Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কোটা আন্দোলনে পুলিশের আক্রমণ করার যৌক্তিকতা ছিল না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৮, ৬:৪৪ পিএম

 ‘কোটা আন্দোলনে পুলিশের আক্রমণ করার যৌক্তিকতা ছিল না। এর আগেই সমাধান করা সরকারের দায়িত্ব ছিল। এখন মামলা দিয়ে বিষয়টি আরো জটিল করে তোলা হয়েছে। উপাচার্যের বাসভবনে হামলা নিন্দনীয়। আমরা মনে করি- এই হামলা আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারীদের পক্ষ থেকে আসেনি।’
সোমবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে বন্দুক থেকে সরিয়ে দেশ সেবার সুযোগ করে দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করেছিলেন। তখন সেটি ঠিক ছিল। এখন মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-পৌত্রদের জন্য কোটার দরকার নেই। কারণ সে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীও হতে পারে।’
ক্যাম্পাসে স্থিতিশীল পরিবেশ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতবিনিময় ও আলোচনা সভার আয়োজন করে কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিচালনাকারী ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে তাদের অভিমত তুলে ধরেন।
আলোচনা সভায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দীন খান বলেন, বর্তমানে সত্যিকার রাজনীতি হলে বঙ্গবন্ধুর মতো দেশের কল্যাণে কাজ করতো। যারাই ক্ষমতাই থাকুক তারাই একই কাজ করে। এরকম পরস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম টিকিয়ে রাখতে হবে। নিরাপত্তা ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। হল প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার জন্য উপাচার্যের বাস ভবনের সামনে একটি অভিযোগ বাক্স চালু করতে হবে। সেখানে শিক্ষার্থীরা নামে-বেনামে অভিযোগ দেবে। এক মাস পর তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সামনে উত্থাপন করে অভিযোগগুলোর সুরাহা করতে হবে।
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, কোটা আন্দোলনকে বিএনপি-শিবির কর্তৃক পরিচালিত আন্দোলন মনে করে দমনের চেষ্টা করা হলে সেটি খুবই ভুল করবে। এটিও সত্য যে এই আন্দোলনে শত্রুপক্ষ ঢুকে বিভ্রান্তি তৈরি করে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। যার একটি উদাহরণ ভিসির বাড়িতে আক্রমণ। ভিসিও বলেছেন আক্রমণকারীরা বহিরাতগত। যাদেরকে আটক করা হয়েছে তারাও বহিরাগত। উদোর পিণ্ডি বুদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার জন্য যদি কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীর উপর রাষ্ট্র বা কোনো বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন করা হয়, তাহলে আমরা বরদাশত করব না। আমরা বুক ফুলিয়ে ক্যাম্পাসে চলব, আমরা শিক্ষক-ছাত্র ন্যায়ের পক্ষে।

কোটা নিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, বিশেষ সুবিধা হবে অল্প লোকদের জন্য তাও অল্প সময়ের জন্য প্রযোজ্য হবে। এই কোটা প্রথার সংস্কার করতে হবে। মেরিটের ভিত্তিতে প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এই দাবি নায্য। পৃথিবীর অন্য দেশও মেধার ভিত্তিতে প্রশাসন গড়ার পেছনে অগ্রসর হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি মনে করি মুক্তিযোদ্ধারা কোটার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেনি। বিশেষ পরিস্থিতিতে বন্দুক থেকে সরিয়ে দেশ সেবার সুযোগ করে দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করেছিলেন। তখন সেটি ঠিক ছিল। এখন মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে ও পৌত্রদের জন্য কোটার দরকার নেই। কারণ সে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীও হতে পারে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যারা অস্বচ্ছল তাদের জন্য কোটা সুবিধা দেয়া যেতে পারে। সেটি এক জেনারেশনের জন্য হতে পারে। একবার সুযোগ নেয়ার পর দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া যাবে না। কোটা ১৫ শতাংশের বেশি নয়। বলা হয়ে থাকে কোটাপূরণ করার জন্য লোকা পাওয়া যাচ্ছে না। কোটা নিয়ে সুনির্দিষ্ট নিয়ম করে দিতে এতো দিন লাগছে কেন? এসময় তিনি সংস্কার করে প্রতিবন্ধী কোটা ১ ভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ ভাগ ও নারী কোটা ১০ ভাগ করার পক্ষে মত দেন।
এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, ভাষা বিজ্ঞানের অধ্যাপক সৌরভ সিকদার, অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক প্রমুখ।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ১ মে, ২০১৮, ১০:৪৯ এএম says : 0
    অধ্যাপক আকাশ সাহেবের কথা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এটাই সত্য কথা। একটা ইসলামিক দেশে গাজীরাই (যারা যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়ে ফিরেন) হচ্ছেন দেশের মালিক এবং তারাই দেশকে পরিচালনা করেন এবং গনিমতের মালের মালিক হন। দেশের সংবিধানে মুক্তিযোদ্ধাদের উল্লেখ করে তাদের জন্য সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা রাখা হয়। এখন যেকোন কারনেই হউক না কেন সেটা হয় নি মানে সংবিধানে সেটা রাখা হয়নি। এরই ফলে ১৯৭৮ সালে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছিল যার ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি হয়েছে। আর সেই সময়ে (’৭৫ এর পর) দেশের প্রকৃত শিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধারা বিতারিত হয়ে দেশের বাহিরে ছিল বাকীরা হয় সমঝোতা করে নয়ত মোচলিকা দিয়ে দেশেই অবস্থান করছিল যে জন্য সেই তালিকা নিয়ে যদিও তাদের আপত্তি ছিল কিন্তু করার কিছুই ছিল না। তাই সেসময়ের শাসকরা তাদের মন মত তালিকা প্রণয়ন করে একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছিল এটাই হচ্ছে আসল চিত্র। ধরুন মেজর জলীলের কথা তিনিত একজন নামকরা মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু আসলেই কি তাই??? তাঁর পরবর্তী জীবন নিয়ে বিশ্লেষণ করলেই তাঁর অন্য রূপ জানা যাবে। তাঁর ঘটনাই প্রমান করে মুক্তিযুদ্ধের সময় নামিদামী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও ........ ...... ছিল এবং তারাই ’৭৫ এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম কলঙ্কিত করেছে আর সেট করা হয়েছিল ..............দের সুবিধার্থে এটাই সত্য। এখনও তারা একই কায়দায় কথা বলছে কাজেই এসব মুক্তিযোদ্ধা নামধারীদের জীবন বিশ্লেষন করা এখন বিশেষ প্রয়জন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারন মুক্তিযোদ্ধাদের একধারে বলা হবে দেশের শ্রেষ্ট সন্তান আবার তাদেরকে অপমানীত করা হবে এটা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশের আক্রমণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ