শিক্ষাগত কৃতিত্বের সঙ্গে এর যোগসূত্র নিয়ে অভিজাত শ্রেণী, ফ্যাসিবাদ ও বর্ণবাদের অভিযোগ নিয়ে কথা বলায় ঝুঁকি রয়েছে। মার্কিন অধ্যাপক আর্থার জেনসেন ১৯৬৯ সালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন যাতে আইকিউ স্কোরিংয়ে ৮০ শতাংশ পার্থক্যের ক্ষেত্রে জিনের ভূমিকা রয়েছে, পরিবেশের নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাক-স্কুল হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আফ্রিকান-আমেরিকান স্কোর বাড়ানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। এসব কথা উল্লেখ করায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যালিফোর্নিয়ায় তার অফিস অবরুদ্ধ করে এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে বক্তৃতা দেয়ার সময় জেনসেনকে সমর্থনকারী প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী হ্যান্স ইয়েসেঙ্কের নাকে ঘুষি মারা হয়।
হার্ভাডের মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক রিচার্ড হার্নস্টেইন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী চার্লস মুরে ১৯৯০ দশকে ‘দ্য বেল কার্ভ’ নামের বই প্রকাশ করলে এই বিতর্ক আবার ছড়িয়ে পড়ে। বইতে উল্লেখ করা হয় মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গদের গড় আইকিউ ৮৫ আর শ্বেতাঙ্গদের ১০৩। শিক্ষাগত সাফল্য ও কর্মজীবনে কৃতিত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে বর্ণগত অনেক পার্থক্য যখন অনুপস্থিত তখন এটা আবারও বিবেচনার মধ্যে নেয়া হয়। ওয়েলফেয়ার পলিসি যা দরিদ্র মহিলাদের সন্তান নেয়াকে উৎসাহিত করে তখন এই বইতে যুক্তি দেখানো হয় যে, গড় আমেরিকান আইকিউ কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
এসব বিতর্কের পেছনে রয়েছে একটি শ্রেষ্ঠ জাতি তৈরির নাজি প্রচেষ্টারই একটি পরোক্ষ ছায়া এবং শিক্ষকরা শিশুদের মেধার সযতœ লালনের বিষয়টি সবসময় যথেষ্ট আমলে নেন না। কারণ তাদের ধারণা, শিশুর ভাগ্য পূর্ব নির্ধারিত এবং বিদ্যালয়ে এ ব্যাপারে কিছু করা অর্থহীন।
মাইকেল গোভ’র সাবেক উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংস ২৫০ পৃষ্ঠার এক গবেষণায় দাবী করেন যে বিদ্যালয়, শিক্ষক, প্রতিবেশী এমনকি পরিবারের চেয়ে জিসিএসই স্কোরসমূহের মধ্যেকার ব্যবধানের জন্য দায়ী জিনসমূহের পার্থক্য। এই রিপোর্ট গত বছর ফাঁস হয়ে গেলে আরেকটি বিতর্কের ঝড় সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে এর কিছু পরেই বরিস জনসনের অভিমত প্রকাশিত হয় যাতে তিনি উল্লেখ করেন যে মানুষ কাঁচা সামর্থের সমতা থেকে অনেক দূরে।
আজ জেনেটিক্স অবশ্য একটি সদয় ও অধিকতর সহনীয় রূপ হিসেবে উপস্থাপিত। লন্ডনের কিংস কলেজ ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রির রিসার্চ প্রফেসর রবার্ট প্লোমিনের সঙ্গে মিলে লিখিত এক গবেষণাপত্রে কামিংস জিসিএসই স্কোরের ভিত্তির্তে এই দাবী তুলে ধরেছিলেন।
অভিন্ন ও অভিন্ন নয় এমন ১১ হাজারের বেশী যমজের তুলনার ভিত্তিতে বলা হয় সার্বিক জিসিএসইতে পার্থক্যের ৫০ শতাংশে এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় পার্থক্যের ৬০ শতাংশের জন্য দায়ী জিনগত পার্থক্য। প্লোমিন বারবারই কামিংসের অসংলগ্ন কাগজগুলোর উদ্ধৃতি দিয়েছেন যাতে ক্রমবর্ধমান এশীয় শক্তির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিযোগিতার প্রয়োজনে বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনে কারা সক্ষম তা চিহ্নিত করতে জেনেটিক স্ক্রিনিংয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
শিকাগোতে জন্ম তবে ১৯৯৪ সাল থেকে ব্রিটেনের বাসিন্দা প্লোমিন ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনে শিক্ষার উপর সম্প্রতি ৫টি লেকচার দিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, আমি অনেক বিষয়ে বেশ কিছুটা বামপন্থী এবং লেবার পার্টিরও একজন সদস্য।
একটি সদ্য প্রকাশিত বই ‘জি ইজ ফর জিনস’এ তিনি এবং নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির এডুকেশনাল সাইকোলজির লেকচারার ক্যাথরিন এ্যাসবারি ১১ টি নীতি ধারণার একটি ‘অভিপ্রায় তালিকা’র প্রস্তাব করেছেন। এসব প্রস্তাব নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকদের অনেকে উল্লসিত হবেন। এতে সুবিধা বঞ্চিত দুই বছর বয়স থেকে শিশুদের জন্য বিনা খরচে উচ্চমানের প্রাক-বিদ্যালয় শিক্ষা, ন্যাশনাল কারিকুলাম কমিয়ে আনা, শিক্ষকদের জন্য অধিকতর স্বাধীনতা, প্রতিটি শিশুর জন্য পৃথক শিক্ষা পরিকল্পনা, দরিদ্র পরিবার থেকে আগত শিশুদের জন্য বিনা খরচে অশ্বারোহন, পিয়ানো বা ব্যালে নৃত্য শিক্ষা প্রদান বা এতে ব্যাপক ভর্তুকি প্রদান।
এই বইতে প্লোমিনের প্রস্তাবে পরোক্ষভাবে হলেও গ্রামার স্কুল এবং বাইরে থেকে টার্গেট আরোপের বিরোধীতা করা হয়েছে। বিদ্যালয়গুলো যদি এককভাবে বেশী ব্যবধান গড়ে তুলতে না পারে। তাহলে নিয়ে বেশী হৈচৈ না করে বিদ্যালয়গুলোর ব্যর্থতা চিহ্নিত করে সেগুলোকে ভালো শিক্ষাদানের উপযোগী হিসেবে রূপান্তরিত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এসব বেসরকারী স্কুলের ফি যোগাতে গিয়ে কেন আপনি আপনার বাড়ি বন্ধক রাখবেন? প্রতিটি শিশু যেমন আলাদা তেমনি তাদের শেখার ধরণও এক রকম নয়। শিশুদের উদ্দেশ্যে লেকচার দেয়ার সময় ক্লাশে শিক্ষকদের সামনে দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে আলোচনায় টেনে আনতে হবে।
শিশুদের মধ্যে পার্থকের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জিনগত বৈশিষ্ট্যকে বিবেচনা করা হয় বলে তার বিশ্বাস। প্লোমিন বলেন, মানুষের মস্তিষ্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ তবে এটা নয় যে পরিবেশের কোন ভূমিকা নেই। বরং আরো অনেক বিষয় রয়েছে। তবে বেশী সফলতা আসে যখন আমরা সমতাপূর্ণ পরিবেশে থাকি। আমাদের মধ্যে পার্থক্যের জন্য আরো বেশী জিনগত পার্থক্য বিবেচনা করা হয়।
শিশুরা যখন খুব ছোট থাকে তখন তাদের জ্ঞানীয় সামর্থ বা টেস্ট স্কোরে কেন এত বেশী পার্থক্য তার ব্যাখ্যা জিনগত পার্থক্যের মধ্যে নেই কারণ তাদের পরিবেশ ব্যাপকভাবে ভিন্নতর। তবে বিদ্যালয়ে যাওয়ার মধ্যদিয়ে তারা বেশ কিছুটা সমতাপূর্ণ পরিবেশ পায় তখন জিনগত পার্থক্যসমূহ বেশী বিবেচনার।
আমরা অভিন্ন স্কুলিংয়ে শিশুদের রাখতে পারলে যে রকম ফল আসবে আলাদা আলাদা স্কুলে রাখলে ফলও অন্যরকম হবে। সকল শিশুকে যদি এলটন স্কুলে পাঠানো হয় বা মফস্বলের সাধারণ মানের স্কুলে পাঠানো হয় তাহলে তাদের ফলাফলে জিনগত অবদান একশো শতাংশ হতে পারে। এই পর্যবেক্ষণের আলোকে প্লোমিন এবং এ্যাসবারি লিখছেন, এক্ষেত্রে মেধার সুসম বিকাশ ঘটবে। এই সাফল্যের জন্য নিয়তিবাদের পরিবর্তে শিক্ষক ও পিতা-মাতারা যৌক্তিকভাবেই গর্ববোধ করতে পারে। নিয়তিবাদ মানুষের আস্থা নষ্ট করে।
আইকিউ ও কৃতিত্ব অর্জনে বর্ণগত ও সামাজিক শ্রেণীগুলোর মধ্যেকার ব্যবধান হিসেবে প্লোমিনের ব্যাখ্য পরিস্কার। তার যুক্তি হচ্ছে, ব্যক্তি পর্যায়ের পার্থক্যের তুলনায় গ্রুপসমূহের পার্থক্য কম। পাশাপাশি তিনি বলছেন, একটি গ্রুপের ভেতরে জিনগত পার্থক্য অনেক কিছু ব্যাখ্যা করতে পারে। তবে একটি গ্রুপের সঙ্গে আরেকটি গ্রুপের পার্থক্যের ক্ষেত্রে গোটা বিষয়টিই পরিবেশের উপর নির্ভরশীল যদি কোন একটি গ্রুপ বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে বা দারিদ্র্যে নিমজ্জিত থাকে।
প্লোমিন জানেন যে তিনি আগুন নিয়ে খেলছেন। ‘দ্য বেল কার্ভ’ বিতর্কের প্রেক্ষিতে ইয়েসেঙ্কে এবং জেনসেনসহ ৫১ জন শীর্ষস্থানীয় গবেষকের সঙ্গে তিনি এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন। এই বিবৃতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত হয়। বিবৃতিতে এই বইয়ের বিভিন্ন উপাত্তকে ব্যাপকভাবে অনুমোদন করা হয়েছে যদিও তা লেখকদের সিদ্ধান্ত নয়। তিনি বলেন, বিবৃতি স্বাক্ষরে তিনি দুঃখিত নন। যেমন ১৯৯৬ সালে তিনি লিখেছিলেন, জিনসমূহ তাকে একগুঁয়ে স্বভাব দিয়েছে সেখানে পারিবারিক লালন পালন দিয়েছে আত্মসন্মানবোধের এক কড়া ডোজ।
তার জীবন খুবই বৈচিত্রপূর্ণ। ভাড়ার একরুমের ফ্ল্যাটে ১৯৪৮ সালে তার জন্ম। তার পিতা একটি গাড়ির কারখানায় এসেম্লবি লাইনে কাজ করতেন। পরে তিনি একজন লেআউট ইঞ্জিনিয়ার হন। তার পিতামাতার কেউই কলেজে যাননি এবং তাদের বাড়িতে কোন বইপুস্তক ছিলনা। তবে পিতামাতা তাকে সেখানকার পাবলিক লাইব্রেরীতে যেতে উৎসাহ যোগান। ১০ বছর বয়সে তিনি বিবর্তনের উপর একটি সচিত্র বই পান যা তিনি তার ক্যাথলিক স্কুলে বিজ্ঞান পাঠের সময় উপস্থাপন করেন। এ কারণে তাকে স্কুল থেকে বহিস্কার করা হয়। এই ঘটনা রাতারাতি তাকে একজন নাস্তিকে পরিণত করে।
জীবন গঠনের বেশিরভাগ সময়ে তিনি লেখাপড়ার চেয়ে আয়-রোজগারে বেশী ব্যস্ত ছিলেন। তিনি মুরগী সরবরাহ করতেন, তুষার অপসারণের কাজ করেছেন। ভালো টাইপ করতে পারতেন এ কারণে শেষ পর্যন্ত এক শিক্ষা সমিতির পরিচালকের গবেষণা কাজে সাহায্য করার কাজ পান। এই কাজ তার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। কলেজে যাওয়ার জন্য তাকে টাকা দেয়ায় তিনি কলেজে যাওয়া শুরু করেন। কয়েকটি বিষয়ে আগ্রহ থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি সাইকোলজি সাবজেক্ট নেন। টেক্সাটে গ্রাজুয়েট স্কুলে তিনি জেনেটিক্স’র আচরণগত বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেন।
পিএইডি সম্পন্ন করার পর তিনি যমজ শিশুদের নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং কলোরাডো ও পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে তিনি ব্রিটিশ বংশোদ্ভুত তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। তার স্ত্রী একজন মনোবিজ্ঞানী এবং কিংস কলেজের একজন অধ্যাপিকাও।
বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে তার অবস্থান হলেও তিনি শিক্ষাঙ্গনের বাইরে তেমন পরিচিত নন। এখন তিনি এক মিশনে রয়েছেন। তিনি মনে করেন যে শিক্ষাজগৎ জিনগত বিষয়গুলোর দিকে যথেষ্ট নজর দিচ্ছে না। জেনেটিক্স সম্পর্কে জানা শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ব্যক্তির প্রতিভা ও মেধা খুঁজে বের করার উপায় যাতে শিক্ষকরা বুঝতে পারেন সেজন্য তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো ঢেলে সাজানো দরকার।
তার বড় ধারণাটি হচ্ছে ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষা। পড়ার অসুবিধা, মনোযোগ ঘাটতির ব্যাধি, প্রতিভা এমন অন্যান্য ধরণের সকল আখ্যানের বিরোধী তিনি। তার যুক্তি হচ্ছে প্রতিটি শিশুর বিশেষ চাহিদা রয়েছে এবং এই কারণে বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের বিষয় এবং অতিরিক্ত পাঠক্রম বাছাইয়ে ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে যদিও এর জন্য কার্যক্রম অনেক বিস্তৃত করা হতে পারে।
অবশেষে প্লোমিন বলেন, ডিএনএ বিশ্লেষণগুলো প্রতিটি শিশুকে শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার একটি নির্ভরযোগ্য জেনেটিক প্রিডিক্টর হিসেবে একটি লার্নিং চিপ দেয়া হবে। এই লার্নিং চিপের সাহায্যে শিশুদের শিক্ষায় কৃতিত্ব অর্জনের পথে বাধাসমূহ অপসারিত হবে। আইকিউ স্কোরিং উন্নত হবে। সবার কাছেই এটা গ্রহণযোগ্য যে প্রতিরোধমূলক ওষুধ হচ্ছে এগিয়ে যাওয়ার উপায়। তিনি বলছেন, প্রতিরোধী শিক্ষা কেন নয়? আমরা পড়ার অক্ষমতা বৃদ্ধির মতো সমস্যার জন্য কি অপেক্ষা করছি?
শিশুরা বিদ্যালয়ে যায়, তারা ব্যর্থ হয়, তাদের সমস্যা নির্ণয় করা হয়, তাদের বিশেষ সম্পদ দেয়া হয় তবে দেখা যায় অনেক দেরী হয়ে গেছে। এতে তারা নিত্য ব্যর্থতারই অভিজ্ঞতাই কেবল অর্জন করে এবং এটা ‘হামটি ডামটি’ একসঙ্গে ফিরে আসার মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। জিনগত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হলে আপনি অসুবিধা সম্পর্কে আভাস দিতে পারেন এবং প্রত্যাশিতভাবে তাদেরকে এসব অসুবিধা থেকে রক্ষা করতে পারেন।
এই ক্ষেত্রে প্লোমিনের কাজ নিয়ে আবার বিতর্ক চলছে। কারণ এটা কেবল মেধাতন্ত্রের উত্থানে পরলোকগত মাইকেল ইয়াংয়ের অনুমানভিত্তিক অবস্থাকে স্মরণ করার জন্য নয়, অনেক বিজ্ঞানীও বলছেন যে প্রতিটি শিশুকে লার্নিং চিপ দেয়া সম্ভব নয় এটাও বিতর্কের কারণ।
নির্দিষ্ট জিনগুলোর যে ব্যাখ্যা বেশীরভাগই অধরা প্রমাণিত হয়েছে জিন বিজ্ঞানীরা এটাকে হারিয়ে যাওয়া উত্তরাধিকার বলছেন। লন্ডনভিত্তিক মনোবিজ্ঞানী, লেখক ও ব্রডকাস্টার অলিভার জেমস বলছেন, এটা বারবার দেখা গেছে যে ডিএনএ মানুষের মধ্যেকার পার্থক্যগুলোর একটি সামান্য অংশের চেয়ে বেশী কিছু ব্যাখা করতে পারেনা।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জেনেটিক্সের এমেরিটাস প্রফেসর স্টিভ জোন্স বলছেন, মানুষের উচ্চতায় পার্থক্যের পেছনে বিভিন্ন ধরণের কয়েকশো জিন পাওয়া গেছে। তবে সেগুলোকে একত্রে রাখা হলে আপনি তাকে কেবল পার্থক্যের পঞ্চম বলে ব্যাখ্যা করতে পারেন। উচ্চতার জন্য জিন চিপ আপনি কিছুতেই তৈরি করতে পারেন না। এই ঘাটতিকে আপনি কিভাবে আইকিউ’র জন্য তৈরি করবেন?
প্লোমিন এই সমস্যা অস্বীকার করছেন না। তিনি বলেন, আমি এসব জিন ১৫ বছর ধরে অনুসন্ধান করছি এবং কোন একটিকেও খুঁজে পাইনি। তবে তিনি ও অন্যান্য গবেষকরা জিন সিক্যুয়েন্সের পার্থক্যে এটা দেখতে পারেন। তিনি দাবী করছেন, এগুলো সামর্থ ও কৃতিত্বে পার্থক্যসমূহ ব্যাখ্যা করছে। তবে যমজ স্টাডিজে দেখা যায় তা কেবল অর্ধেক।
যদিও এটাকে উত্তারাধিকসূত্রে প্রাপ্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে, তবে সর্বোপরি পার্থক্যের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যাখ্যা করে মাত্র। পরিবেশকে চালিকাশক্তির আসনে বসানো হলে এটা দেখা যায়। প্লোলিন মনে করেন এর কারণ হচ্ছে গবেষণাগুলোতে কেবলমাত্র সাধারণ জিনগুলোকে নিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। এরমধ্যে বিরল পার্থক্যগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হলে হারানো উত্তরাধিকার সমস্যা দূর হতে পারে।
তবে অন্য অনেকেই সন্দিহান। যেমন জেমস বলছেন, তারা চা পাতার প্যাটার্নের দিকে নিদর্শন খুঁজছেন। তারা এরমধ্যে সম্পর্ক দেখতে পারেন তবে তারা প্রমাণ করতে পারেন না যে সুনির্দিষ্ট জিনসমূহ এর কারণ।
তাছাড়া কয়েকজন জিনবিজ্ঞানীর যুক্তি হচ্ছে যে যুগল গবেষাণাগুলো ত্রুটিপূর্ণ কারণ তাদের অনুমান যে অভিন্ন যুগলরা যে পরিবেশে কাজ করে অ-অভিন্ন যুগলরাও সেই পরিবেশই শেয়ার করে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটা সত্যি নয়। একটি ডিম্বানু থেকে উত্থিত হলেও যুগলের জন্য পরিবেশ স্বতন্ত্র যদিও জন্মের আগে তারা একই নাড়ি শেয়ার করে।
যদিও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রাও তাদেরকে পৃথক বলতে পারেন না এবং তাদের মধ্যে জোরালো মানসিক বন্ধন গড়ে উঠার প্রবণতা দেখা যায়। এ কারণে কখনো কখনো তাদের পরিচিতি নিয়ে বিভ্রান্তিও দেখা যায়। জোন্স বলছেন, একজন যদি সবসময় লাইব্রেরীতে যায় তখন অন্যজনও সেখানে যেতে চায়। এই সমীকরণ থেকে কিভাবে আপনি বেরিয়ে আসবেন আমি জানিনা। অন্যকথায় গবেষকদের ঝোক থাকে যুগলের জিনগুলোর লক্ষণের দিকে যা অভিন্ন পরিবেশে তাদের অদ্ভুত আচরণের জন্য দায়ী।
কিন্তু প্লোমিন যুমজ গবেষণায় তার বিশ্বাস সহজে ত্যাগ করবেন না। এই গবেষণায় তিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেছেন। তিনি বলছেন, ফিরে আসার আমার কোন ইচ্ছে নেই। জেনেটিক্সে এটা এমনই এক রোমাঞ্চকর সময়। তিনি বলেন, এগুলো খুঁজে বের করতে গিয়ে হারি বা জিতি আমি সেখানেই থাকতে চাই। তিনি যে জিনগুলো খুঁজছেন সেগুলো যদি কখনোই পাওয়া না যায় এই প্রশ্নে তাকে কিছুটা দ্বিধান্বিত দেখায়। তবে তিনি বলেন, আমি এখনো বিশ্বাস করি যে উত্তরাধিকারাকিতা সত্যি। এটা প্রকৃতি হোক বা লালনের মধ্যে দিয়ে হোক। এখনো তিনি তার এই বিশ্বাসে অনড়। সূত্র : গার্ডিয়ান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রতিটি শিশুকে লার্নিং চিপ দেয়া মনোবিজ্ঞানী প্লোমিনের মিশন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ