Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাসদের আসন দখলে মরিয়া আ.লীগ, কৌশলী বিএনপি, তরুণ ও নতুন মুখের সম্ভাবনা

বগুড়া ৪ : কাহালু-নন্দীগ্রামে বইছে নির্বাচনী হাওয়া

বগুড়া থেকে মহসিন রাজু | প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশের মতো বগুড়া-৪ আসন দখলে থাকা বর্তমান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (এরশাদ), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সবাই এখন মাঠ গোছাতে ব্যস্ত। প্রত্যেক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা তৈরিতে কাজ করছে দলের হাইকমান্ড। ইতোমধ্যেই আসনে তিনজন করে ক্লিন ইমেজধারী ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা নেতাদের বেছে নিয়ে মনোনয়নের খসড়া তালিকা তৈরিতে কাজ করছেন প্রতিটি রাজনৈতিক দল। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের দখলে থাকা এই আসন দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে কৌশলে মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছে বিএনপি। আবার জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রাথীরা পরপর ৩ দফায় জামানত হারিয়েছে বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। যেকারণে দলের অস্তিত্ব রক্ষায় নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে নির্বাচনী এলাকায়।
এই সংসদীয় আসনের রেকর্ডে দেখা যায় ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসন (কাহালু-নন্দীগ্রাম) এলাকা থেকে আজিজুল হক মোল্লা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৪ সালে মারা গেলে ওই আসনের উপ-নির্বাচনে তার পুত্র ডা. জিয়াউল হক মোল্লা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে মাত্র ১৫ দিনের জন্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে ডা. জিয়াউল হক মোল্লা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু গত ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লা বিএনপির সংস্কারপন্থীদের সাথে যোগ দেওয়ায় গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে ওই আসনে বিএনপি নেতা ইঞ্জিঃ মোস্তফা আলী মুকুল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাবেক এমপি জিয়াউল হক মোল্লা বিএনপির সংস্কারপন্থী হওয়ার পর থেকে অদ্যবধী নির্বাচনী এলাকায় নেই বলে জানিয়েছে দলীয় নেতাকর্মীরা।
এদিকে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি ঘেঁষা এই আসন দখল করে নিয়েছে জাসদ। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও প্রতিদ্ব›িদ্বতার ভোটযুদ্ধে নামে জাসদ ও জাতীয় পার্টি। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধিন ১৪ দলের শরীক জাসদের দখলে আসে বগুড়া-৪ আসন। লজ্জাজনক ভোটে পরাজিত হন জাতীয় পার্টির প্রাথী হাজী নুরুল আমিন বাচ্চু। আসনটি জাসদের দখলে যাবার পর থেকেই মাঠ ছেড়েছেন বিএনপির সাবেক এমপি মোস্তফা আলী মুকুল।
জাসদের আসন দখলের চেষ্টায় মনোনয়ন যুদ্ধে ও ভোটারদের জনপ্রিয়তা কাড়তে মাঠে নেমেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি আলহাজ্ব মমতাজ উদ্দিন। নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলায় দফায় দফায় সাংগঠনিক কার্যক্রম, পথসভা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হচ্ছেন আওয়ামী লীগের এই মনোনয়ন প্রত্যাশী।
অন্যদিকে, নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের প্রতিশ্রæতিপূরণ ও ব্যাপক উন্নয়ন করায় ১৪ দল থেকে মনোনয়নে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন বলে প্রত্যাশা করছেন বর্তমান (জাসদ) এমপি রেজাউল করিম তানসেন। তিনি ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন এবং গণভিত্তিও গড়ে তুলেছেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত।
বগুড়া-৪ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উন্নয়ন তথা শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে দফায় দফায় গনসংযোগ, ওঠান বৈঠক, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ছুটে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব অধ্যাপক আহছানুল হক।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক এড. ইউনুছ আলী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ, কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র হেলাল উদ্দিন কবিরাজ, তার ছোট ভাই আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিন কবিরাজ মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে, ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে জাসদের প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেনের কাছে লজ্জাজনক ভোটে পরাজিত জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী হাজী নুরুল আমীন বাচ্চু জেলায় পার্টির কতিপয় নেতার সাথে যোগাযোগ করে আবারো দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী শক্তিশালী না থাকায় দুই উপজেলায় দলটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ঠিক সেই মুহুর্তে দফায় দফায় গণসংযোগ, দলীয় কর্মসূচি ও তৃনমূলে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও বগুড়া জেলা যুব সংহতির সভাপতি শাহীন মোস্তফা কামাল ফারুক। দুই উপজেলায় দলের অস্তিত্ব রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন জাপার এই নেতা।
পাশপাশি জাপার কেন্দ্রীয় নেতা সাংবাদিক আব্দুস সালাম বাবু, জাপানেতা হাজী আছির উদ্দিন কবিরাজ, প্রভাষক মাসুদ পারভেজ রানা ও প্রভাষক আমজাদ হোসেন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
অপরদিকে, বিএনপি ঘেষা এই আসন পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কোনঠাসা হয়ে থাকা রাজনৈতিক দল বিএনপি। অনেকটা কৌশল অবলম্বন করছে দলটি। গণসংযোগ, নিয়মিত দলীয় কর্মসূচি ও মাঠ গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন, বগুড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও নন্দীগ্রাম উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাডভোকেট রাফী পান্না। বিএনপির ধর্মীয় সম্পাদক ও জেলা ওলামা দলের দলের সাধারন সম্পাদক মাওলানা ফজলে রাব্বী তোহা কৌশলে মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছেন, দলের তৃণমুলে এই নেতার গ্রহনযোগ্যতা ব্যাপক বলে জানা গেছে। সুপ্রিম কোর্ট শাখা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য ও জিয়া ফাউন্ডেশন (লিগ্যাল সেল) কো-অডিনেটর এডভোকেট গোলাম আকতার জাকির নিজেকে বিএনপির যোগ্য প্রার্থী দাবি করেই মাঠ গোছাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এছাড়া গণসংযোগে মাঠে রয়েছেন জামায়াত নেতা ও কাহালু উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা তায়েব আলী এবং নন্দীগ্রাম উপজেলার নুন্দহ মাদ্রাসার সহকারি অধ্যাপক আলহাজ্ব মাওলানা ইদ্রিস আলী।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে জেলা বিএনপি নেতা ও জেলা শ্রমিক দলের উপদেষ্টা আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন, নন্দীগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক গোলাম রব্বানী ও পৌর বিএনপির সভাপতি আহসান বিপ্লব রহিম।
সুত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলো তিনটি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব¡ দিচ্ছেন। তৃনমূলে জনপ্রিয়তা, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য। বিতর্কিত নন, এমন প্রার্থীকেই তালিকায় রাখা হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত তরুণদেরই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাসদ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ