Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইয়াবার বড় চালান ধরা পড়লেও ধরা পড়ছে না ব্যবসায়ীরা

ছেড়াদ্বীপে ২০ কোটি টাকার ইয়াবা ধরা পড়লেও ধরা পড়েনি মাদক ব্যবসায়ীরা

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিপুল পরিমান বা বড় ধরনের ইয়াবার চালান ধরা পড়লেও ধরা পড়ছে না জড়িত মাদক ব্যবসায়ীরা। পরিত্যক্ত বা মাদক ব্যবসায়ীরা চলে যাওয়ার পরই ধরা পড়ছে এসব ইয়াবার চালান। ফলে লাখ লাখ ইয়াবা চালানের নেপথ্যে জড়িতরা থেকে যাচ্ছে অধরা। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনী টেকনাফ পূর্ব জোন অভিযানে চালিয়ে ছেড়াদ্বীপের নিকটবর্তী সমুদ্র এলাকা থেকে ৪ লক্ষ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করে। গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কোস্ট গার্ড জানায়, এসময় সেন্টমার্টিন্স এর দক্ষিণ সাগরে সন্দেহজনক একটি কাঠের বোটকে কোস্ট গার্ডের সদস্যরা থামার সংকেত দিলে বোটটি না থামিয়ে সেন্টমার্টিন্স এর ছেড়াদ্বীপে বীচিং করে এবং বোটটি রেখে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই বোটটি তল্লাশি করে তিনটি বস্তা থেকে ৪ লাখ পিচ ইয়াবা পরিত্যাক্ত অবস্থায় জব্দ করা হয়। বোটটির তলা ফেটে যাওয়ায় বোটটিকে পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়। জব্দকৃত ইয়াবা ট্যাবলেট গুলোর আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় বিশ কোটি টাকা। জব্দকৃত ইয়াবাগুলো পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য টেকনাফ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে কখনো ছাড় দেয়া হয় না। মাদক অল্প হউক আর বেশি জড়িতদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। মাদক উদ্ধার ও এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে র‌্যাব সারাদেশে সক্রিয় রয়েছে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দেশের সীমান্ত ও নদী পথে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে অভিযান চালানোর সময় ইয়াবা রেখে মাদক ব্যবসায়ীরা চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। মাদক ব্যবসায়ীরা দ্রæত ও নিরাপদে পালাতে এ কাজ করে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হয় না। মাদক ব্যবসায়ী ছাড়া যেসব মাদক উদ্ধার করা হয় পরে তা আদালতের আদেশে ধ্বংস করা হয়।
সূত্র জানায়, সরকার প্রধান থেকে শুরু করে দেশের সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইয়াবা প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও নেশার ভয়ানক ছোবল ক্রেজি ড্রাগ হিসেবে পরিচিত ছোট্ট আকারের এ বড়ি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্ধার হওয়া ইয়াবা বড়ির সংখ্যা বছরে প্রায় ৮ কোটিতে এসে ঠেকেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থল ও নৌপথে ইয়াবার পাচার হচ্ছে। দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন ইয়াবার বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিজিবি এসব চালানের সাথে যাদের গ্রেফতার করছে তারা বহনকারী। কিন্তু নেপথ্যেই থেকে যাচ্ছে ইয়াবা নামক মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এই গডফাদাররা। এসব গডফাদাররা দীর্ঘদিন ধরে ধরাছোয়ার বাইরে। ইয়াবার উৎসভূমি হিসেবে পরিচিত মিয়ানমার। তবে বাংলাদেশেও এখন এটা উৎপাদন হচ্ছে।
জানা গেছে, ইয়াবা বড়ির পেছনে মাদকসেবীদের বছরে যে খরচ, তা বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বার্ষিক বাজেটের প্রায় দ্বিগুণ (২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিজিবির বাজেট ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা)। আর পুলিশের বাজেটের প্রায় অর্ধেক। আর্থিক, সামাজিক, মানবিক নানাভাবে ইয়াবার আগ্রাসন দেশজুড়ে ছড়ালেও তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ খুব সামান্য। ইয়াবা বন্ধে মাদকদ্রব্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযান ছাড়া আর কোনো তৎপরতা নেই। অন্য বাহিনীগুলোর তৎপরতা শুধু উদ্ধারের ভেতরেই সীমাবদ্ধ।
ইয়াবা পাচারের রুটগুলো
নৌপথেই ইয়াবা এখন বেশি পাচার হচ্ছে। এসব রুটগুলো হলো- মিয়ানমারের বিভিন্ন কারখানায় প্রস্তুতকৃত ইয়াবা উৎপাদনের পর অধিকাংশই ফয়েজীপাড়া, মগপাড়া, চকপ্রু, তমব্রু, ইয়াৎ্গুন ও মংডুর সীমান্তবর্তী এলাকা যেমন সিকদারপাড়া, ফয়েজীপাড়া, মগপাড়া, সুদাপাড়া, উকিলপাড়া, গজাবিল, মাস্টারপাড়া, কাদিরবিল, ধুনাপাড়া, ম্যাংগালাসহ বিভিন্ন এলাকার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের টেকনাফের বিভিন্ন রুটে আসে। টেকনাফের এসব রুটগুলো হলো শাহপরীরদ্বীপের মিস্ত্রীপাড়া, জেটিঘাট, জালিয়াপাড়া, টেকনাফ সদরের মৌলভীপাড়া, নাজিরপাড়া, টেকনাফ পৌরসভার ১ নম্বর স্লুইস গেইট, আড়াই নম্বর স্লুইস গেইট, পুরাতন ট্রানজিটঘাট, নাইট্যাংপাড়া, হীলার জাদিমুরা, নয়াপাড়া, মৌচনী, লেদা, রঙ্গীখালীর এস কে আনোয়ারের মাছের প্রজেক্ট, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া, ফুলেরডেইল, কাস্টমঘাট, ওয়াবরাং, মৌলভীবাজার, হোয়াইক্যং এর খাবাংখালী, মিনাবাজার, ঝিমংখালী, কাঞ্জরপাড়া, লম্বাবিল, উনছিপ্রাং, উলুবনিয়া, টেকনাফের কাটাবনিয়া, খুরেরমুখ, মুন্ডারডেইল, কচুবনিয়া, মহেশখালীয়াপাড়া, লেঙ্গুরবিল, লম্বরী, রাজাছড়া, শামলাপুর প্রমুখ। এসব রুটসহ সাগর উপকূলীয় এলাকা এবং উখিয়া ও বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট ও নাথ নদীর দিয়ে বাণিজ্যিক পন্যবাহী ইঞ্জিন ট্রলার, বোটে ইয়াবার ছোট/বড় চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বঙ্গোপসাগর দিয়ে মাছ ধরার ট্রলারের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলার মহেশকালী ও কুতুবদিয়া সমুদ্র এলাকা হয়ে সাগর/নদী পথে চট্টগ্রাম, বরিশাল, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মাছুয়া রকেট ঘাট, তুষখালী লঞ্চ ঘাট ও ভান্ডারিয়ার তেলিখালী, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা ও ঢাকার সদরঘাটসহ বিভিন্ন নদী/সাগর তীরবর্তী জেলাসমূহে বড় বড় চালান পাচার হয়ে আসছে। স্থলপথগুলো হলো, টেকনাফ, কক্সবাজার মহাসড়কের টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজার সদর পয়েন্ট হয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হয় ইয়াবা। পরবর্তীতে ইয়াবা সড়ক ও আকাশ পথে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইয়াবা

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ