Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কোটা সংস্কারের প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে : প্রজ্ঞাপন জারি শিগগিরই

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে শিগগিরই একটি কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার। আগামী ২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর এ কমিটি গঠনে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলে জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শামীম রেজা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটাপদ্ধতি বাতিল করেছেন। এখন গেজেটের বিষয়। কিন্তু কোনো কারণে যদি বিলম্বিত করা হয় বা করানো হয় তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক কিছু থাকবে না।
চলমান কোটা সংস্কার ইস্যুর বিষয়টি তথ্যগতভাবে মোকাবেলা করতে ইতোমধ্যে একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলা কোটা বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদের বিধান। কাজেই কোটাভিত্তিক নিয়োগের বিদ্যমান নীতিমালা হতে বিচ্যুত হলে সংবিধান আরোপিত মূলনীতি ক্ষুণœ হয়। অর্থাৎ জেলা কোটা পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ না করা সংবিধান লঙ্ঘন করারই শামিল। জেলা কোটা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা বা অন্য কোনো কোটা সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে জেলা কোটা বাতিল না হওয়ার সম্ভব না রয়েছে। এটি বাতিল হলে দেশের বিভিন্ন অনগ্রসর জেলার নাগরিকদের সমতাভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধান আরোপিত মূলনীতি ক্ষুণœ হবে। জনশাসন মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কারের যৌক্তিকতা তুলে প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করা হয়েছে। বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও তা আজও করতে পারেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে শিগগিরই একটি কমিটি গঠন হবে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, আগামী ২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর এ কমিটি গঠন করা হতে পারে। তার নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ইনকিলাবকে বলেন, কোটা পদ্ধতি তুলে দেয়ার বিষয়ে গেজেটের কোনো অগ্রগতি নেই। প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন যে এখনই ঘোষণা দাও, আমরা দু’দিনেই দিয়ে দিতে পারব। কোটা পদ্ধতি সংস্কারে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের অগ্রগতি এখনও নেই।
জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের বিষয়ে বলেছেন, কোটা নিয়ে যখন এত কিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই। কোটা যদি দরকার হয় ক্যাবিনেট সেক্রেটারি তো আছেন। আমি তো তাকে বলেই দিয়েছি। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসে তারা কাজ করবেন। সেটা তারা দেখবেন। কোটা বাতিলের কথা বললেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে করা হবে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর আন্দোলন স্থগিত করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এদিকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির যৌক্তিকতা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদ। এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। প্রতিবেদনে বলা হয়Ñ দেশের বিভিন্ন অনগ্রসর জেলার নাগরিকদের প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োগ করতে সমান সুযোগ দিতে ১৯৭২ সালের কোটাভিত্তিক পদ সংরক্ষণের নীতিমালা জারি করা হয়। জেলা কোটা বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদের বিধান। কাজেই কোটাভিত্তিক নিয়োগের বিদ্যমান নীতিমালা হতে বিচ্যুত হলে সংবিধান আরোপিত মূলনীতি ক্ষুণœ হয়। সংবিধানের ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হইতে। সংবিধান সংশোধন ছাড়া যদি জেলা কোটা বাদ দেয়া হলে তা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল হবে। জেলা কোটা বাতিলের আগে সংবিধান সংশোধন করে সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর বলেন, আমরা কোটা সংস্কারের কথা বলেছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
এ বিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কোটা সংস্কারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা আসেনি। সংসদ সচিবালয় বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তারা কোনো লিখিত নির্দেশনা পাননি। ফলে সরকারের এ দুটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কোটা সংস্কারের কাজ শুরু করেনি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সংক্রান্ত কাজ কিছুটা এগিয়ে রেখেছেন। তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে একটি প্রস্তাবিত কমিটির খসড়া প্রস্তুত করে রেখেছেন। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্মকমিশনসহ (পিএসসি) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কয়েকজন শিক্ষাবিদ এবং সাবেক সচিবদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। এই সফর শেষে আগামী ২৩ এপ্রিল তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি দেশে ফেরার পর কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কোটা পদ্ধতি চালু হয়েছিল ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। ওই সময় মেধা কোটা ছিল ২০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, নির্যাতিত মহিলা কোটা ১০ শতাংশ, জেলা বা বিভাগ কোটা ছিল ৪০ শতাংশ। পরে ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ কোটা পদ্ধতি সংশোধন করা হয়। এতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর জন্য এক ধরনের কোটা পদ্ধতি এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জন্য আরেক ধরনের কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর জন্য জেলাবহির্ভূত মেধা কোটা রাখা হয় ৪৫ শতাংশ। মুক্তিযোদ্ধা এবং উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যাদের জন্য ৩০ শতাংশ, মহিলা কোটা ১০, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ৫ এবং জেলার সাধারণ প্রার্থীদের জন্য ১০ শতাংশ রাখা হয়। অন্যদিকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য এতিম ও শারীরিক প্রতিবন্ধী (জেলা কোটাবহির্ভূত) ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা এবং উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যাদের জন্য ৩০ শতাংশ, মহিলা কোটা ১৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা কোটা ১০ এবং অবশিষ্ট (জেলার সাধারণ প্রার্থীদের জন্য) ৩০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর নিয়োগের ক্ষেত্রে শতভাগই কোটার সুযোগ রাখা হয়। এরপর ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ধারিত ৩০ শতাংশের জন্য উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে পুত্র-কন্যার পুত্র-কন্যা (নাতি-নাতনি) দিয়ে পূরণের নিয়ম করা হয়। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটগুলোর মধ্যে যে কোনো কোটায় পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রার্থী না পাওয়া গেলে সেই কোটা থেকে ১ শতাংশ যোগ্য প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ করার বিধান করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ