Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভাঙন আতঙ্কে উপকূলের লাখো মানুষ

| প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাতক্ষীরা থেকে আবদুল ওয়াজেদ কচি : কোথাও কোথাও মাত্র দেড়-দুই হাত বেধে আছে। অবস্থা এতই খারাপ যে, বাধের অনেক জায়গা দিয়ে চুইয়ে (লিকেজ) পানি প্রবেশ করছে। যে কোন সময় জীর্ণশীর্ণ বেঁড়িবাধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা। আর সেই আশংকা নিয়েই চলতি দুর্যোগ মৌসুমে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে সাতক্ষীরা উপকূলের লক্ষ লক্ষ মানুষ।
দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে উপক‚ল রক্ষা বেঁড়িবাধ জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে। ১৫-২০ ফুট প্রস্থের বাধ ভাঙতে ভাঙতে আর মাত্র দেড়-দুই হাত অবশিষ্ট আছে। সামান্য ঝড়ো বাতাস উঠলেই আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ছে এসব এলাকার মানুষ।
উপক‚লবাসীর অভিযোগ, ক্ষতিগ্রস্ত বেঁড়িবাধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন উদ্যোগ নেয় না। বেঁড়িবাধ ভেঙে প্লাবিত হলেই তাদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নাকনা, হরিষখালী, কোলা, শ্রীপুর, মনিপুর, খাজরা বাজার ও গদাইপুর পয়েন্টে কপোতাক্ষ নদের বেঁড়িবাধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। ভাঙন ধরেছে খোলপেটুয়া নদীর কাকড়া বুনিয়া, থানাঘাটা, নছিমাবাদ, জেলেখালী দয়ারঘাট, বলাবাড়িয়া, বিছট ও কাকবাসিয়া পয়েন্টে।
অপরদিকে, জেলার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও পদ্মপুকুরের নাপিতখালী, গাগড়ামারি, লেবুবুনিয়া, বন্যতলা, কামালকাটি, চাউলখোলা, চন্দ্রদ্বীপ ও পাতাখালী পয়েন্টে খোলপেটুয়া এবং কপোতাক্ষ নদীর বেঁড়িবাধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ভাঙন আতংকে দিন কাটাচ্ছে রমজানগর ইউনিয়নের মাদারনদীর শেখ বাড়ি মসজিদ ও চৌকিদার পাড়া এবং কালিন্দি নদীর পশ্চিম কৈখালীর মানুষও।
একইভাবে দুর্গাবাটি ও পোটাকাটলায় খোলপেটুয়া নদীর এবং দাতিনাখালীতে চুনা নদীর বেঁড়িবাধে মারাত্মক ফাটল দেখা দিয়েছে।
আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের হিজলিয়া, কোলা, শুভদ্রকাটি, কুড়িকাউনিয়া, চাকলা, দয়ারঘাট, মনিপুর, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাধ ভাঙতে ভাঙতে আর এক-দুই হাত অবশিষ্ট আছে। এ বছর বেড়িবাধ ভেঙে তার ইউনিয়ন অন্তত চারবার প্লাবিত হয়েছে।
বাধ না ভাঙলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘুম ভাঙে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, একবার বাধ ভাঙলে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাÐ তলিয়ে যায়। অবকাঠামো নাজুক হয়ে পড়ে। বাধ ভাঙলে সংস্কার করা হয়, ভাঙার আগে বার বার বলা সত্তে¡ও সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। তার ইউনিয়নের অন্তত ৩০ কিলোমিটার বেঁড়িবাধ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
শ্যামনগরের আইলা দুর্গত পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম আতাউর রহমান বলেন, তার ইউনিয়নের চারদিক কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদী বেষ্টিত। ৭/১নং পোল্ডারের আওতায় তার ইউনিয়নেই অন্তত সাড়ে তিন কিলোমিটার বেঁড়িবাধ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকছুদুল আলম বলেন, আইলা ও সিডরে বিধ্বস্ত গাবুরার নাপিতখালী, লেবুবুনিয়া, কালিবাড়িসহ তার আশপাশের এলাকায় বেড়িবাধের অবস্থা ভাল না। সামান্য ঝড়ো বাতাস উঠলেই সকলের খাওয়া ঘুম হারাম হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বিএম আব্দুল মোমিন বলেন, জেলার অনেক স্থানেই বেঁড়িবাধের অবস্থা খুবই নাজুক। বিষয়টি ইতোমধ্যে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলেই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানুষ

২৭ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ