Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খুলনা সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হোক

| প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আগামীকাল মঙ্গলবার খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। একই দিনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। হাইকোর্টের একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এবং ইসির পক্ষ থেকে আপিল করা হলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে ২৮ জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশনা প্রদান করেন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন না হওয়ায় সঙ্গতকারণেই গোটা দেশের মানুষের দৃষ্টি এখন খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিকে। গতকাল মধ্যরাত থেকে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণাকার্যক্রম বিধি মোতাবেক সমাপ্ত হয়েছে। নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে নেমেছে। নির্বাচনী এলাকায় ১০ জন জুডিশিয়াল ও ৬০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্টও নিয়োজিত থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার এই ব্যাপক আয়োজন সত্তে¡ও ভোটারদের মধ্যে ভীতি-শঙ্কার অবসান ঘটেনি। তারা নিরাপদে, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে কি না, পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রদান করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে তাদের মধ্যে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে, বিশেষ করে গত সপ্তাহখানেক ধরে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে যেরকম উত্তাপ-উত্তেজনা লক্ষ্য গেছে, যেরকম অসহিষ্ণুতা প্রত্যক্ষ করা গেছে, সেভাবে অবাধে নির্বাচনী আচরণবিধির লংঘন হয়েছে এবং যেভাবে লাগাতার পুলিশী অভিযান ও ধরপাকড় হয়েছে তাতে কেবল ভোটার মহলেই নয়, সর্বমহলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম হয়েছে। এমতাবস্থায় নির্বাচন কতটা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
বলার আপেক্ষা রাখে না, দলভিত্তিক এই নির্বাচনে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে, নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের মধ্যে, মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ও নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মধ্যে। পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে এটা বিশেষভাবে প্রতিভাত হয়েছে, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়্ িফিল্ড নিশ্চিত করার বিষয়টি পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচিত হলেও নির্বাচন কমিশন তা পুরোপুরি করতে সমর্থ হয়নি। নির্বাচন কমিশনের এক ধরনের ‘অসহায়ত্ব’ ও ‘পক্ষপাতিত্ব’ প্রত্যক্ষ করা গেছে। আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ জানানোর পরও নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। দ্বিতীয়ত, প্রশাসনের, বিশেষত পুুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ ‘অপরাধী’ গ্রেফতারের নামে বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার করেছে, তাদের বাড়িঘরে অভিযান চালিয়ে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। বিএনপির নেতারা অভিযোগ করছেন, তাদের শতাধিক নেতাকর্মীকে কয়েকদিনে গ্রেফতার করা হয়েছে। বহু নেতাকর্মী এখন গ্রেফতারের ভয়ে বাড়িছাড়া। তাদের আরো অভিযোগ বিএনপিকে, তাকে মাঠ থেকে উঠিয়ে দিতে পুলিশ নের্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে আভিযান চালাচ্ছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য, আওয়ামী লীগ মাঠে নেই, মাঠে আছে পুলিশ। তারাই আমাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনও অভিযোগ উঠেছে, প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নির্বাচন কমিশন যাদের নিয়োগ দিয়েছে তাদের অনেকেই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ, হয়রানি ও হুমকি-ধামকির শিকার হয়েছেন। তারা কোন দলের সমর্থক, তা যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজন মতো তাদের প্রতিএই আচরণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির মনোনীত নির্বাচনী এজেন্টরাও পুলিশী হয়রানি ও ভয়ভীতির মুখে পড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, প্রিজাইডিং অফিসার ও বিএনপির নির্বাচনী এজেন্টদের ঠিকানা-তথ্য পুলিশ কর্তৃপক্ষ কিভাবে, কোত্থা থেকে পেয়েছে? নির্বাচন কমিশনের দিকেই এ ব্যাপারে আঙুল উঠছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য এটা কোনো ভালো কথা নয়। জাতীয় নির্বাচনের মতো সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন সামনে রয়েছে। সে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব এই নির্বাচন কমিশনকেই পালন করতে হবে। এ জন্য তার দরকার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, দৃঢ়তা এবং জনগণের প্রশ্নাতীত আস্থা। অন্যদিকে পুলিশের নিরপেক্ষতা, দায়িত্বশীলতা, সদাচার ও সবার প্রতি সমআচরণও প্রত্যাশিত। মনে রাখতে হবে, পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, কোনো দল বা পক্ষের নয়।
যাহোক, নির্বাচনের দিনটি যে কোনো বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত সকল সংস্থার কর্মকর্তা ও সদস্যদের অবশ্যই পক্ষপাতহীন, দায়িত্বশীল আচরণ ও ভূমিকা প্রদর্শন করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, যারা ভোট দিতে আসবে তারা যাতে অবাধে, নিরাপদে, নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে যাতে কোনরূপ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সন্ত্রাস-সহিংসতা, জবরদস্তি, কারচুপি, অনিয়ম না ঘটে তারও নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের জন্য এই নির্বাচন একটা বড় পরীক্ষা বা চ্যালেঞ্জ। এ নির্বাচনের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি গণআস্থা ও সরকারের ভাবমর্যাদার প্রশ্ন এর সঙ্গে জড়িত। আমরা আশা করতে চাই, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। দেশবাসীরও এটাই একান্ত প্রত্যাশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি নির্বাচন

১৭ জানুয়ারি, ২০২২
১৭ জানুয়ারি, ২০২২
১২ জানুয়ারি, ২০২২
২২ জানুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন