Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অপচয় ও অপব্যয় অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করে

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
এর মাধ্যমে সে শুধু দুনিয়াতে অপমান ও আখিরাতে পাপের অংশীদার হয়। যেমন বিভিন্ন হারাম কাজে বিশেষ করে মদ পানের জন্য, অশ্লীল কাজে, নির্বোধ ব্যক্তিকে, গায়ক-গায়িকা, কৌতুক ও অভিনেতাকে টাকা-পয়সা দেওয়া। যা কবীরা গুনাহ। অপচয় হলো প্রয়োজন ছাড়াই বাড়ী নির্মান করা। অথচ সে ঐ বাড়ীতে বসবাস করবে না। অপচয় হলো খুব দামী বিছানা ক্রয় করা, স্বর্ণ রৌপ্যের আসবাবপত্র ব্যবহার করা। বাড়ীতে বিনা প্রয়োজনে অতিরিক্ত আসবাপত্র রাখা ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন,“ তবে যে ব্যয়ের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট প্রতিদান পাওয়া যায়, জ্ঞানী লোকের নিকট প্রশংসা পাওয়া যায় তা দান হিসাবে গণ্য হবে, অপচয় নয়। এর পরিমান যতই বেশী হোক না কেন। পক্ষান্তরে ইসলাম বহির্ভূতকাজে ব্যয় করা, যার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট পাপী হিসাবে আর জ্ঞানীর নিকট লাঞ্ছিত হিসাবে গণ্য হবে তাই অপচয় ও অপব্যয়, পরিমানে তা যতই কম হোক না কেন।”
নিঃসন্দেহে যেকোন প্রকার ধূমপান ও নেশা গ্রহন মানুষের জন্য বিধ্বংসী মারণাস্ত্র। কিন্তু ধূমপান ও নেশা জাতীয় দ্রব্যের বাজার এত সয়লাব হয়েছে, যে মুসলিম বিশ্বে ও মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ব্যবস্থা হচ্চে এই ধ্বংসাত্মক নেশা জাতীয় দ্রব্যের মাধ্যমে। যদিও ইদানিং স্বাস্থ্য সচেনতার কারণে কিছু দেশে ধূমপানের পরিমান কমে এসেছে, কিন্তু উন্নত দেশ গুলোতে এর পরিমান বেড়েই চলছে। মুসলিম বিশ্ব এর থেকে পিছিয়ে নেই। এক জরিপে দেখা গেছে, এশিয়ার ৩০% লোক ধূমপান করে। যা আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। আরব দেশগুলোতে প্রতি বছর মদের ব্যবসায় ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়।
মানুষ তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহন করলে হজম করতে পারে না। ফলে সে বদহজমীতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অতিভোজনের ফলে ভুরি বেড়ে যায়, চর্বি বৃদ্ধি পায়। এতে শ্বাসকষ্ট হয়। হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা ও থাকে। ডায়রিয়া ও হয়ে থাকে অতিভোজন ফলে। আর এভাবে মানুষ তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। মানসিকভাবেও সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় মানুষ তার অব্যাসবশত অনেক জিনিষ ক্রয় করে থাকে, অথচ এগুলোতে তার কোন কাজ নেই। এর মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজ এমনকি রাষ্ট্রও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উদাহরনস্বরুপ বলা যায় অনেক মানুষ বোিশ দামে লাল আপেল ক্রয় করে অথচ পুষ্টির ক্ষেত্রে লাল আপেলের কোন বিশেষত্ব নেই। আবার বিভিন্ন কোম্পানী তাদের নতুন পণ্য বিক্রির জন্য বিভিন্ন ধোঁকার ও আশ্রয় নেয়, আর মানুষ ও বেশি দাম দিয়ে ক্রয় করে। এর মাধ্যমে ও অপচয় ও অপব্যয় হয়। বিভিন্ন বানিজ্যিক ঘোষনার মাধ্যমে ও মানুষকে ধোঁকায় নিমজ্জিত করা হয়। যেমন ১০টি পন্য একসাথে কিনলে ২০০ টাকার প্রাইজবন্ড। এ ক্ষেত্রে যে ব্যক্তির দশটি পণ্যের প্রয়োজন নেই সেও দশটি পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে অপচয়ে লিপ্ত হয়ে পড়ে। দৈনন্দিন ফ্যাশনের পনিবর্তন ও বিভিন্ন পণ্যের উদ্ভোবনের মাধ্যমে মানুষ সবচেয়ে বেশি অপচয়ে লিপ্ত হচ্ছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এসব দৈনন্দিন পরিবর্তন ফ্যাশন তাদের মনে কোন বিরূপ প্রতিক্রয়া সৃষ্টি করছে না। বরং ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে তারা অংশগ্রহন করে যাচ্ছে। আর তাদের মনে এই বিষ ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, এই সব অত্যাধুনিক আসবাপত্র গ্রহন না করাটা আধুনিকায়ন ওপ্রগতিশীলতায় বিরোধিতা করে পিছনের দিবে ফিরে যাওয়ার নামান্তর। এই ফ্যাশন বেশি আক্রান্ত হয়েছে নারীরা। যেমন নিত্য নতুন গাড়ির চাহিদা, নিত্য নতুন মোবাইল, আরো বিভিন্ন উন্নত আসবাবপত্রের আবিষ্কার হচ্ছে। যার মাধ্যেমে মানুষ অপচয়ের নিমজ্জিত হচ্ছে। বিশেষ করে ধনী শ্রেনীরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য তারা প্রতিনিয়ত এসব জিনিস ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ার পূর্বেই পরিত্যাগ করছে। বস্তুত এগুলো একদিকে অপচয়, অন্যদিকে অবকাঠামো ধ্বংস করা। অপচয় ও অপব্যয়ের যে ক্ষতিকর দিকগুলো রয়েছে সেগুলো ব্যক্তি, পরিবার. সমাজ, রাষ্ট্র,এমনকি আর্ন্তজাতিক ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলে। অযথা খরচ দুনিয়ার ব্যবস্থাপনাকে যেমন বিশৃঙ্খল করে, তেমন ব্যক্তির আখিরাতকেও নষ্ট করে। নিম্নে অপব্যয় ও অপটয়ের কিছু ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হলো, অপচয়ের জন্য মানুষ উপরি ইনকামের প্রতিঝুকে পড়ে। এ জন্য মানুষ অবৈধ পন্থা অবলম্বন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এর মাধ্যমে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র অর্থনৈাতকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নবী স. বলেছেন, ‘প্রত্যেক ঐ শরীর যা হারাম দ্বারা গঠিত, তার জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত।
অপচয়ের মাধ্যমে মানুষ হঠাৎ করে যে কোন কাজ করে বসে, পরিণতির প্রতি চিন্তা করে না। মানুষ তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে না, আর এর পরিণতি হয় অত্যন্ত ভতয়াবহ, যা মানুষকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। আর হিংসা বিদ্বেষে অন্তর পরিপূর্ণ হয়ে যায়। অপচয়ের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর অবাধ্যতায় ব্যবহার করে এবং তার আনুগত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। সে মনে মনেও অনেক পাপের বিষয় গোপন করে রাখে, করন মানুষ পেটপুরে খেলেই সেখানে শয়তান অবস্থান গ্রহন করে। এ জন্য নবী স. বকলেছেন: আদম সন্তান তার পেটের তুলনায় অন্য কোন খারাপ পাত্র ভর্তি করে না। মানুষের জন্য তো কয়েক লোকমা খাদ্যই যথেষ্ট, যা তার মেরুদÐ সোজা করে রাখে। আর যদি একান্তই প্রয়োজন হয়, তাহলে পাকস্থলীর এক- তৃতীয়াংশ খাদ্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয় আর এক-তৃতীয়াংশ নিশ্বাসের জন্য রাখবে।” পরিবেশের অবক্ষয়ের জন্য অপচয় অন্যতম প্রধান দায়ী। অপচয় বিভিন্ন প্রকার হলেও এর ক্ষতিকর প্রভাব একই, আর তা হল ক্ষেতে-খামারে ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের চরম অধঃপতন। সৌখিনতা মানুষকে বিলাসী করে তোলে, যা মানুষের খারাপ কাজে অগ্রগামী করে। সে সংগ্রামে ও ত্যাগের মানসিকতা পরিত্যাগ করে। যা মূলত অপচয়ের ফলাফল। অপচয় হল মূলত প্রবৃত্তির অনুসরণ। প্রবৃত্তি যা আদেশ করে সে তাই করে । প্রবৃত্তি যা নিষেদ করে তা সে করে না। এক্ষেত্রে আল্লাহর এই বাণীর অনুসরণই বুদ্ধিমানে কাজ, আর তুমি অপব্যয় করো না। অপচয়ের মাধ্যমে মানুষ অন্যদের প্রতি যতœহীন হয়ে পড়ে। তবে সে তখনই টের পায় যখন সে সংকীর্ণতার সম্মুখীন হয়। যেমন ইউসুফ আ. থেকে বর্ণিত আছে, তাকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, আপনি তো কখনো পরিতৃপ্ত হয়ে খান না? তিনি বললেন, আমি যদি পরিতৃপ্ত হয়ে খাই তাহলে ক্ষুধা কী জ্বালা তা আমি ভুলে যাব। অপচয়কারী তো আল্লাহর নিয়ামত সম্পর্কে ভুলে থাকে, সে কিভাবে অন্যদের প্রতি গুরুত্ব দিবে?
মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে পানাহারের বিষয়টি পুরাতন। পানাহার-এর বিষয়ে কুরআন, সুন্নাহ, ফিকহ্-এর বিধানই মুসলিমদের অনুসরণ করতে হবে। এমনকি ফিকহের কিতাবগুলোতে খাদ্য ও পানীয়ের জন্য আলাদা করে অধ্যায় রচিত হয়েছে। সেখানে হারাম খাদ্য নিষেদ করা হয়েছে, খাদ্যের আদব রক্ষা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান যুগে পানাহার অতিভোজন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। আর এভাবেই খাদ্য পানীয়ের কোম্পানীগুলো অর্থ ধ্বংস করে চলছে। অতিভোজনের জন্য বিভিন্ন হোটেলে রেষ্টুরেন্ট খোলা হচ্ছে। দুদিন পর নানা রকমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। বস্তবাদী ধ্যান-ধারণায় পুষ্ট লোকদের অন্ধ অনুকরনের পিছনে মুসলিমরা ও ছুটে চলছে। অধিকাংশ মানুষের জীবনই অনুষ্টান ও পেক্ষাপটে অপচয় করাটাই অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। এমনকি আমাদের অনুষ্ঠানগুলো ব্যয়বহুল আর আমাদের রমজান মাস ইবাদত ও তাহজ্জুদের পরিবর্তে অপচয়ের মৌসুমে পরিণত হয়েছে।
মানুষ তার জীবনে চলার পথে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বসমূহ পালন করে থাকে। যেমন, আল্লাহর ইবাদত, পৃথীবি বসবাসযোগ্য করে গড়ে তোলা ও সেখানে কল্যান ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত করা, এজন্যই সে খাদ্যের প্রতি মুখাপেক্ষী। যাতে করে সে বড় হয়ে জীবন ধারণ করতে পারে চলাফেরা ও কাজ কর্ম করতে পারে। এ জন্য সে পানীর প্রয়োজন বোধ করে। যেহেতু পানী ছাড়া মানুষ বেশি দিন বাচঁতে পারে না সেহেতু বেচেঁ থাকার তাগিদেই সে পানাহারের প্রতি মুখাপেক্ষী। ঠিক তদ্রæপ বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য পরিমান মতো গ্রহন করা মানুষের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়কে শক্তিশালী ও সুস্থতা দান করে। আবার একই খাদ্য গ্রহন করা মানুষের স্বভাব বিরুদ্ধ। এজন্য বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য তাকে গ্রহন করতে হয়। যেমন, পানীয়, সুগার, প্রোটিন, তেল, চর্বি ভিটামিন সহ বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য। সুতরাং মানুষের ক্ষুধা ও পিপাসা নিবারণে যতটুকু পানাহারের প্রয়োজন ততটুকু গ্রহন করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক, আর শরীয়ত তাই অনুমোদন দেয়। জনাব মহিউদ্দিন মাস্তু বলেছেন, “অতিভোজন যেমন রোগের জন্ম দেয় ঠিক তেমনি একেবারে খাদ্য গ্রহণ না করা রোগের জন্ম দেয় ও ইবাদতে অলসতা সৃষ্টি করে। আর পানাহারের মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা অন্তরকে শান্তি প্রদান করে। সুতরাং পানাহারের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করাই যুক্তিযুক্ত।” নবী স: ও খাদ্যের ব্যাপারে মধ্যমপন্থা অবলম্বনের জন্য উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, কাফির ব্যক্তি খায় সাত পেটে আর মুমিন ব্যক্তি খায় এক পেটে। আর এতে অনেক উপকার বিদ্যমান, যেমন, সুস্থতা সুন্দর বোধশক্তি, প্রখর মুখস্থ শক্তি, অল্প ঘুম হালকা শরীর ইত্যাদি। এজন্যই বিজ্ঞানীরা বলেন সবচেয়ে বড় ঔষুধ হলো পরিমান মত খাদ্য গ্রহন করা। পক্ষান্তরে অতিরিক্ত পানাহার মানুষকে সম্পদ অপচয়ে বাধ্য করে, তার চিন্তা চেতনা সর্বদাই খাদ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। আলী রা, বলেন “যতটুকু খাদ্য দ্বারা ধনীরা বিলাসিতা করে ততটুক খাদ্যই গরীবের ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। বলা হয়ে থাকে “অতিভোজন বুদ্ধিমত্তাকে লোপ করে দেয়। ওমর রা: বলেন, তোমরা অতিভোজন থেকে বিরত থাকো, কেননা তা সালাতে অলসতা সৃষ্টি করে, শরীরকে অসুস্থ করে দেয় এবং তোমরা পানহারের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। কেননা তা ক্ষতি থেকে দূরে রাখে, শরীরের সুস্থতা বৃদ্ধি করে, ইবাদতে শক্তি যোগায়। নিশ্চয় কোন ব্যক্তি তার দীনের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করার পূর্বে তার ধ্বংস হবে না। উমার ইবনু হুবাইরা র, রোমের বাদশাহকে জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের মধ্যে তোমরা কাকে আহমক হিসেবে মনে কর? রোমের বাদশাহ উত্তরে বললেন. যে ব্যক্তি সামনে যা পায় তাই দিয়ে পেট পূর্ণ করে। ফারকাদ রহ. তার সাথীদের লক্ষ্য করে বলতেন,তোমরা খাওয়ার সময় লুঙ্গী বেধে বসবে লোকমা ছোট করবে, চিবিয়ে খাবে পানী পান করবে, তোমাদের কেউ যেন লুঙ্গী ঢিলে করে না বসে তাহলে তার পেট বড় হয়ে যাবে, আর তোমরা তোমাদের সামনে থেকে খাবে। এ ব্যাপারে সকল চিকিৎসক এক মত যে, রোগের প্রধান কারণ হলো খাওয়ার উপরে খাওয়া। এজন্য ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম জাওযিয়্যাহ রহ, তার বিখ্যাত গ্রন্থ “আত-তিব্ আন-নবাবী ” গ্রন্থে খাদ্যের তিনটি স্তর নির্ধারন করেছেন :
১ম স্তর : প্রয়োজনীয় পরিমান; ২য় স্তর : এমন পরিমান যা যথেষ্ট; ৩য় স্তর : অতিভোজন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রমযান মাসে আমাদের পরিবারে খরচ বৃদ্ধি পায়। এমনকি এই মাসে অতিভোজনের কারণে অনেকের বদহজমিও হয়। আল- হাসান রা, থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একদিন উমর রা. তার ছেলে আব্দুল্লাহ রা.-এর ঘরে প্রবেশ করে তার সামনে কিছু গোশত দেখতে পেলেন। এসময় তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন এই গোশত কেন? আবব্দুল্লাহ বললেন, গোশত খেতে মন চেয়েছে, তাই। উমর রা. বললেন, কোন জিনিষের প্রতি আশক্তি হলেই কি তোমাকে তা খেতে হবে? কোন ব্যক্তির জন্য অপচয় করাটা এতটুকু যথেষ্ট যে, তার মন যা চাইবে তাই সে খাবে। নিঃসন্দেহে এই উক্তিটি একটি প্রজ্ঞাবহ অর্থনীতির নিয়ম বহন করে, বিশেষ করে বর্তমান যুগে আমরা প্রত্যক্ষ করছি যে, বিভিন্ন বস্তু ক্রয়ের জন্য নানা ভাবে বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। একজন মনীষী মন্তব্য করেছেন যে, “আমরা সৌর্ন্দযের জন্য যে পরিমান কাপড় ব্যবহার করি তা সারা বিশ্বের উলঙ্গদের জন্য যথেষ্ট। আলী গালুম বলেন, “আমাদের মাঝে প্রচলিত রয়েছে যে, পুরুষের তুলনায় মহিলারা বেশি ব্যয় করে, বিশেষ করে তাদর পোশাকের ক্ষেত্রে। কিন্তু এমন কতক পুরুষ রয়েছে যারা মহিলাদের থেকে বেশি অপচয় করে। সাবাহা মালিকি বলেন ,“মহিলারা অন্যের বাড়ীতে অন্যের গায়ে যে পোশাক, আসবাপত্র দেখে তাই সে কিনতে চায়, যদি ও এগুলো তার প্রয়োজন নেই। এই মহিলাদের প্রয়োজন মিটাতে গিয়ে অনেক সময় স্বামীর বেতন এর বাইরে কর্জ করতে হয়। এভাবে অর্থনৈতিক অবকাঠামো ধ্বংসের মুখে পড়ে।”
বিভিন্ন আর্কষনীয় ভঙ্গিমায় বিলাসী পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হওয়ার কারণে মানুষও সেদিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। বাস্তব অবস্থাবাদরিয়্যাহ মুতাইরী তুলে ধরেছেন এভাবে যে, অধিকাংশ মহিলা স্বামীর নিকট অনেক প্রয়োজনীয় বিলাসবহুল আসবাবপত্র দাবী করে, আর স্বামী স্ত্রীর মন যোগাতে সেসব অনৈতিক দাবী গুলো পূরণ করে। অথচ এগুলো অপচয় ও হারাম। মহিলাদের এই বিলাসিতার জন্য বিজ্ঞাপনী কোহম্পানীগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী। পাশ্চাত্যের অনুকরণ ও এর জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী। আর অন্ধ অনুকরন নিদিষ্ট কেন স্থান বা জাতির মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। বরং সারা পৃথীবিতে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। মানুষের চাহিদা অপূরণীয়. বিশেষ করে বর্তমানে তা অতৃপ্ত,। সে সব কিছুই চায়,তার সবকিছুতেই আসক্তি, সব রঙে সে রঙিন হতে চায়।
আমরা আল্লাহর নিকট ঐ চক্ষু থেকে আশ্রয় চাই যা কাঁেদ না, ঐ অন্তর থেকে যা ভয় করে না, ঐ নাফস থেকে যা পরিতৃপ্ত হয় না, ঐ উদর থেকে যা পূরণ হয় না, আর ঐ দোয়া থেকে যা কবুল হয় না। অপচয়, অপব্যয়, ধ্বংস, ক্ষয়, সামাজিক অবক্ষয়, মানুষের বদহজম, ভূরি মোটা হওয়া সহ সকল অসুবিধার মূলে হল কেনাকাটার সময় নিয়মের তোয়াক্কা না করা, খাবারের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি ইত্যাদি। ডাষ্টবিনগুলোর অবস্থাতো অনুমেয় হয় দৈনিক আমরা কত খাদ্য অপচয় করছি। আর এভাবেই পশু চরিত্র আমাদের ব্যক্তিতে, পরিবারে, সমাজে, রাষ্টে, অনুপ্রবেশ করছে। আর গরীব মিসকীনরা হাহাকার করে মরছে। তুচ্ছ জিনিষকে কেন্দ্র করে আমরা যে পরিমান সম্পদ ব্যয় করি তা যাদি একত্র করি, তাহলে অনেক মানুষের চলার গতি পাবে, পৃথীবি বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে, জীবন সুন্দর হবে। যদি আমরা একটু চিন্তাভাবনা করে খরচ করি তাহলে অপচয় ও দারিদ্রতা নামক পরস্পর বিপরীতমুখী দুটি সমস্যার অবসান হবে। এভাবে দুটির মধ্যে সমতা বিধান করলে দুই সমস্যা দূরীভূত হবে।
ইসলামের মূল সৌন্দর্যই হলো মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা। ইসলাম যেভাবে অপচয়কে নিষেধ করেছে তেমনি কৃপণতাকে ও নিষেধ করে। এজন্য কুরআন সুন্নাহ মুসলিমদের পানাহার, পরিচ্ছদ, বাসস্থান, সেীর্ন্দয, যোগাযোগের মাধ্যম, বিবাহ-শাদীতে সব কিছুতেই চিহ্নিত করে দিয়েছে। এ জন্যই একজন মুসলিম খরচ করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিধানাবলী পালন করা আবশ্যক : অর্থনৈতিক দিক যেন মুমিনদের কে গ্রাস করে না ফেলে, বরং মুমিন ব্যক্তি তার আক্বীদা ও মুমিনের চরিত্র অনুযায়ী তার অর্থনীতি পরিচালনা করবে। মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে সম্পদ ব্যয় করা; অহংকার বর্জন করা; হারাম থেকে দূরে থাকা; নিয়মতান্ত্রিকতা মেনে সম্পদ ব্যয় করা; সচ্ছলতার সময় অসচ্ছল সময়ের জন্য সম্পদ জমা করে রাখা। একজন মুসলমান শরী‘আহ্ প্রণীত সীমারেখার মধ্যেই তার সম্পদ ব্যয় করবে। আর এটা উঠা নামা করবে বৈধ ও হারামের মাঝে। এটি হলো বৈধতার পর্যায়ে। যা অপচয় ও কৃপণতার মাঝামাঝি অবস্থান করা। সৌর্ন্দয ও একেবারেই পরহেজগারিতার মধ্যবর্তী অবস্থান কিন্তু অধিকাংশ লোক এই নীতি গ্রহন করে না। তারা সৌর্ন্দযের প্রতি ঝুকে পড়ে এক্ষেত্রে অনেকে অপচয় ও করে ফেলে অথচ মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা ও আল্লাহর ব্ন্দাদের একটি গুন। আল্লাহ বলেন এবং তারা যখন ব্যয় করে তখন অযথা ব্যয় করে না, কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী। নবী স. বলেন, তোমরা খাও পান করো, দান-সদকা করো, তবে অহংকার ও অপচয় ব্যতীত।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনৈতিক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ