পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হালিম আনছারী, রংপুর থেকে : স্বামী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক ৫৮ (বাবু সোনা) এর পাশাপাশি মেয়ে অদিতীকেও ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিলেন দীপা ভৌমিক। এর কিছুক্ষণ পর বাবা-মেয়ে অচেতন হয়ে গেলে পূর্ব থেকে অপেক্ষায় থাকা প্রেমিক কামরুলকে নিয়ে স্বামীর গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন স্নিগ্ধা সরকার (দীপা ভৌমিক)। হত্যার পর লাশটি ঘরেই রাখা হয়। সকালে রথিশ চন্দ্রের লাশ একটি আলমারিতে ভরে একটি ভ্যান ভাড়া করে এনে তাতে করে নিয়ে যাওয়া হয় কামরুলের তাজহাট মোল্লারপাড়ার নির্মাণাধীন বাড়িতে।
এ সময় লোকজনকে জানানো হয় পুরাতন আলমারী মেরামতের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপর সেই ভ্যানে করেই নিয়ে যাওয়া হয় নির্মানাধীন সেই বাড়িতে। সেখানে আগে থেকেই তৈরি করা গর্তে লাশ পুঁতে রাখা হয়। এ কাজে তাকে সহায়তা করে তাদেরই দুই ছাত্র সবুজ ও রোকন। প্রেম থেকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন দীপা ও কামরুল। এতে যে রথিশ বাধা হয়ে না দাঁড়ান, সেজন্যই তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তারা। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, মোবাইলের কল লিস্ট এবং মোবাইল ট্র্যাকিং এর সূত্র ধরেই অ্যাডভোকেট রথিশ চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দিপা ভৌমিকের প্রেমিক কামরুল মাষ্টারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি স্বীকার করা ছাড়াও বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয় কামরুল। পরে এ্যাডভোকেট রথিশ চন্দ্রের স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দিপা ভৌমিককে গত মঙ্গলবার র্যাব কার্যালয়ে তুলে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে ব্যাবের একটি চৌকষ দল। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসতে থাকে চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু লোমহর্ষক তথ্য। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে দিপা তার স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। আর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই গভীর রাতে নগরীর তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকার নির্মাণাধীন ঐ বাড়ির ঘরের মেঝে খুঁড়ে বাবু সোনার লাশ উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
সূত্র জানিয়েছে, গত (বৃহস্পতিবার) কাজ শেষে রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিজ বাড়ি নগরীরর তাজহাট বাবুপাড়ায় ফেরেন অ্যাডভোকেট বাবু সোনা। এরপর আনুমানিক রাত ১০টার দিকে ভাত ও দুধের সঙ্গে ১০টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাবু সোনাকে খাওয়ান স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ভৌমিক। একই সঙ্গে তার মেয়েকেও খাবারের সঙ্গে তিনটি ঘুমের ওষুধ খাওয়ান দীপা। আর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দুই ঘণ্টা আগে থেকেই বাবু সোনার শোয়ার ঘরের পাশে অবস্থান নিয়েছিলেন কামরুল ইসলাম। ওষুধ খাওয়ানোর পর বাবা-মেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে কামরুল ঘরে ঢুকে দুজনে মিলে হত্যাকাÐ সংঘটিত করেন।
জানা যায়, শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবু সোনার মেয়ে অদিতী ভৌমিক বনভোজনে অংশ নিতে তার ফুফুর সঙ্গে রংপুরের বাইরে যায়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বাবার নিখোঁজের খবর জানতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অ্যাডভোকেট বাবু সোনার একমাত্র ছেলে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। ঘটনার দিন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বাবু সোনার ছোটভাই সাংবাদিক সুশান্ত ভৌমিক পরিবারসহ ওইদিন ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। বাড়িতে মেয়ে ছাড়া অন্য কেউ না থাকায় সুযোগটি কাজে লাগায় স্ত্রী দীপা ভৌমিক ও তার প্রেমিক কামরুল।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই মাস আগেই আইনজীবী রথিশ চন্দ্রকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তার স্ত্রী দীপা ভৌমিক। এই পরিকল্পনায় সহযোগী ছিলেন তার প্রেমিক কামরুল ইসলাম। তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব জানতে পারে যে, রথিশ চন্দ্রকে হত্যা করে তার লাশ গুম করার জন্য নগরীর তাজহাট মোল্লাপাড়ায় কামরুল তার বাড়ির নির্মাণকাজ অসমাপ্ত রাখেন। গত ২৯ মার্চ তারা রথিশ চন্দ্রকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দীপা ও কামরুলের কর্মস্থল তাজহাট উচ্চবিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী সবুজ ও রোকনকে দিয়ে ঐ বাড়ির মধ্যে একটি গর্ত খুঁড়ে রাখেন। লাশ পুঁতে রাখার জন্য পলিথিন ও বালুও সংগ্রহ করে রাখা হয় আগে থেকেই।
এদিকে, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীপা ভৌমিক ও কামরুল ইসলাম পার্শ্ববর্তী তাজহাট উচ্চবিদ্যালয়ে ২৫ বছর ধরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করে আসছেন। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন এ্যাডঃ রথিশ চন্দ্র ভৌমিক। বছর দুয়েক থেকে স্ত্রী দীপা ভৌমিক ও কামরুল মাষ্টারের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে রথিশ চন্দ্রের বাসায় কামরুলের যাতায়াত ছিল বলেও জানান স্থানীয়রা। এক পর্যায়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন দীপা ও কামরুল। তাতে যেন রথিশ বাধা হয়ে না দাঁড়াতে পারেন, সে কারণেই তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন দু’জনে। সূত্র মতে, দীপা ও কামরুলের সম্পর্কের বিষয়টি রথিশ চন্দ্র জানতে পারলে তা নিয়ে তাদের মাঝে একাধিকবার কথাকাটাকাটি ও ঝগড়া হত। সুত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে গত শুক্রবার (৩০ মার্চ) পারিবারিকভাবে সালিশ করার কথা ছিল।
যেভাবে গল্প সাজালেন দীপা
গত বৃহস্পতিবার রাতেই রথিশ চন্দ্রকে হত্যা করে ঘরেই রাখে লাশ। শুক্রবার সকালে স্বামীর লাশটি আলমারিতে ভরে পাঠিয়ে দেয় নির্মাণাধীন সেই বাড়িতে। সেখানে পুতে রেখে দুপুর থেকে দীপা ভৌমিক প্রচার করতে থাকেন তার স্বামী রথিশ চন্দ্র সকাল ৬টার দিকে জরুরী কাজের কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছেন। এরপর থেকেই তার কোনও সন্ধান মিলছে না। তার ফোন দুটোও বন্ধ। স্বজনরা তার কোনও সন্ধান না পেয়ে রাতে থানায় বিষয়টি জানান। রথিশ চন্দ্রের সন্ধানে নামে পুলিশ। এর মধ্যে শনিবার সকালে গণমাধ্যমকর্মীরা রথিশ চন্দ্রের বাসায় গেলে দীপা ভৌমিক তাদের জানান, শুক্রবার সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর তার স্বামীর আর কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় তিনি বলেছিলেন, শুক্রবার সকালে গোসল করে চা-বিস্কুট খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন তার স্বামী। এর পর তিনি বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশে যোগ দেন এবং স্বামীর উদ্ধারের দাবি জানাতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার বাড়িতে যান পুলিশের ডিআইজি, এসপি এবং র্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। বাসায় গিয়ে অ্যাডঃ রথিশ চন্দ্রের স্ত্রী দীপা ভৌমিকের সাথে কথা বলে তার কথা এবং আচরণে সন্দেহ হয় তাদের। এভাবেই ২ দিন অতিবাহিত হয়ে যায়। এরই মাঝে বিভিন্ন সংগঠন তার উদ্ধারের দাবিতে মাঠে নামে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পড়ে যায় চরম বিপাকে। এক পর্যায়ে তারাও কোমর বেঁধে মাঠে নামেন। ঢাকা থেকে র্যাবের একটি চৌকষ দল পাঠানো হয় ঘটনা তদন্তে। এরমধ্যে র্যাব ও পুলিশ তার মোবাইল কল লিস্ট এবং মোবাইল ট্র্যাক করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান। তারা পরীক্ষা করে দেখতে পান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকেই তার মোবাইল ফোন দুটি বন্ধ ছিল। নম্বর দুটি ট্র্যাকিং করে মঙ্গলবার র্যাব নিশ্চিত হয়, সেগুলো বাসার আশপাশেই রয়েছে। অনুসন্ধানের পর মঙ্গলবার র্যাব দীপা ভৌমিককে চ্যালেঞ্জ করে, রথিশের মোবাইল ফোন দুটি তার কাছেই আছে। পরে তিনি এ তথ্য স্বীকার করে নেন। র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রাখলে রাত ১১টার দিকে রথিশ হত্যার কথা স্বীকার করে নেন দীপা। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মোল্লাপাড়ায় কামরুলের নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে রথিশ চন্দ্রের লাশ উদ্ধার করে র্যাব।
অ্যাডভোকেট রথিশের শেষকৃত্য সম্পন্ন
গত বুধবার রাতেই শেষ কৃত্য সম্পন্ন করা হয় অ্যাডভোকেট রথিশ চন্দ্র ভৌমিকের। নগরীর দখিগঞ্জ শ্মশানে তাঁর শেষ কৃত্য সম্পন্ন করা হয়। এ সময় তাঁর আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার বিকেলে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এরপর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় রংপুর আইনজীবী ভবন চত্বরে। সেখানে আইনজীবী এবং আইনজীবি সহকারী ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এক ঘণ্টার জন্য লাশ রাখা হয়। সেখানেও বিভিন্ন স্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সন্ধ্যায় লাশ নিয়ে যাওয়া হয় তাজহাট বাবুপাড়ায় তাঁর নিজ বাড়িতে। এ সময় সেখানে আত্মীয়-স্বজনসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা ভিড় করেন। ধর্মীয় রীতিনীতি পালন শেষে রাতেই নগরের দখিগঞ্জ শ্মশানে তার শেষকৃত সম্পন্ন করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।