Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নির্বাচনের সাত দিন আগে সেনা মোতায়েনের দাবি

গাজীপুর ও খুলনা নির্বাচন নিয়ে ইসিতে বিএনপির ৬ দফা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 

আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সাত দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। ভোটারদের আস্থা ফেরাতে সেনা মোতায়েন জরুরি বলে জানিয়েছে দলটি। পাশাপাশি গাজীপুরের বর্তমান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে প্রত্যাহারসহ সিভিল প্রশাসন ও পুলিশের চিহ্নিত দলবাজ ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বদলীপূর্বক নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল (মঙ্গলবার) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাসহ নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির এক প্রতিনিধিদল এই দাবি জানায়।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী ইসির সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএনপি সেনা মোতায়েন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদকে প্রত্যাহারসহ ছয় দফা দাবি জানায়। এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে খালেদা জিয়ার মুক্ত থাকার ওপর জোর দেন বিএনপির নেতারা। বিএনপির ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এ সময় অন্যান্য কমিশনার ছাড়াও নির্বাচন কমিশন সচিব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহামুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সিইসি ৮ এপ্রিল সেনা মোতায়েন নিয়ে কথা বলেন। ওই দিন এক বৈঠক শেষে সিইসি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, অতীতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও সেনা মোতায়েন হতে পারে। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা উচিত। তবে স্থানীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন আমরা একেবারেই চাই না। গতকাল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা নেই ইসির।
এদিকে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিশনের সঙ্গে বিএনপি বৈঠক করেছে। দলের মূল দাবি, দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সাত দিন আগে যেন সেনা মোতায়েন করা হয়। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন না। নির্বাচনের ওপর ভোটারদের আস্থা নেই। সেনা মোতায়েন হলে এই নির্বাচনে ভোটারদের আস্থা ফিরে আসবে।
এই নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিরোধিতার কথা জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতার কথা জানানো হয়েছে কমিশনকে। ইভিএম প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। যেসব দেশের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, সেসব দেশেও এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বৈঠকে দুই নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিশনের নির্দেশে বিভাগীয় কমিশনারদের নেতৃত্বে দুটি সমন্বয় কমিটি গঠন নিয়েও প্রশ্ন তোলে বিএনপি। মোশাররফ জানান, আইনের কোন ধারায় কোন এখতিয়ারে ইসি এই কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। কারণ, অতীতে এ ধরনের কমিটি গঠনের উদাহরণ নেই।
সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে মানুষের মাঝে উৎকণ্ঠা রয়েছে। সবাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। জাতীয় নির্বাচনের আগে দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, এ দুটি নির্বাচনে তার ইঙ্গিত থাকবে।
মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, আমরা বলেছি, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য খালেদা জিয়াকে মুক্ত থাকতে হবে। বিএনপি ও ২০ দল নির্বাচনে অংশ না নিলে তা অংশগ্রহণমূলক হবে না। ভোটকেন্দ্রগুলোয় আনসার ও ভিডিপি মোতায়েনে সতর্ক থাকতে ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। নিজ এলাকায় যেন ওই বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব না পান, সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কমিউনিটি পুলিশের দায়িত্ব পালনকারীদের নির্দিষ্ট পোশাকের ব্যবস্থা করতে ইসিকে বলেছে বিএনপি। নির্বাচনী প্রচারে সমান সুযোগ সৃষ্টি করারও দাবি জানিয়েছে দলটি।
বিএনপির ৬ দফা: বিএনপির পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটের আগের দিন রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তিকরণ, ভোট ডাকাতি, ব্যালট পেপার ছিনতাই, সশস্ত্র ক্যাডারদের অস্ত্রের মহড়া, ভোটকেন্দ্র দখল করে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল দেয়ার বিষয় তুলে ধরা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে নৌকায় ভোট চাওয়া আচরণবিধিমালার সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন এবং নির্বাচনী মাঠে সকল দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা, আইন ও বিধি-বিধানের কঠোর এবং নিরপেক্ষ প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের সামনে সুযোগের কথাও বলা হয়। এই প্রেক্ষিতে বিএনপির পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে-
৭ দিন আগে সেনা মোতায়েন: গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ৭ দিন আগে থেকেই নির্বাচনী এলাকায় টহলসহ প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে অবশ্যই সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। গাজীপুর জেলায় বর্তমানে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ২০১৬ সালে গাজীপুরের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় একটি বিশেষ দলের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণের কারণে তাকে একবার প্রত্যাহার করা হয়েছিলো। তাছাড়া গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী এলাকায় কর্মরত হারুন অর রশিদের মতো সিভিল প্রশাসন ও পুলিশের চিহ্নিত দলবাজ ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বদলী করে নিরপেক্ষ পেশাদার কর্মকর্তা পদায়ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে দৃশ্যমানভাবে নাম ও র‌্যাঙ্ক ব্যাচসহ ইউনিফর্ম পরে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্য সাদা পোষাকে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তি প্রদান: গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতার সকল নেতা-কর্মীদের অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে। এছাড়া বানোয়াট মামলায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জড়ানো এবং অজ্ঞাত সংখ্যক আসামীর ছদ্বাবরণে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
সমান প্রচারণার সুযোগ: নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় সকল দল ও প্রার্থীর ক্ষেত্রে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। কোন অযুহাতেই কোন দলের নেতা-কর্মী এবং কোন প্রার্থীর সমর্থকদের হয়রানি করা যাবেনা। প্রতিটি সিটি কর্পোরেশনে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, জেলা নির্বাচন অফিসারের অফিসে একটি করে ‘অভিযোগ কেন্দ্র’ চালু করতে হবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অভিযোগ প্রাপ্তির সর্বোচ্চ ১২ ঘন্টার মধ্যে তা নিষ্পত্তি করে অভিযোগকারীকে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
আনসার-ভিডিপি নিয়োগে সতর্কতা: ভোটকেন্দ্রে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের মোতায়নের ক্ষেত্রে তাঁর নিজস্ব ওয়ার্ড বা তিনি নিজে যে ভোটকেন্দ্রের ভোটার সেখানে মোতায়েন করা যাবে না।
ইভিএম ব্যবহার নয়: নির্বাচনে ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহার করা যাবে না। পরীক্ষামূলক বা অন্য কোন অযুহাতে কোনভাবেই না। ভোটের আগের রাতে ভোট কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপারের নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের আগের দিন থেকে ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাহাকেও প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না।
বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে সমন্বয় কমিটি বাতিল: নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসারকে সহায়তা করার নামে সমন্বয় কমিটি গঠনের আইনগত কোন সুযোগ নেই এবং এইরুপ সমন্বয় কমিটি গঠনের কোন নজিরও নেই। অথচ ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত এই সমন্বয় কমিটি নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অতএব, আইন বহির্ভূত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই সমন্বয় কমিটি অবশ্যই বাতিল করতে হবে। ###

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ