Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সালমান কারাগারে থাকছেন সাধারণ বন্দির মতোই

জামিন মেলেনি : শুনানির রায় আজ কয়েদি নং-১০৬ : রাতে ‘ডাল-রুটি’ দেওয়া হলেও খাননি কিছুই

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সালমান খানের হাজতবাস দীর্ঘায়িত হল। কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় অভিনেতা সালমানের জামিনের আবেদনের শুনানি গতকাল সকালে শুরু হলেও রায় দেয়নি আদালত। আজ শনিবার রায় দেবে জোধপুর দায়রা আদালত। এর ফলে আরও চব্বিশ ঘণ্টা জেলেই কাটাতে হবে মহাতারকাকে। বৃহস্পতিবারই তাকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড এবং দশ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন যোধপুরের প্রধান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। সেই রায়ের বিরুদ্ধেই গতকাল শুক্রবার দায়রা আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন সালমানের আইনজীবীরা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলায় পুরনো রেকর্ড তলব করেন বিচারক। একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, শুনানির রায় দেবেন শনিবার (আজ)। আজ যদি কোনও কারণে সালমানের জামিন খারিজ করে দায়রা আদালত, সেক্ষেত্রে সোমবারের আগে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করতে পারবেন না তার আইনজীবীরা। ফলে, ভাইজানের দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে গেল। এ দিন জামিনের শুনানির শুরুতেই সালমানের আইনজীবীরা দাবি করেন, যে সাক্ষীদের জবানবন্দির উপরে ভিত্তি করে সালমানকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তারা নির্ভরযোগ্য নন। সালমানের জামিনের জন্য ৫৪টি যুক্তি দিয়ে মোটা ৫১ পাতার জামিনের আবেদন আদালতে জমা দিয়েছিলেন তার আইনজীবীরা। এতকিছুর পরেও অবশ্য সালমানকে টানা দু’দিন জেলে কাটাতে হচ্ছে।
বিরল হরিণ মেরে কারাগারে যাওয়া বলিউড তারকা সালমান খান গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম দিন কাটিয়েছেন যোধপুর সেন্ট্রাল জেলে। বন্দী হিসেবে তার নম্বর ১০৬। সেখানে ৫২ বছর বয়সী এই অভিনেতাকে রাতের খাবারে ডাল-রুটি দেওয়া হয়। তবে তিনি তা খাননি। জেলের খাবার না খেলেও বাইরে থেকে কোনো খাবার আনাননি সালমান।
এই তারকাকে বন্দী করার বিষয়ে কারা তত্তাবধায়ক বিক্রম সিং সাংবাদিকদের জানান, সালমান সাধারণ বন্দীর সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন কারাগারে। তাকে বিশেষভাবে দেখভাল করা হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার রাতে সালমানের একজন দেহরক্ষী তার জন্য পোশাক নিয়ে এসেছিলেন। সালমান খানের সঙ্গে ওই একই কারাগারে রয়েছেন স্কুলছাত্রী ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত আধ্যাত্মিক নেতা আসারাম বাপু।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে কারা তত্তাবধায়ক জানান, সালমান খানকে রাতে সাধারণ বন্দীর মতো ডাল-চাপাতি এবং সকালে খিচুড়ি দেওয়া হবে। তার জন্য জেল কুঠুরিতে সাধারণ কাঠের বিছানা, কম্বল ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থাকছে। কারা তত্তাবধায়ক জানান, এই অভিনেতার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে যখন তাকে কারাগারে আনা হয়, তখন তার রক্তচাপ বেশি ছিল। কারাগারের চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করেছেন। পরে তার রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে আসে।
সালমান খানকে ২ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। এর পাশের কুঠুরিতে বন্দী হিসেবে রয়েছেন নিজেকে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী দাবি করা আসারাম বাপু। তার আশ্রমে ১৫ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০১৩ সাল থেকে তিনি সেখানে বন্দী। আরেক কারাগারে বন্দী লরেন্স বিষ্ণোই নামে একজন সন্ত্রাসীর সালমানকে হুমকি দেওয়ার ঘটনার বিষয়ে কারা তত্তাবধায়ক বলেন, হুমকির বিষয়টি বিবেচনা করে সালমানকে আরও কয়েক বন্দীর সঙ্গে রাখা হতে পারে, যাতে তিনি একা না থাকেন। আদালতের রায়ের পর থেকে সালমান খানের দুই বোন আলভিরা ও অর্পিতা যোধপুরেই আছেন। তার দুই ভাই আরবাজ, সোহেল খানসহ পরিবারের আরও সদস্য শুক্রবার যোধপুরে আসার কথা।
‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শুটিংয়ের জন্য প্রায় ২০ বছর আগে রাজস্থানের যোধপুর শহরে গিয়েছিলেন সালমান খান। ১৯৯৮ সালের ২ অক্টোবর চাঁদনি রাতে সহ-অভিনেতা সাইফ আলী খান, টাবু, নীলম ও সোনালি বেন্দ্রেকে নিয়ে কঙ্কনি গ্রামে শিকারে বের হন সালমান। তার ছোড়া গুলিতে বিলুপ্তপ্রায় দুটি কৃষ্ণসার হরিণের মৃত্যু হয়।
গত বৃহস্পতিবার সকালে যোধপুর আদালতের বিচারপতি দেব কুমার খাতরি সালমানকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫ বছরের সাজা ও ১০ হাজার রুপি জরিমানার রায় দেন। সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে বাকিরা খালাস পেয়ে যান। রায়ের পর ওই দিন বিকেলেই সালমানকে যোধপুর সেন্ট্রাল জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার জেলা আদালতে তার জামিনের আবেদন করা হয়। তবে জামিন না হওয়ায় শুক্রবার রাতও সালমানকে যোধপুর জেলেই থাকতে হয়।
সালমান অবশ্য হরিণ হত্যার দায় অস্বীকার করে বলেছেন, তাকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এটি ছিল সালমানের বিরুদ্ধে বন্য প্রাণী হত্যার তৃতীয় মামলা। আগের দুটি মামলাতে দোষী সাব্যস্ত হলেও রাজস্থান হাইকোর্ট থেকে তিনি খালাস পেয়েছিলেন।
কেমন জীবন যাপন করেন সালমান খান
২০ বছর আগে কৃষ্ণ হরিণ শিকারের দায়ে পাঁচ বছরের কারাদন্ডের শাস্তি পাওয়া সালমান খান বিভিন্ন সময় নানারকম বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। আইন ভঙ্গ করার দায়ে বিভিন্ন সময় অভিযুক্ত হয়েছেন এই বলিউড তারকা। শুধু বিরল প্রজাতির প্রাণী শিকারই নয়, ২০০২ এ মুম্বাইয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় গৃহহীন চারজনকে আহত ও একজনকে হত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। সাবেক প্রেমিকাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু তারপরও সালমান খান ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেমা তারকাদের মধ্যে একজন। ৫২ বছর বয়সী এই তারকা প্রায় ১০০ হিন্দি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সিনেমা সংশ্লিষ্ট অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন সালমান খান।
শিক্ষিত মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে শ্রমজীবি দরিদ্র শ্রেণী পর্যন্ত ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে তার।
কিন্তু জনপ্রিয় নায়কের পাশাপাশি বেপরোয়া জীবনযাপন করা উশৃঙ্খল এক সুপারস্টারের ভাবমর্যাদাও তৈরী করেছেন তিনি। তবে বিতর্ক আর দুর্ব্যবহারের অভিযোগ থাকলেও সালমানের ফ্যানরা সবসময়ই তাকে সমর্থন দিয়েছেন। এমনকি তার ভক্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েছে।
ব্যবসায়িকভাবে দারুণ সফল সিনেমা তৈরীর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিশাল জনপ্রিয়তা রয়েছে তার। সালমানের ফেসবুক পেইজে লাইকের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটির বেশী। টুইটারে তার অনুসরণকারীও সোয়া তিন কোটি। কিন্তু খ্যাতনামা চিত্রনাট্যকার সেলিম খানের তিন ছেলের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সালমানের চরিত্রের অন্য দিকটিও বেশ সমালোচিত। বিভিন্ন পার্টিতে তার নানাধরনের কীর্তিকলাপ ও সহ-অভিনেত্রীদের সাথে তার সম্পর্ক একসময় বলিউডের কানাঘুষার প্রধান উপাদান ছিল। এমনও অভিযোগ আছে, এক রেস্টুরেন্টে ক্ষুদ্ধ হয়ে সাবেক এক প্রেমিকার মাথায় এক বোতল কোমল পানীয় ঢেলে দিয়েছিলেন তিনি। অভিনেত্রী ও সাবেক মিজ ওয়ার্ল্ড ঐশ্বরিয়া রাইয়ের সাথে তার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর ঐশ্বরিয়া অভিযোগ করেছিলেন যে, সালমান তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেছে। সালমান খান এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে এই ‘ব্যাড বয়’ ভাবমর্যাদা কাটাতে গত কয়েক বছর নানাধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন এই অভিনেতা।
পরিবার ও ভাইদের প্রতি তার ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের জন্য সবসমই প্রশংসিত সালমান খান। বন্ধুদের তো বটেই, কখনো কখনো অচেনা মানুষকে সাহায্য করতেও পিছপা হননা বলে সুনাম রয়েছে সালমানের।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা ও চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কয়েকবছর আগে তিনি ‘বিইং হিউম্যান’ নামের একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান শুরু করেন যারা টি-শার্ট ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি করে মুনাফার টাকা দিয়ে দাতব্য কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। নারীদের সাথে সমপ্রতি তার আচরণ অনেক পরিণত হলেও দুই বছর আগে কাজের ব্যস্ত সূচির উদাহরণ টানতে গিয়ে ‘ধর্ষিতা নারীর মত অনুভব হচ্ছে’ বলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। আরেকটি পৃথক ঘটনায় তিনি বলেছিলেন যে, ধূমপান, মদ্যপান ও কফির মত ‘দোষ’ ছাড়তে পারলেও নারীলিপ্সা তিনি ছাড়তে পারবেন না। এই ঘটনার পর ভারতের জাতীয় নারী কমিশন তাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আদেশ দেয়। সালমানের বাবা সেসময় বলেন, মি. খানের এই উক্তি ‘যথাযথ নয়’। তার ভাইয়েরা তার পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইলেও সালমান ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানান।
নিজের আইনজীবির মাধ্যমে সালমান খান কমিশনকে জানিয়েছে যে, তারা ‘এ ধরনের বিষয়ে কথা বলার অধিকার রাখে না’। এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অপরাধমূলক কাজের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় শাস্তি পাওয়া থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি।
আইনের সাথে খন্ডযুদ্ধ
২০০২ সালের গাড়ি দুর্ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ায় ২০১৫’র মে মাসে তাকে পাঁচ বছরের কারাদন্ডের শাস্তি দেয় আদালত। তবে ঐ বছরের ডিসেম্বরেই উচ্চ আদালত এই রায় খারিজ করে দেয়। গত বছর ঐ মামলার বাদী সুপ্রীম কোর্টে আপিল করে। মামলাটি বর্তমানে সেখানে বিচারাধীন আছে। রাজস্থানে ১৯৯৮ সালে কৃষ্ণা হরিণসহ সংরক্ষিত হরিণ শিকারের দায়ে অভিযুক্ত হন তিনি। বৃহস্পতিবার আদালতের বিচারক তাকে ‘স্বভাবসিদ্ধ অপরাধী’ বলে আখ্যা দিয়ে পাঁচ বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেন। তবে তার দিন কয়েকের বেশি জেল খাটার সম্ভাবনা কম। তার আইনজীবিরা জানিয়েছেন, তারা সালমানের জামিনের জন্য আবেদন করেছেন এবং এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। বিপন্নপ্রায় প্রাণী হত্যার দায়ে সালমানের বিরুদ্ধে করা চারটি মামালার দু’টিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন ২০০৬ সালে। সেবারও তাকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেয়া হলেও এক সপ্তাহের মধ্যেই জামিনে ছাড়া পেয়ে যান তিনি।
২০১৬’র জুলাইয়ে রাজস্থানের হাইকোর্ট তার দন্ডাদেশ বাতিল করে দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে একটি আপিল করা হলেও কবে আদেশ আসবে তা নিশ্চিত নয়। সূত্র : ওয়েবসাইট।



 

Show all comments
  • নাসির ৭ এপ্রিল, ২০১৮, ৩:৪৩ এএম says : 0
    হায়রে পশু মারলে বিচার হয়, কিন্তু মানুষ মারলে হয় না !
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সালমান কারাগারে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ