Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভুট্টা উৎপাদনে বিপ্লব

আবাদ ও উৎপাদনে নেই কোনো ঝুঁকি, যুক্তরাষ্ট্রের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান

প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:১৯ পিএম, ১৬ মে, ২০১৮

মিজানুর রহমান তোতা : ডিপোজিট পেনশন স্কীম (ডিপিএস) চালু করা অনেক কৃষকের ভাগ্যে জোটে না। তাই কৃষকরা ভুট্টাকে ডিপিএস আবাদ বলে থাকেন। কারণ গমের মার আছে, আবহাওয়া খারাপ হলে দানা মরা হয় ও ক্ষতিরও আশংকা থাকে। আর ভুট্টায় তা হয় না। কোনরকমে আবাদ করলেই ফল পাওয়া যায অন্যান্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলক বেশী। তাছাড়া পরিচর্যাসহ আবাদ খরচ খুবই কম। গত চার বছরের ব্যবধানে ভুট্টার আবাদ ও উৎপাদন অভাবনীয়ভাবে বেড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র জানায়, গত মৌসুমে দেশে ৩ লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়। উৎপাদন হয় ২৪ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে উৎপাদন হবার সম্ভাবনা প্রায় ৩৭লাখ মেট্রিক টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ মহসীন আলী গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দেশে সবজি বিপ্লবের সাথে যোগ হয়েছে ভুট্রা বিপ্লব। আমাদের টার্গেট আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভুট্টা উৎপাদন এক কোটি মেট্রিক টনে উন্নীত করা। চরাঞ্চলে যেখানে অন্যান্য ফসল চাষাবাদ হয় না, সেখানে ভুট্টা উৎপাদনে কৃষকরা বিরাট লাভবান হচ্ছেন। বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধান দানাশস্য হিসেবে ভুট্টা গুরুত্বপূর্ণ ফসল হিসেবে অবদান রাখছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় প্রধান দানা ফসল। ভুট্টা মেইজ, কর্ণ ও পপকন নামে পরিচিত। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে হেক্টরপ্রতি ভুট্টায় গড় উৎপাদন ৫ দশমিক ১২ মেট্রিক টন। বাংলাদেশে এই হার ৬ দশমিক ৯৮ মেট্রিক টন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত চার বছরে ভুট্টা উৎপাদনে বাংলাদেশের অগ্রগতি অসামান্য। ভুট্টার উৎপাদন ৪০ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৩৪ টন উৎপাদন করে শীর্ষে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরের অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পরে রয়েছে আর্জেন্টিনা, চীন ও ব্রাজিল। তাদের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন যথাক্রমে ৫ দশমিক ৬১, ৫ দশমিক ৩৫ ও ৩ দশমিক ৭১ মেট্রিক টন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এর উৎপাদনশীলতা ২ দশমিক শূন্য ৬ মেট্রিক টন। এছাড়া মেক্সিকোয় ২ দশমিক ৮১ ও জাপানে ২ দশমিক ৫ মেট্রিক টন।
দেশের জমির উর্বরা শক্তি বেশি থাকা, অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষকদের লাভবানের কারনে বাংলাদেশে ভুট্টার আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস জানান, ভুট্টা উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। বিশ্বের মধ্যে ২য় অবস্থান এটি কম কথা নয়। এখন এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণসহ বিদেশে রফতানীর ক্ষেত্র তৈরী করতে হবে। বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে ভুট্টায়। চিকিৎসকদের মতে, ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশী। ভুট্টা শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। ভুট্টায় বিদ্যমান ভিটামিন-এ এবং সি ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। ভুট্টা শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, এতে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে।এটি ডায়বেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ভুট্টাতে থাকা বিটা ক্যারোটিন চোখের দৃষ্টি বাড়াতে সাহায্য করে। সুত্র জানায়,ভুট্টার বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ১০/১২ ভাগ। ভুট্টার তেল ভোজ্যতেল হিসেবে উত্তম। শিশু, গর্ভবতী মহিলা ও দুগ্ধপানকারী মায়ের জন্য ভুট্টার তেল উত্তম। তাছাড়া ভুট্টাতে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং সালফার এসব গৌণ খনিজ উপাদান বেশ ভালোই রয়েছে।
কৃষি বিজ্ঞানী ডক্টর আখতারুজ্জামান জানান, ভুট্টা চাষের বড় সুবিধা হলো রোগবালাই ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম ঘটে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় ভুট্টা চাষে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসছে কৃষকদের। আবাদ ও উৎপাদনে নেই কোন ঝুঁকি। ফলনে গমের চেয়ে প্রায় ৪গুণ বেশী। সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র জানায়, ভুট্টা বিক্রিতে কৃষকদের কোনরূপ বেগ পেতে হচ্ছে না। চিলের মতো ছোঁ মেরে মাঠে গিয়ে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে পাইকারী ব্যবসায়ীরা। কৃষকরা দামও পাচ্ছেন ভালো। ভুট্টার কোন অংশই ফেলে দিতে হয় না। ভুট্টার উপরের পাতা গোÑখাদ্য, ডালপালা জ্বালানী, মাড়াই করে ভুসি পোলট্রি খাবার ও আটা-ময়দা তৈরী হয়। ভুট্টা থেকে শিশু খাদ্য, গøুুকোজ, বার্লি, এ্যারারুট ও তেল হয়। ভুট্টার আটা-ময়দায় বিস্কুট ও পাউরুটি হয় সুস্বাদু। কাঁচা ভুট্টা পুড়িয়ে খাওয়া যায়। তৈরী হয় খৈ। এতকিছুর ব্যবহার হওয়ায় চাহিদা বাড়ছে ব্যাপক। সবচেয়ে বড় কথা কৃষকরা ‘রিলাক্স মুডে’ আবাদ করার সুযোগ পান। অন্য ফসলের মতো সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখতে হয় না ভুট্টা আবাদে। কৃষকরা সময়োযোগী পদক্ষেপ নিয়ে ভুট্টা উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়ে খাদ্য নিরাপত্তার সহায়ক ভুমিকা পালন করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, যশোর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, দিনাজপুর, নাটোর, রাজশাহী, চাপাঁই নবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, কুমিলা, চট্রগ্রাম ও বান্দরবন ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলাসহ দেশের সবখানেই কমবেশী ভুট্টা আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার বেগনগর মাঠের ভুট্টা চাষি আজাদুর রহমান বললেন, আমরা ভুট্টা আবাদ করেই স্বাবলম্বী হয়েছি। এতে খরচ কম, লাভ বেশী। প্রতিমণ ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে গড়ে প্রায় ১হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে গমের ফলন হয় বড়জোর ১০ মণ। আর ভুট্টার ফলন প্রায় ৪০ মণ। গমের আটা আর ভুট্টার আটার মধ্যে পার্থক্য নেই। পুষ্টিমানের দিক থেকেও কম নয়। কৃষকরা জানান, অন্যান্য কৃষিপণ্যের মতো ভুট্টা বিক্রিতে মধ্যস্বত্বভোগী কিংবা সিন্ডিকেট ব্যবসা এখনো গড়ে ওঠেনি। নীরবে ভুট্টা ক্রয় ও বিক্রয় হচ্ছে। যার কারণে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে বেশী। তাছাড়া ফলনের কারণে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে। অভাবনীয় ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। সার ও সেচের মাত্রা কম হওয়ার অতিরিক্ত খরচের হাত থেকে কৃষকরা রেহাই পাচ্ছেন। সুত্র জানায়, দেশের সবখানেই ভুট্টা আবাদ ক্রমাগত স¤প্রসারিত হচ্ছে।



 

Show all comments
  • SHAUKAUT ১৭ মে, ২০১৮, ৮:০৪ পিএম says : 0
    eta latin americar desh gulur jonno prodhan khaddo jishabe bebojar hoy jemmon venezuela era jodi vhuttar guri na pan tajole eder onnokichu korar thake na tai ekhaner shobche boro company er nam polar tara ei dana diee shobchee boro company ghore tuleche jake shara dunia chene jane tar nam P A N JETI VENEZUELAN KHADDO BOLA CHOLE
    Total Reply(0) Reply
  • তুহিন ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৮:৫৬ এএম says : 0
    ভুট্টাকে মাঠ ফসল বলা হয় কেন?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভুট্টা

৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ