Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গ্যাস সঙ্কট কাটাতে এলএনজি

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

গ্যাস সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশের শিল্প বিনিয়োগ ব্যহত হচ্ছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিল্পখাতে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও জাতীয় গ্রীডে গ্যাসের সরবরাহ অপ্রতুল হওয়ায় এসব শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেয়া যাচ্ছেনা। এহেন বাস্তবতায় মাতারবাড়িতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মান এবং বিদেশ থেকে লিকুইড গ্যাস আমদানী করে জাতীয় গ্রীডে যোগান দিয়ে চাহিদা পূরণে সরকারের উদ্যোগ সময়োপযোগী ও আশাব্যঞ্জক। বেশ কয়েক বছরের পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মান ও পাইপলাইন বসানোর পর ইতিমধ্যে মাতারবাড়ি টার্মিনাল থেকে এলএনজি গ্যাস সরবরাহে সঞ্চালন ব্যবস্থার কারিগরি দিকগুলোও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে মাতারবাড়ি থেকে জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সরবরাহে ইতিমধ্যে ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হলেও পুরো প্রক্রিয়া সমাপ্ত করতে আরো কিছু কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আজ বুধবার কাতার থেকে এলএনজি বাহী বিশেষায়িত জাহাজ দেশে পৌছাবে বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে আগামী মাসের প্রথমার্ধের মধ্যেই মাতার বাড়ি থেকে জাতীয় গ্রীডে এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে। দৈনিক গড়ে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস এই পাইপলাইনে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হলে দেশে চলমান গ্যাস সংকট অনেকটাই কেটে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
গত কয়েক দশক ধরে দেশের গ্যাস সম্পদ নিয়ে নানামুখী কথাবার্তা এবং ভিন্নমুখী বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে। ‘দেশ গ্যাসের উপর ভাসছে’ বলে এক সময় শোনা গেলেও গ্যাস সংকটের শুরুও ঠিক তখন থেকেই। বিদ্যুত উৎপাদনে ব্যাপক হারে গ্যাস নির্ভরতার কারণে জাতীয় গ্রীডে দ্রæত গ্যাসের চাপ কমে আসে। গ্যাস নির্ভর বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ঠিক রাখতে কখনো কখনো গ্যাস নির্ভর সার কারখানাও বন্ধ রাখতে হয়েছে। আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত গ্যাস সংকটের ফলে শিল্প বিনিয়োগ বাধাপ্রাপ্ত হয়। পাশষাপাশি শিল্পখাতে হাজার হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগের ফলে এই মূল্যবান সম্পদের একটি বড় অংশই অপচয়-লুটপাটের শিকার হয়। দেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং অর্থনৈতিক বিকাশের ধারা যখন গ্যাস সংকটের কারণে অচলাবস্থায় পড়তে শুরু করেছে ঠিক তখন এলএনজি আমদানীর মাধ্যমে চাহিদা পুরণের পরিকল্পনাটি ছিল সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত উদ্যোগ। বিশেষত: গ্যাসের আভ্যন্তরীন মুজদ শেষ হওয়ার আগেই এলএনজি আমদানীর মাধ্যমে জাতীয় চাহিদা ও সরবরাহ নিশ্চিত ও স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নতুন গতি সঞ্চার করতে পারে। আমদানীকৃত এলএনজির মাধ্যমে জাতীয় গ্রীডে প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘণফুট গ্যাস সরবরাহের ফলে সারাদেশেই গ্যাসের সঞ্চালন লাইনে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষত: গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ না থাকায় নতুন গড়ে ওঠা যে সব আবাসিক এলাকায় গ্যাস সংযোগ না থাকায় এ সেক্টরের শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছিল সেখানে নতুন গতি এনে দিতে পারে। দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের পরও দেশের চাহিদার ঘাটতি থেকে যাবে। এমতাবস্থায় জ্বালানীর দেশীয় উৎস উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই।
এলএনজি আমাদানী করে গ্যাসের জরুরী চাহিদা পূরণ ও শিল্পবিনিয়োগের পথ অবারিত করার উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও ব্যয়বহুল এলএনজির কারণে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব দেশের সামগ্রিক উৎপাদন ব্যয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বৃহদাকারের বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মান এবং পুরনো বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোকে মেরামত করার বদলে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে চাহিদা পূরণে জাতীয় অর্থনীতিতে যে ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে এলএনজি নির্ভর গ্যাস সঞ্চালন ব্যবস্থা দীর্ঘয়িত ও বিস্তৃত হলে সে সংকটকে আরো ঘনীভূত করতে পারে। গ্যাসের জরুরী চাহিদা পূরণে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এলএনজি আমদানী একটি বাস্তবসম্মত উদ্যোগ হলেও দেশের গ্যাস সম্পদের উন্নয়ন এবং আভ্যন্তরীন উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির দিকেই নজর দিতে হবে। বঙ্গোপসাগরের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সম্ভাব্য জ্বালানী সম্পদ আহরণের মাধ্যমে চাহিদা পূরণে জরুরী বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যদিকে দেশীয় কয়লা উত্তোলন এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব হলে বেশী দামে আমদানীকৃত এলএনজির নেতিবাচক দিকগুলো পরিহার করা সম্ভব। জরুরী প্রয়োজনে বাংলাদেশের জ্বালানী খাত আমদানী নির্ভর এলএনজি যুগে প্রবেশ করলেও বিদেশি ঋণে এলএনজি টার্মিনাল নির্মান এবং বেশী দামে এলএনজি আমদানীর কারণে আবারো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হলে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরেক দফা বাড়িয়ে দিবে। তবে গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর মাধ্যমে বাড়তি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বাস্তবায়িত হলে তা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে। শুধু আমদানী ব্যয়ের উপর মূল্য সমন্বয় বা গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির চিন্তা বাদ দিয়ে সিস্টেমলস, দুর্নীতি ও অপচয় রোধ করেও মূল্য সমন্বয় করা যেতে পারে। বেশী দামে কেনা গ্যাসের ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশীয় শিল্প কারখানা যেন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় মার না খায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহবৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগ পরিবেশ ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রতিও নজর দিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্যাস

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন