Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিগগিরই চীনের সঙ্গে চুক্তি

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প : অর্থায়নে জটিলতা কাটছে

| প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : অবশেষে ঋণ চুক্তি নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েনের অবসান হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের সঙ্গে শিগগিরি চুক্তি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে চীনের সাথে ঋণ চুক্তি সই হবে। তবে এজন্য ছয়টি শর্ত পরিপালনে রাজি হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সরকারকে এ ঋণ নিতে হবে প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিটে (অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে)। সুদ দুই শতাংশ। তবে এর সঙ্গে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে দিতে হবে প্রতিশ্রæতি ও ব্যবস্থাপনা ফি (দুটি মিলে ০.৫ শতাংশ)। এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা ফি (৬৬ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৩ ডলার) পরিশোধ করতে হবে চুক্তি হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে। ঋণ পরিশোধ করতে হবে ২০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে রেয়াতকাল ছয় বছর।
জানা গেছে, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয় ২০১৬ সালে। কিন্তু এরপরই বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। চিঠি চালাচালিতে কেটে যায় দেড় বছরেরও বেশি সময়। একই দিনে পদ্মা সেতুতে বাসের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের স্বপ্ন একরকম মিলিয়েই গেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। তারা এখনও বলছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই ট্রেন চলবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি অনুমোদন হয় ২০১৬ সালের ৩ মে। এতে ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। শুরুতে এ প্রকল্পে শতভাগ অর্থায়নে রাজি ছিল চীনের এক্সিম ব্যাংক। পরবর্তীতে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে তারা। ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা ঋণ দিতে সম্মত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে গত বছরের ৮ আগস্ট চতুর্থ দফায় সংশোধিত ঋণ প্রস্তাব পাঠায় রেলওয়ে। এতে চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছে মোট ২৬৬ কোটি ৮৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার ঋণ চাওয়া হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর চীনের এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঋণ প্রস্তাবটি অনুমোদন করে। সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সময়ই পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে অর্থায়নে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। কিন্তু নানা কারণে অর্থায়ন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। এজন্য চুক্তি স্বাক্ষরে দেরি হতে থাকে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদের হস্তক্ষেপে সুদ ও শর্ত সংক্রান্ত জটিলতা কেটে যায়। এ ঋণ বিষয়ে ফেব্রæয়ারিতে চীনের স্টেট কাউন্সিল ও প্রেসিডেন্টের অনুমোদন মিলেছে।
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রেলপথে ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। তখন ট্রেনযোগে ঢাকা থেকে খুলনা যেতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা। এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রেলকে জনসাধারণের বাহন করতে চান। এই লক্ষ্যেই এই মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। পদ্মা সেতুতে রেলপথ চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হবে। এর ফলে পরিবহন খাত এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। আঞ্চলিক সংযোগসহ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে এ রেলপথ।
সরকারের দাবি, মেগা প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। তবে নির্ধারিত সময়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না তা অনেকটাই নিশ্চিত। অন্যদিকে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। অর্থায়ন জটিলতায় প্রকল্পটির মূল কাজ শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুরের একাংশে ভূমি অধিগ্রহণ চলছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে অধিগ্রহণ করা জমি বুঝে পেয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় ধাপের কাজ চলছে ফরিদপুরের বাকি অংশ, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোরে। এ চার জেলার সব কটিতেই অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে এর বাইরে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ আর এগোয়নি।
জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় চারটি সেকশনে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নতুন ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত কাজ শেষ করে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই রেলপথও চালুর পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু চীনের অর্থায়নে দেরি হওয়ায় তা আর সম্ভব নাও হতে পারে।
পদ্মা সেতু দিয়ে নতুন রেলপথ হবে ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া হয়ে মাওয়া-ভাঙ্গা-নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত। প্রকল্পটি ২০২২ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে চার হাজার ১০২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। তবে চীন অর্থ ছাড় না করায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থেকে বাদ দেওয়ার অনুরোধ করে পরিকল্পনা কমিশনে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। চীনের প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী গত অর্থবছরে এই প্রকল্পে দুই হাজার ৭৪২ কোটি টাকা ঋণের অর্থ পাওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি রাজস্ব খাত থেকেও দুই হাজার ৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। চীনের ঋণের অর্থ না পাওয়ার কারণে সরকারের অংশও পুরোটা ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। কারণ রাজস্ব খাতের বরাদ্দের ৬৭৩ কোটি টাকা ঋণের টাকার পরিপূরক হিসেবে ধরা হয়েছিল। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মাত্র এক হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা খরচের এখতিয়ার আছে। এর সবই জমি অধিগ্রহণ, বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক কাজে খরচের জন্য। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে এই প্রকল্পে আরও সাত হাজার ৯০৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জানান, সব জটিলতা কেটে গেছে। প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী একই দিন পদ্মা সেতু দিয়ে সড়কযানের সঙ্গে ট্রেনও চালানো হবে। জায়গা অধিগ্রহণসহ প্রকল্পের কাজ চলছে। ঋণচুক্তির পর সেই কাজ পুরোদমে চলবে। রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন জানান, ১৪ থেকে ১৬ এপ্রিলের মধ্যে চীনের সঙ্গে ঋণচুক্তি হচ্ছে। এর পরই পুরো প্রকল্পে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুরোদমে কাজ শুরু করতে প্রস্তুত রয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ, ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার লুপ ও সাইডিং, তিন কিলোমিটার ডাবলসহ মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেল ট্র্যাক নির্মাণ, ২৩ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, এক দশমিক ৯৮ কিলোমিটার র‌্যাম্পস, ৬৬টি বড় সেতু, ২৪৪টি ছোট সেতু ও কালভার্ট, একটি হাইওয়ে ওভারপাস, ২৯টি লেভেল ক্রসিং, ৪০টি আন্ডারপাস, ১৪টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ, ছয়টি বিদ্যমান স্টেশনের উন্নয়ন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, ২০টি স্টেশনে টেলিযোগাযোগসহ কম্পিউটার ভিত্তিক রেলওয়ে ইন্টারলক সিস্টেম সিগন্যালিং ব্যবস্থা, ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী গাড়ি সংগ্রহ, এক হাজার ৭০০ একর ভূমি অধিগ্রহণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম করা হবে।

 



 

Show all comments
  • joynal abdin ৫ এপ্রিল, ২০১৮, ৪:০৯ এএম says : 0
    very good news
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা সেতু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ