Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রজ্ঞাপনের দাবি- অবরোধ প্রত্যাহার, ধর্মঘট চলবে

| প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম


ঢাবি সংবাদদাতা : রাজধানীর শাহবাগ মোড়ের অবরোধ প্রত্যাহার নিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে এই ঘোষণা দেওয়ার পর রাস্তা ছেড়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। এরপর থেকে শাহবাগ মোড় দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
সংগঠনটির যুগ্ম আহŸায়ক নুরুল হক নুর বলেন, দ্রæত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এমন আশ্বাস ও অনুরোধে আজকের মতো কর্মস‚চি স্থগিত। তবে আগামীকাল (আজ) থেকে প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত সকল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, পরীক্ষা বর্জন কর্মস‚চি থাকবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। প্রজ্ঞাপন নিয়েই ছাত্রসমাজ ক্লাস ও পড়ার টেবিলে ফিরবে। সঠিক সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে আমরা আবারও রাজপথে নামব।’। আর সরকার যদি কোটা রাখতে চায় তাহলে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত রাখতে পারে বলেও জানান তিনি। তার এই ঘোষণার পরপরই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় ছেড়ে ক্যাম্পাস ও নিজ নিজ বাসার দিকে রওনা হতে শুরু করেন। এখন শাহবাগ মোড়ের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। অবরোধ প্রত্যাহারের আগে শাহবাগ মোড়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহŸায়ক হাসান আল মামুন বলেন, আগামীকালের (আজ ) কর্মস‚চি যথা সময়ে শুরু হবে। সবাইকে কর্মস‚চি পালন করার আহŸান জানান তিনি। এর আগে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক ন‚রুল হক ন‚র জানিয়েছিলেন, প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত গোছল, খাওয়া ও ঘুম রাজধানীর শাহবাগেই সারবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দরকার হলে শাহবাগে ঘুমাব, এখানেই নাওয়া-খাওয়া সারব। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়ব না। প্রজ্ঞাপন দিতেই হবে। কেননা আমাদের কথা দেওয়া হয়েছিল। সেই কথা অবশ্যই রাখতে হবে।’ ন‚র বলেন, ‘আমরা দেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী। আমরা চাই মেধাবীদের হাতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। পিছিয়ে পড়া জনগণের জন্য এত কোটার দরকার নেই। প্রয়োজনে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কোটা রাখা যেতে পারে।’ সরকারের উদ্দেশে ন‚রুল হক বলেন, ‘আপনারা কথা দিয়েছিলেন, ৭ মের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। আপনারা সেই কথা রাখুন। প্রজ্ঞাপন জারি করুন। আমরা ঘরে ছেলে ঘরে ফিরে যাব। কিন্তু তা করলেন না, তার মানে দাঁড়াল আপনারা আন্তরিক নন। আন্তরিক হলে তো প্রজ্ঞাপন কত দিনেই দিয়ে দিতেন। যেখানে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য ১০ মিনিট সময় লাগে, সেখানে কেন এতদিন সময় লাগছে?’
এর আগে সকালে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে শাহবাগ মোড় আটকে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল সোমবার (১৪ মে) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে হাজারো আন্দোলনকারী এসে জড়ো হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা নানা ¯েøাগান দিতে থাকেন। ঢাবি ক্যাম্পাসে কয়েকবার মিছিল নিয়ে প্রদক্ষিণ করার পর তারা বেলা পৌনে ১২ টার দিকে অবস্থান নেন শাহবাগ মোড়ে। এতে অংশ নিয়েছেন কয়েকহাজার শিক্ষার্থী। শাহবাগ মোড়ে চার দিক থেকে আসা যানবাহনগুলো আটকা পড়েছে। পল্টন থেকে শাহবাগে নতুন করে কোনও যানবাহন আসছে না। তবে জরুরি সেবার অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও ফার্মগেট রুটের যানবাহন মিন্টোরোড দিয়ে বাংলা মোটর হয়ে যাতায়াত করছে। শাহবাগকে ঘিরে আশপাশের এলাকায় প্রচুর যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, “আমরা ধৈর্য্য ধরে আছি। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।” আন্দোলনকারীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেওয়ার পরও প্রজ্ঞাপন জারি করতে কালক্ষেপণ করে মন্ত্রণালয় ছাত্রসমাজকে উসকে দিচ্ছে। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। ¯েøাগানে শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘আর নয় কালক্ষেপণ, দ্রæত চাই প্রজ্ঞাপন। বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই।’ এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা ধর্মঘটের দরুণ ঢাবির বিভাগগুলোতে কোন ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নেয়নি সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে বলে জানায়। ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এছাড়া, ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ধর্মঘট চলছে।
জাবি সংবাদদাতা জানান, গতকাল সোমবার সোয়া ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি ইউনিট’র ব্যানারে মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা।
রাবি সংবাদদাতা জানান, গতকাল সোমবার বেলা ২টার দিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেখানে বিক্ষোভ মিছিলটি নিয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে আবার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অবস্থান করেন তারা। এসময় প্রজ্ঞাপন জারির দাবীতে বিভিন্ন ¯েøাগান দেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোটা সংস্কার কমিটির রাবি শাখার আহŸায়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, ‘সকাল থেকে আমরা ক্যাম্পাসে ধর্মঘট পালন করছি।। আমরা মনে করি সরকার দ্রæত আমাদের দাবি মেনে নিয়ে এই সঙ্কট থেকে জাতিকে রক্ষা করবেন’।
রংপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে গতকাল রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্বদ্যিালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করেছে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগে ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আবারো ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবদারু রোডে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা জানান, বেলা ১১টা থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন এবং অবস্থান কর্মসূচী পালন করে তারা। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এতে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। পরে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের পাশে মানববন্ধন করে। শিক্ষার্থীদের ধংসাত্বক কর্মকান্ড এড়াতে ঘটনাস্থলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা পুলিশ এবং প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
চবি সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি না করায় গতকাল (সোমবার) ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও শাটল ট্রেন অবরোধ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সকাল ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনটি ষোলশহর স্টেশনে পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তবে দুপুর দুইটায় আন্দোলন স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আবার তারা শাটল অবরোধ করবে বলে জানিয়েছে আন্দালনকারীরা। আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগের হুমকির কারণে তারা ক্যাম্পাসে কোন ধরনের আন্দোলন করতে পারছে না। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জানিয়ে দিয়েছে ‘ক্যাম্পাসে যারা আন্দোলন করবে তাতের ছুরি মারা হবে’।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ চবি শাখার প্রধান সম্বনয়কারী ও চট্টগ্রামের যুগ্ম আহŸায়ক মোঃ আরজু ইনকিলাবকে বলেন, কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে জারির জন্য গত রোববার বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া হয়। তবে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়াই কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করে অনিদিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরিক্ষা বর্জন করেছি এবং প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাস বর্জন অব্যাহত রাখব।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ