Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সুন্নাতে রসূল (সঃ) এর গুরুত্ব

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সুন্নাত আরবী শব্দ। এর অর্থ পথ, সুপরিচিত পথ, সঠিক ও সুন্দরভাবে মাড়ানো পথ, যা বার বার অনুসরণ করা হয়, বিষয়, গতিপথ, কার্যধারা, অভ্যস্ত আচরণ, নিয়ম-নীতি, চিরাচরিত প্রথা, রীতি-নীতি, ধরন-প্রকৃতি, অভ্যাস-আচরণ, শিষ্টাচার, আচরণ-ব্যবহার, সামাজিক নিয়ম কানুন, জীবন পরিচালন ও জীবন-যাপন পদ্ধতি ইত্যাদি। অতএব, কোন মানুষ বা রাষ্ট্র যে নিয়মে চলে সেটা হলো ঐ ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের সুন্নাত বা পদ্ধতি। আল্লাহ যে পদ্ধতিতে তাঁর রাজ্য পরিচালনা করেন এটা তাঁর সুন্নাহ। খোলাফায়ে রাশেদীন যে পদ্ধতিতে জীবন, রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনা করেছেন এটা হচ্ছে খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ্। তেমনিভাবে মহানবী মুহাম্মদ স. যে পদ্ধতিতে তাঁর সমগ্র জিন্দেগী পরিচালনা করেছেন তাই হচ্ছে সুন্নাতে রসূল স.। অতএব আহার-বিহার, বিশ্রাম, বিনোদন যে পদ্ধতিতে করেছেন তা হলো আহার-বিহারের সুন্নাহ্। রাষ্ট্র পরিচালনা, যুদ্ধ ও সন্ধি সংক্রান্ত যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তা হলো রাজনীতিক। সুন্নাহ্ বিচার কার্য পরিচালনা ও অপরাধীর শাস্তি বিধানে যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তা হলো বিচার ও শাস্তি বিধান সংক্রান্ত সুন্নাহ্। পবিত্র কুরআনে ১৬ বার সুন্নাহ্ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে আল্লাহ্র রীতি-নীতিকেও সুন্নাহ্ বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহ্র সুন্নাহ্ এর মাঝে কোন পরিবর্তন দেখতে পাবে না। এ প্রসঙ্গে রসূলুল্লাহ স. বলেন, ‘তোমাদের জন্য অবশ্যই পালনীয় হচ্ছে আমার সুন্নাহ্ এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ।’
সুন্নাহ-এর সমার্থক সবচেয়ে বেশি পরিচিত অপর শব্দটি হলো হাদীস। এর শাব্দিক অর্থ কথাবার্তা, যোগাযোগ, গল্প, কাহিনী, বর্ণনা, কথোপকথন, আলাপ, ধার্মিকতা বা সাংসারিক বিষয়, ঐতিহাসিক অথবা নতুন ঘটনা। পবিত্র কুরআনেও হাদীস শব্দটি ২৮ বার উল্লেখিত হয়েছে। যেমন ‘আল্লাহ্ উত্তম হাদীস অবতীর্ণ করেছেন, তা হলো আল্লাহ্র কিতাব।’
এই নিবন্ধে সুন্নাহ্ শব্দটি রসূলুল্লাহ স.-এর কথা, কাজ, তাঁর অনুমোদন এবং তাঁর ব্যক্তিত্ব চরিত্র সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের সমাহার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। হাদীসের বা সুন্নাহ্র গুরুত্ব মূলত এর বাহক মহানবী মুহাম্মদ স.-এর প্রেরণ বা তাঁর নবুয়াতের উদ্দেশ্যের সাথে সম্পৃক্ত। এ উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনিই তাঁর রসূল স.-কে হেদায়াত এবং সত্য দীন সহ পাঠিয়েছেন যাতে তিনি একে (ইসলাম) অপরাপর সকল দীনের উপর বিজয়ী করেন। মুশরিকরা অপছন্দ করলেও।’
অতএব সুন্নাতে রাসূল ছাড়া ইসলাম পরিপূর্ণ হতে পারে না। অন্য কথায় সুন্নাতে রাসূল যেখানে অনুপস্থিত ইসলামও সেখানে অনুপস্থিত। পবিত্র কুরআন জানার ও মানার ক্ষেত্রে সুন্নাহর ভূমিকা অপরিসীম। অতএব, সুন্নাতে রাসূলের গুরুত্ব, ভূমিকা ও ক্ষেত্র বিশাল ও ব্যাপক।
সুন্নাহর সাহায্যে কুরআনের ব্যাখ্যা করা : এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আমরা এ কিতাবকে তোমার উপর নাযিল করেছি, যাতে তুমি তা মানুষের সামনে ব্যাখ্যা করতে পারো, যা তাদের জন্য নাযিল করা হয়েছে।’ কুরআনের অসংখ্য বিষয় যা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ, আর তা সম্ভব সুন্নাতে রাসূল দ্বারাই। অতএব সুন্নাহকে কুরআনের সহায়ক হিসাবে কুরআন বুঝার প্রধান সহায়িকা বলা যায়।
যাবতীয় মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ের সমাধান দেয়া : এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্র নির্দেশ হচ্ছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্র আনুগত্য করো, আল্লাহর নবীর আনুগত্য করো এবং তোমাদের মধ্যকার তোমাদের কর্তৃত্বশীলদের। কোন বিষয়ে তোমাদের মাঝে যদি মতবিরোধ দেখা দেয় তাহলে তা (সমাধানের জন্য) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট সোপর্দ করো যদি তোমরা ঈমানদার হও আল্লাহ ও পরকালে এটাই উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর।’ অর্থাৎ মানবজীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন তার সকল সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে কুরআন ও সুন্নাহ অন্য কোথাও নয়।
এখানে যাবতীয় বিরোধ, যেমন রোগ নির্ণয়, নৈতিকতার সমস্যা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা-সাহিত্য, সাংবাদিকতা, বিচার কার্যবিধি, সাক্ষ্য, আটক, জামিন, দেশান্তর, বিদেশে গমন ও দেশে ফেরায় বাধাদান, রাজনীতি, ইমারজেন্সি, স্থায়ী সরকার, স্বল্পকালীন সরকার, যুদ্ধ, সন্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিং, গর্ভপাত, টেস্ট টিউব বেবী, ক্লোনিং, কিডনী-চক্ষুদান, নির্মাণ, প্রশিক্ষণ, গবেষণাসহ সকল কার্যক্রমে বিদেশী বিশেষ করে বিধর্মীয় সাহায্য গ্রহণসহ সকল ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানের জন্য যেতে হবে আল-কুরআন ও সুন্নাহ্র কাছে। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নিকট পেশ করার অর্থ হলো কুরআন ও সুন্নাহ্র ভিত্তিতে যাবতীয় বিষয়ের ফায়সালা করা। কোন বিষয়ে সরকার ও জনগণের মধ্যে মতভেদ হলে তার সমাধান উভয় পক্ষকে কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যেই সন্ধান করতে হবে।
আইন প্রণয়ন ও বিচার ফায়সালা দানে সুন্নাতে রাসূল স: আল্লাহ্ স্বয়ং আইনের উৎস এবং আইনদাতা। রসূলুল্লাহ স.-কেও তিনি কোন কোন ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের এবং প্রণীত আইনানুযায়ী বিচার ফায়সালা করার ক্ষমতা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘কখনো নয়, তোমার প্রভুর শপথ! এরা কখনো মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের যাবতীয় মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ে তোমাকে বিচারক না মানে এবং তোমার দেয়া সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোনরূপ দ্বিধা না থাকে, বরং তা সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়।’ ‘এটা কোন নারী পুরুষের জন্য শোভনীয় নয় যে, যখন কোন বিষয়ে আল্লাহ্ ও তার রাসূলের পক্ষ থেকে ফয়সালা দেয়া হয়ে গেছে এ বিষয়ে তাদের কোন দ্বিমত থাকা।
অতএব, রসূল স.এর দেয়া যাবতীয় সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়া বাধ্যতামূলক এ বিষয়ে পছন্দ অপছন্দের কোন সুযোগ নেই। আল্লাহ্র ঘোষণা হচ্ছে : ‘রাসূল তোমাদের প্রতি যাই করতে বলেন তাই কর এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক।’ আইন প্রণয়ন, রাষ্ট্র ও বিচার কার্য পরিচালনা যে রিসালাতের দায়িত্বেরই অন্তর্ভূক্ত ছিল, এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ স.এর বক্তব্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন মোয়াজ বিন জাবালকে ইয়েমেনের গভর্নর করে পাঠানোর সময় রসূলুল্লাহ স. তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমার আদালতে কোন মামলা আসলে কিভাবে তুমি এ ফয়সালা দেবে? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করব। কুরআনে না পাওয়া গেলে আল্লাহর নবীর সুন্নাহ অনুযায়ী। সুন্নাতেও যদি না পাওয়া যায়? তাহলে আমি ইজতিহাদ করবো এবং তাতে অবহেলা করবো না। মুয়াজ রা.-এর জবাবে শুনে রাসূলুল্লাহ স. খুশি হন এবং তার জন্য দুআ করেন।’ এ হাদীস অনুযায়ী প্রথমত কুরআন, দ্বিতীয়ত সুন্নাহ এবং এ দু’য়ের অনুপস্থিতিতে ব্যক্তিগত ইজতিহাদের ভিত্তিতে রায় দানের ব্যবস্থা স্বীকৃত হয়।
আইন প্রণয়নের ভূমিকা বিষয়ক অপর একটি কুরআনের বাণী হলো : ‘হে নবী, আমরা এই কিতাবকে সত্যতা সহকারে আপনার উপর নাযিল করেছি যাতে আল্লাহ্র ইচ্ছানুযায়ী আপনি মানুষের মাঝে ফায়সালা করতে পারেন।’ রাসূলুল্লাহ স. কর্তৃক প্রণীত এবং তাঁর রায় মেনে নেয়া বাধ্যতামূলক। বিশর নামীয় এক মুসলিম এবং এক ইয়াহুদী রাসূলুল্লাহর আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। মামলার রায় ইয়াহুদীর পক্ষে যাওয়ায় মুসলিম ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হলো এবং উমর রা.এর নিকট অভিযোগ আকারে পেশ করলো। উমর রা. তা শোনার পর অসন্তুষ্ট হলেন এবং বিশরকে হত্যা করলেন। কেসটি রাসূলুল্লাহ্র নিকট পেশ করা হলে তিনি উমরকে ডেকে পাঠালেন। উমর বললেন, হে আল্লাহ্র নবী! লোকটি মুসলিম বলে দাবি করে অথচ আপনার দেয়া বিচারের রায় মেনে নিতে রাজী নয়। আল্লাহ্র নবীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ, শ্রেষ্ঠ ন্যায়বিচারক আর কে হতে পারে? এমন লোকের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিৎ। রাসূলুল্লাহ এ বিষয়ে আর কিছু না বলে আল্লাহ্র নির্দেশের অপেক্ষা করলেন। এরি মধ্যে সূরা নিসার ৬৫নং আয়াত নাযিল হলো : ‘এরা কখনো ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তারা আপনার ফায়সালা সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে না নেয়।’
যে ক্ষেত্রে কুরআন শুধু কিছু নীতিমালা দিয়েছে এর বিস্তারিত বিধান দেয়নি এ সকল ক্ষেত্রে সুন্নাহ্র ভূমিকা হচ্ছে স্বাধীনভাবে নতুন আইন বা বিধান প্রণয়ন করা। সুন্নাহ্র এ ভূমিকা ব্যাপক। ইসলাম একটি চির পুরাতন ও চির নতুন দর্শন।এর যাত্রা মানব জাতির ইতিহাসের প্রথম দিন থেকেই, অর্থাৎ আদম আ. থেকে। মুহাম্মদ স.-এর সর্বশেষ নবায়নকর্তা। তাঁর মাধ্যমে ইসলামের একদিকে পূর্ণতা, বিশ্বজনীনতা এবং চিরস্থায়ীত্ব দান করা হয়েছে।যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামীন। এর দ্বারা মহানবীর বিশ্বজনীন হওয়া বুঝায়। আর ইসলামের চিরস্থায়িত্বের বিষয়টি এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যাতে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, ‘আমি তোমাদের জন্য দু’টো জিনিস রেখে যাচ্ছি। আমার পরে ততদিন পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না যতদিন এ দু’টি জিনিসকে তোমরা ধারণ করে রাখতে পারবে। আর তা হলো আল্লাহ্র কিতাব এবং আল্লাহ্র নবীর সুন্নাত।
অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, তার পর আসবে খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ, তার পর আসবে স্বৈরাচারের যুগ। পুনর্বার আবার রাসূলের আদর্শে কায়েম হবে ইসলাম। ইসলামের পুনঃ বিজয়ের সর্বশেষ যুগটি এখনও আসেনি বলেই সকল ইসলামী বিশেষজ্ঞ একমত। অতএব, সুন্নাতে রাসূলের পদ্ধতিতে পুনরায় বিশ্বব্যবস্থা কিয়ামতের পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হবে এটাই হলো এ হাদীসের ভাষ্য। বিশ্ববাসী যতবেশি দীন কায়েমের লক্ষে শ্রম ও মেধা ব্যয় করবে তত দ্রæত ‘আ’লা মিনহাজিন্নবুয়া’ নববী আলোয় পৃথিবী রঙিত হবে, ইনশাআল্লাহ্।
যে কুরআন ও হাদীসের অনুসরণ মুসলিমদের ধ্বংস থেকে রক্ষা করবে সে কুরআন ও হাদীস বা সুন্নাহ সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে, এর যাত্রাকাল থেকে নিয়ে অদ্যাবধি ১৪৩৯ হিজরী সন পর্যন্ত এবং পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত তা এ অবস্থায়ই থাকবে। এর নিশ্চয়তা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কুরআনকে নাযিল করেছি আর তার সংরক্ষণের দায়িত্বও আমার।’
যাদের উপর এ কুরআন নাযিল হয়েছে, যারা এর ধারক-বাহক তাদের পরিচয় তারা মুসলিম, তারা আনসারুল্লাহ্, হিজবুল্লাহ্, মোত্তাকী, মুফলিহূন ও মুহসিন। মুসলিম অর্থই হচ্ছে একজন মুসলিমের কাজই হলো দীনের হেফাজত করা, অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, মোত্তাকী হিসেবে তার দায়িত্ব হলো কেবলমাত্র ঐসব কাজই করা যাতে আল্লাহর অনুমোদন আছে আর তা বর্জন করা যাতে তাঁর অনুমোদন নেই। মুফলিহূন হিসেবে একজন মুসলিমই শুধুমাত্র দুনিয়া ও পরকালে সফল ব্যর্থতার গøানী তাকে কখনো স্পর্শ করবে না। আর মুহসিন হিসেবে তার কর্তব্য হলো সব সময় উত্তম ও ন্যায়সংগত কাজ করা মন্দ কাজ পরিহার করা এবং যাবতীয় কাজকর্মকে সর্বোত্তম পদ্ধতিতে সম্পাদন করা।
আল্লাহ্ প্রেমের পূর্বশর্ত হলো নবীর আনুগত্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন, ‘হে নবী, আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসতে চাও তাহলে আমার আনুগত্য কর। তাহলে তিনি তোমাদের ভালবাসবেন এবং অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং চিরস্থায়ী শান্তিময় জান্নাত তোমাদের দান করবেন।’ অতএব আল্লাহ প্রেম, অপরাধ মার্জনা এবং জান্নাত প্রাপ্তির স্বার্থেই সুন্নাতে রাসূল-এর মুসলমানদের সার্বিক জীবনে প্রতিফলিত হওয়া দরকার। রাসূলের সুন্নাহ পালনে শুধু নয়, এর পুনঃরুজ্জীবনও মানবীয় কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ স. বলেন, যে ব্যক্তি ইসলামে একটি সুন্নাহ চালু করবে সে তার সওয়াব পাবে এবং যারা এর অনুসরণ করে সকলের সমপরিমাণ সওয়াবও সে পাবে, ততদিন পর্যন্ত যতদিন এ ভাল সুন্নাতটি জারি থাকে। আল্লাহ্র নবীর সুন্নাহই হচ্ছে মানবতার জন্য অনুসরণীয় মডেল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহ্র রাসূলের মাঝে উত্তম আদর্শ।’ অতএব, মানবতা যে যুগে যে সময়ে থাকবে ঐ সময়ের সুন্নাতে রাসূলের প্রাসঙ্গিকতা অনস্বীকার্যভাবে বিদ্যমান থাকছে ও থাকবে।
স্মরণ রাখতে হবে যে, প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলাম বা সুন্নাতে রাসূল কার্যকর একজন মুসলিমের উপর। অসংখ্য মুসলিম বর্তমান থাকতে সুন্নাতে রাসূল বা ইসলামী অনুশাসন কার্যকর না হওয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না। এখন যা প্রয়োজন তা হলো মুসলিমদের ঈমানকে শাণিত করা। প্রশ্ন হতে পারে ইসলামের স্বর্ণযুগ ছিল উটের যুগ। আর বর্তমানে স্পেস শাটলের যুগ। বিজ্ঞানের গতিময় যুগে সুন্নাতে রাসূলের কার্যকারিতা কি করে খাপ খেতে পারে? এর সংক্ষিপ্ত জবাব হচ্ছে, বিজ্ঞান ইসলামেরই সম্পদ। এর আবিষ্কারের সকল দ্বারে মুসলমানদেরই ছিল সফল পদক্ষেপ। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান যত বেশি উন্নত হবে, ইসলাম বা সুন্নাতে রাসূল বুঝার ক্ষেত্রে এবং তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে তা তত বেশি সহায়ক হবে।
বর্তমান যুগে মানবজাতি জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হলেও নৈতিকতার বিচারে তারা সাধারণ ভাবে পশুত্বের স্তরে নেমে যাচ্ছে। পশুত্ব এবং অজ্ঞতা যত বেশি বৃদ্ধি পায় ইসলামের আবেদনও সেক্ষেত্রে তত বেশি কার্যকর হয়ে থাকে। রাসূলের যুগের জাহেলিয়াত ছিল বিশ্বজনীন। মানবতা ছিল রক্তপিপাসু ও কলহপ্রিয়। এমন মানুষকেই ইসলাম বানিয়েছিল মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত জাতি। সে ইসলাম আজও অবিকৃত। পরশ পাথর এখনো বিদ্যমান, প্রয়োজন শুধু এর সঠিক ও যথার্থ প্রয়োগের। ব্যক্তি, পরিবার ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল স্তরে, তা এখনও প্রয়োগযোগ্য। সুন্নাহ্র বাস্তব প্রয়োগ যত বৃদ্ধি পাবে সমাজ ততোই কল্যাণের দিকে এগিয়ে যাবে।
এটা সন্দেহাতীতভাবে সত্য যে, সুন্নাতুল্লাহ এবং সুন্নাতে রাসূলের গুরুত্ব বুঝা এবং এর সফল বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করছে মানবতার মুক্তি কল্যাণ ও সাফল্য। মানবতার দুর্গতির জন্য দায়ী হচ্ছে অবিশ্বাস, ধর্মহীনতা, অনৈতিকতা, অশ্লীলতা, লাম্পট্য, নীতিহীনতা, অসাধুতা, কামুকতা, অন্যায় অর্জন, ভোগ লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ, পরনিন্দা, অপবাদ প্রবণতা, মিথ্যার বেসাতী, আমানতের খেয়ানত, আত্মম্ভরিতা, অহংকার, দাম্ভিকতা, জবাবদিহিহীনতা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, অপরাধীর পক্ষাবলম্বন করে বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করে অসাধুকে সাধু বানানো ইত্যাদি। সুন্নাতে রাসূল এসব বিশৃংখলার বিরুদ্ধে একটা সফল বিপ্লবের নাম। অতএব সুন্নাতে রাসূলের প্রয়োগই পারে মানবতাকে এ দুর্নাম থেকে রক্ষা করে, প্রকৃত মানুষের স্তরে পৌছে দিতে। দুঃখজনক হচ্ছে, ক্ষতি যেমন রাতারাতি হয়নি, তেমনি এর থেকে রক্ষা পাওয়াও রাতারাতি সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী বাস্তবমুখী কর্মপরিকল্পনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুন্নাতে রসূল (সঃ)
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ