Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বৈদেশিক খাদ্য সহায়তা কমছে

হতদরিদ্রদের আরও দুর্বল হওয়ার শঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বৈশ্বিক খাদ্য সহায়তা গত দুই অর্থবছর ধরেই কমেছে বাংলাদেশের। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে খাদ্য সহায়তা এসেছিল তিন কোটি ২০ লাখ ডলারের। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা কমে দুই কোটি ডলারে নেমে এসেছে। অসহায় ও দুস্থদের সহযোগিতা এবং গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নে গৃহীত টিআর ও কাবিখার মতো কর্মসূচিতে খাদ্য দেওয়ার পরিবর্তে অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্তে এমন হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, সরকারকে বেশি দামে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে, যার ফলে বাড়বে মূল্যস্ফীতি। হতদরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তা আরও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার বহিঃপ্রকাশ এটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক দাতাগোষ্ঠী ও উন্নত রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তিন কোটি ৮০ লাখ ডলারের খাদ্য সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। পরের বছরে তা তিন কোটি ২০ লাখ ডলারে নেমে আসে। এক বছরেই ৬০ লাখ ডলারের খাদ্য সহায়তা কমে যায়। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আরেক দফা এ সহায়তা কমে দুই কোটি ডলারে নেমে আসে। তিন বছরের ব্যবধানে খাদ্য সহায়তা কমেছে এক কোটি আশি লাখ ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় বর্তমানে যা ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকার সমান।
দাতাগোষ্ঠী ও উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রগুলো সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেয়। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন ইউনিট ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর (এনজিও) মাধ্যমে হতদরিদ্র, দুস্থ, স্কুলে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ সহায়তা বিতরণ করা হয়। সহায়তা হিসেবে দেওয়া খাদ্যের মধ্যে রয়েছে চাল ও গম। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ও দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও অসহায়দের ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে চাল ও গম দেওয়া হয়। কিন্তু চাল ও গম বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতি হওয়ায় সরকার এখন খাদ্য দেওয়ার পরিবর্তে নগদ অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে নগদ অর্থ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যে অর্থ দেওয়া হয়, তা দিয়ে আগের পড্রাপ্ত খাদ্যের সমপরিমাণ খাদ্য বাজার থেকে কেনা যায় না। এতে খাদ্য সহায়তা কমছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কামাল মুজেরি বলেন, গ্রামীণ জনপদের উন্নয়ন ও মৌসুমি কাজহীন লোকদের সহায়তার জন্য চাল-গম দিয়ে টিআর ও কাবিখা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সরকার। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে সরকার এখন খাদ্য না দিয়ে টাকা দেওয়া শুরু করেছে। এতে খাদ্য সহায়তা কমে যেতে পারে। তবে খাদ্য সহায়তার সমপরিমাণ অর্থ যদি দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে নেওয়া অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে দেশের জন্য ভালো হবে। অপরদিকে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চলায় সহায়তা কমা স্বাভাবিক বলেও মনে করেন তিনি।
গত বছর হওরাঞ্চলে আকস্মিক বন্যাসহ দুই দফার বন্যায় চালের উৎপাদন কমে যায় প্রায় ১৯ লাখ টন। স¤প্রতি বাংলাদেশের চালের উৎপাদনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘কমোডিটি মার্কেট আউটলুক: এপ্রিল ২০১৮’-তে বলা হয়, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৪৫ লাখ টন। অথচ সরকারে কৃষি তথ্য সার্ভিসের দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশে বছরে চালের ন্যূনতম চাহিদা তিন কোটি ৬২ লাখ টন। গত বছরে চালের উৎপাদন দাঁড়ায় তিন কোটি ২৭ লাখ টন। এ সময় সরকারি গুদামেও চালের ঘাটতি থাকায় জরুরি ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গত এক বছরে ৩৬ লাখ টন চাল আমদানি করা হয়। তবুও চালের বর্ধিত দাম কমাতে পারেনি সরকার। অথচ ২০১৬ সালে বাংলাদেশের চাল আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র এক লাখ টন। এতে খাদ্য আমদানিতে সকরারকে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যয় করায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও টান পড়েছে।
তবে সরাসরি খাদ্য সহায়তা কমে গেলে তা দেশের বর্তমান অবস্থায় তেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করে সরকার। বরং দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় খাদ্য সহায়তার বিষয়টি অতটা গুরুত্বপর্ণ নয় বলে মনে করেন সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তিরা।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, খাদ্য সহায়তা কমে আসাটা স্বাভাবিক। এ বছর চালের যথেষ্ট উৎপাদন হবে। আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। গ্রামীণ অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। আর আমরা যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছি, এটা তার বহিঃপ্রকাশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ