Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মহাকাশে ছুটছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

কৃত্রিম উপগ্রহের ক্লাবে ৫৭তম বাংলাদেশ : বিপ্লব ঘটবে তথ্য-প্রযুক্তিতে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৮, ১২:৫৬ এএম | আপডেট : ৫:১৫ এএম, ১১ মে, ২০১৮

মহাকাশে কক্ষপথের দিকে ছুঁটছে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’ ফ্লোরিডার স্থানীয় সময় ১০ মে বিকাল ৪টা ১২ মিনিট থেকে ৬টা ২২ মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত (১১ মে) রাত ২টা ১২ মিনিট থেকে ৪টা ২২ মিনিট কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বিশেষ এই মুহূর্ত দেখতে এবং ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকতে অনেকেই চোখ রেখেছিলেন টেলিভিশন ও অনলাইনের পর্দায়।
ফ্লোরিডা থেকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাংলায় ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ¯েøাগান নিয়ে মহাকাশে কক্ষপথের দিকে ছুটছে। এর আগে উৎক্ষেপণের জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রায় সব ধরণের পরীক্ষা সম্পূর্ণ হয় বলেও জানান তিনি। শাহজাহান মাহমুদ বলেন, সব পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক। তবে এসব ক্ষেত্রে আবহাওয়া ও কারিগরি বিষয়গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ উপলক্ষে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম (সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী), তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ৩০ সদস্যর প্রতিনিধি দল ফ্লোরিডাতে রয়েছেন।
তিন হাজার ৫০০ কেজি ওজনের জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ফ্যালকন-৯ কক্ষপথের দিকে ছুটছে কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯-এ থেকে, যেখান থেকে ১৯৬৯ সালে চন্দ্রাভিযানে রওনা হয়েছিল অ্যাপোলো-১১। স্পেসএক্স এবারই প্রথম উপগ্রহ উৎক্ষেপণে তাদের ফ্যালকন-৯ রকেটের বøক ৫ সংস্করণ ব্যবহার করেছে। গত ৪ মে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে নতুন এই রকেটের স্ট্যাটিক ফায়ার টেস্ট সম্পন্ন হয়।বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মিত হয়েছে ফ্রান্সের থেলাস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে। নির্মাণ, পরীক্ষা, পর্যালোচনা ও হস্তান্তর শেষে বিশেষ কার্গো বিমানে করে সেটি কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ সাইটে পাঠানো হয়। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য প্রথমে ১৬ ডিসেম্বর তারিখ ঠিক করা হলেও হারিকেন আরমায় ফ্লোরিডায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় তা পিছিয়ে যায়। এরপর ৪ মে উৎক্ষেপণের সম্ভাব্য তারিখ রাখা হয়। পরে আবার তা পরিবর্তন হয়ে ৭ নির্ধারণ করা হয়। আবহওয়া অনুকূলে না থাকায় সেই তারিখ আবার পিছিয়ে ১০ মে চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
বদলে যাবে দেশের তথ্য-প্রযুক্তি: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে স্যাটেলাইট সদস্য দেশের তালিকায় ৫৭তম দেশ হিসেবে নাম লেখালো বাংলাদেশ। আর এর মাধ্যমে দেশের তথ্য-প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ফলে একদিকে যেমন বাংলাদেশ নিরবিচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান করতে পারবে, তেমনি সম্প্রচার সেবা, টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-এডুকেশন, ডিটিএইচ সেবা প্রদান করতে পারবে। এছাড়া ট্রান্সপন্ডার লীজের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের পর কিছুদিন পরীক্ষামূলকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তিন মাস পর বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের। স্যাটেলাইটে থাকা ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২০টি বাংলাদেশে নিজেদের ব্যাবহারের জন্য রাখা হবে। বাকী ২০টি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া কিংবা বিক্রি করা হবে বিদেশের কাছে। বিটিআরসির এক কর্মকর্তা জানান, দেশের জন্য রাখা ২০টি ট্রান্সপন্ডার থেকেই দেশের টেলিভিশন চ্যানেল থেকে শুরু করে ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) পরিচালনাকরী প্রতিষ্ঠানগুলো ভাড়া নিতে পারবেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আবেদনও করেছে। তবে উৎক্ষেপণের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে মন্ত্রণালয়।
‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ স্থাপনের লক্ষ্যে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল ¯øটের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনসকে ১৫ বছরের জন্য দুই কোটি ৮০ লাখ ডলার দিতে হবে। বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিদেশী স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল, টেলিফোন, রেডিওসহ অন্যান্য যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এতে প্রতি বছর ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে ১৪ মিলিয়ন ডলার গুণতে হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কার্যক্রম শুরু হলে দেশে শুধু বৈদেশিক মুদ্রারই সাশ্রয়ই হবে না, স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থ আয় করা যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে এ স্যাটেলাইট। স্যাটেলাইট পাঠানোর কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এজন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি ৪০টি ট্রান্সপন্ডার ক্যাপাসিটি সম্পন্ন হবে। এই ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য ২০টি রাখা হবে। স্যাটেলাইট ডিজাইন লাইফ ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে এই ২০টি ট্রান্সপন্ডার যথেষ্ট হবে বলে মনে করছে ডাক ও টেলিযোগযোগ মন্ত্রণালয়। আর বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় অবশিষ্ট ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিক্রি বা ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। বর্তমানে বিশ্বে ৫৬টি দেশের নিজস্ব উপগ্রহ রয়েছে। আর দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে ভারত (১৯৭৫), পাকিস্তান (১৯৯০) ও শ্রীলঙ্কার (২০১২) নিজস্ব স্যাটেলাইট রয়েছে। ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণে ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ১১ নভেম্বর ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণের জন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কিনতে থালিসের সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি।



 

Show all comments
  • দোলন ১১ মে, ২০১৮, ৩:০১ এএম says : 0
    অভিনন্দন
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন ১১ মে, ২০১৮, ৩:০১ এএম says : 0
    অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো
    Total Reply(0) Reply
  • শামীম ১১ মে, ২০১৮, ৩:০২ এএম says : 0
    খবরটি পড়ে খুব ভালো লাগলো
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃত্রিম উপগ্রহ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ