Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যানজটে স্থবির ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পথে পথে ভোগান্তি

| প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মুন্সী কামাল আতার্তুক মিসেল, চান্দিনা ও মোক্তার হোসেন মোল্লা, সোনারগাঁ থেকে : ফেনীর মহিপালে আটকে পড়া গাড়ির চাপ আর দুটি সেতুতে টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে টানা তৃতীয় দিনের মত বুধবার যানজটে স্থবির হয়ে আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। গত সোমবার রাত থেকে মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলার কাঠেরপুল থেকে গোমতী সেতু পার হয়ে মেঘনা সেতুর পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পর্যন্ত বুধবার ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার যাত্রীবাহী গাড়ি, রোগীবাহী অ্যাম্বুল্যান্স, জ¦ালানী তেলবাহী গাড়ী, চাল বোঝাই ট্রাক ও বিদেশগামী যাত্রী আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
গত মঙ্গলবারও মহাসড়কের চান্দিনার মাধাইয়া থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার যানজট ছিল। বুধবার সকালেও একই অবস্থা দেখা গেছে। হাইওয়ে পুলিশের দাউদকান্দি থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত কয়েক দিন ধরে দাউদকান্দিও মেঘনা-গোমতী,মেঘনা ও কাচঁপুর ব্রীজ এলাকায় ফোরলেনের গাড়িগুলো প্রতিযোগীতা করে পারাপারের চেষ্টা করলে সৃষ্ট হয়েছে এই যানজট। এতে মহাসড়কের এই অংশে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করছে যানবাহনে বসে হাজার হাজার নারী, শিশুসহ সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি রোগীবহনকারী এ্যম্বুলেন্সগুলোতে থাকা রোগীদেও অবস্থা আরো ভয়াবহ। বহু রোগীবাহী এ্যম্বুলেন্সচালকরা আগে গন্তব্যে পৌঁছতে উল্টো পথে গাড়ি চালানোর কারণেও থেকে যাচ্ছে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির চাকা। এছাড়াও দাউদকান্দিও মেঘনা-গোমতী টোলপ্লাজা ও ওয়েটস্কেল এলাকায় টোল আদায়সহ ভারবাহী যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ধীরগতির কারণেও মহাসড়কের এই অংশে যানজট লেগেই আছে। আর এভাবে ফোরলেনের দু’অংশেই যানজটের তীব্রতা গতকালও ছিল। তবে সেটা মঙ্গলবারের তুলনায় কিছুটা কমে কুমিল্লার দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ থেকে কাচঁপুর পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ ছিল। ১০ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগছে ৭-৮ ঘণ্টারও বেশি। যানজটে আটকেপড়া পণ্যবাহী যানবাহন চালকদের মাঝে শুকনো খাবার, জুস ও পানি বিতরণ করেছে জেলা পুলিশ।
হাইওয়ে ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল অংশে গত সপ্তাহের টানা যানজটে আটকা পড়া গাড়িগুলো একসঙ্গে ঢাকা অভিমুখে ছুটে আসছে। একইভাবে রাজধানী ঢাকার সাথে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম,কক্সবাজার,রাঙ্গামাটি,বান্দরবান,খাগড়াছড়িগামী শত শত যাত্রীবাহী বাসে প্রতিদিনই যাতায়াত করছে অসংখ্য যাত্রী। আর একসকল মালামাল ও যাত্রী বহনকারী যানবাহনগুলো দেশের প্রধান ব্যস্ততম জাতীয় মহাসড়কের ফোরলেন হয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি,মেঘনা ও কাচঁপুর এলাকায় এসে দু’লেনের ব্রীজ হয়ে গন্তব্যে পেঁছৈতে প্রতিযোগীতা শুরু করে। আর এতেই শুরু হয় যানজট। এতে প্রতিদিনই বাড়তে যানজটের তীব্রতা। এদিকে মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ইলিয়টগঞ্জ থেকে যখন কাচঁপুর পর্যন্ত যানজটের তীব্রতা তখন মঙ্গলবার রাতে রাতে গোমতী ও মেঘনা সেতুতে মালবোঝাই দুটি ট্রাক বিকল হয়ে পড়লে উভয় দিকে দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে যানজট আরো দীর্ঘ হয়। খবর পেয়ে গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ ও টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের উদ্ধারকারী রেকার ঘটনাস্থলে পৌছে দু’ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে বিকল গাড়ি দুটি সরিয়ে নিলে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হলেও যানজট আরো বেড়ে যায়। ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচলকারী বিলাসবহুল এক পরিবহনের মালিক নিজাম জানান, মহাসড়কে যানজটের তীব্রতার কারণে প্রতিদিন তাদের বিরাট অংকের টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকায় গাড়ির তেল জ্বলছে। এছাড়াও আগে যেখানে একটি গাড়ি ৪ বার ঢাকা-কুমিল্লা আসা-যাওয়া করতো এখন সেটা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে প্রতিদিন তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। কুমিল্লা ময়নামতি এলাকার ব্যবসায়ী সাজ্জাদ জানান, আগে সকালে গিয়ে বিকেলে ঢাকা থেকে মালামাল এনে স্বাভাবিকভাবে দোকান চালাতাম। কিন্তু এখন ১০/১২ ঘন্টায় ঢাকা যাওয়ার কারণে সম্ভব হচ্ছেনা। তিনি আরো বলেন, রমজান আসছে, পণ্য পরিবহন বেড়ে যাবে, তখন মহাসড়কের অবস্থা কেমন হবে সেটা আল্লাহই জানেন। এদিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে মহাসড়কে আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। অনেক মানুষ বাধ্য হয়ে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছতে প্রতিদিনই হাটছে মাইলের পর মাইল। কুমিল্লাগামী যাত্রী আজগর আলী ও জাকির খান জানান, কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পার হতেই তাঁদের পাঁচ ঘণ্টা বাসে বসে থাকতে হয়েছে। নোয়াখালীর যাত্রী সামীমা খান ও জয়া আক্তার জানান, তীব্র যানজট ও গরমে তাদের সঙ্গে থাকা বিশেষত শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম পরিবহনের যাত্রী সুমি আক্তার ও নাজমা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত পুলিশ মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করার পরও কেন এমন ভয়াবহ যানজট বুঝতে পারছি না। চট্টগ্রামগামী এক পরিবহনের বাসচালক হামিদ আলী জানান, কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত আসতে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হচ্ছে। সরেজমিন মহাসড়কের কুমিল্লার বিভিন্ন অংশ থেকে পাওয়া তথ্যে আরো জানা যায়, ফোরলেনের গাড়িগুলো দাউদকান্দি, মেঘনা ও কাচঁপুর দু’লেনের ব্রীজে ফোরলেনের গাড়িগুলোর চাপ, দাউদকান্দি টোলপ্লাজা ও ওয়েট স্কেল এলাকায় ধীরগতিতে টোল আদায় ও অতিরিক্ত ভারবাহী যানবাহন থেকে কৌশলে চাঁদাবাজি ছাড়াও মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা বাগুড়, মাধাইয়া, ইলিয়টগঞ্জ, গৌরীপুর এলাকায় মহাসড়কের উপর অবৈধ ষ্ট্যান্ড থাকায় সেখানে দ্রæতগতির গাড়ির চালকরা গতি কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়াও রাতে মেঘনা ব্রীজ এলাকায় অনেক গাড়ি চালক আগে যেগে উল্টোপথে ব্রীজ পারাপরের চেষ্টার কারণেও সৃষ্ট হচ্ছে যানজট। এদিকে মহাসড়কের কুমিল্লা থেকে ঢাকাগামী অংশে গত কয়েকদিনের যানজটের তীব্রতায় চট্টগ্রাম থেকে সোহাগ, এসআলম, এনা, হানিফ, শ্যামলী, সৌদিয়া পরিবহনের বাসগুলো গন্তব্যে পৌঁছতে কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাস হয়ে সিলেট মহাসড়ক ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। ময়নামতি সেনানিবাস এলাকায় ঢাকাগামী সৌদিয়া পরিবহনের বাস যাত্রী শ্যামল জানান, কিছুটা সময় লাগলেও যানজটে আটকে না থেকে এভাবে যেতেও অনেকটা হয়রানী থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
হাইওয়ে পূবাঞ্চল (কুমিল্লা)’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রহমত উল্লাহ জানান, ঢাকাগামী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকায় চলাচলের গতি খুবই কম। এছাড়াও দিনের বেলায় রাজধানীমূখী পণ্যবাহী ট্রাক,কাভার্ডভ্যান, লরি প্রবেশে কড়াকড়ি আরো করায় সহসাই যানজট নিয়ন্ত্রণে আসবে বলেও তিনি জানান।
দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, যানজট নিয়ন্ত্রণে গত রাত থেকে হাইওয়ে পুলিশের সব সদস্য ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছে। দাউদকান্দি সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মহিদুল ইসলাম বলেন, দুই সেতু দিয়ে পণ্যবাহী গাড়িগুলো পারাপারে ধীরগতিই যানজট সৃষ্টির মূল কারণ। আশা করা হচ্ছে, রাতের মধ্যে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজা এলাকা থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। গত মঙ্গলবার রাত থেকে এ সৃষ্ট যানজটের ফলে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতুর টোলপ্লাজায় টোল আদায় ধীর গতি, ওজন স্কেলের অব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা অপ্রযাপ্ত ও ট্রাাফিক আইন অমান্য করে উল্টো পথে যানবাহন চলাচল ও মহাসড়কে সংস্কার কাজ চলার কারনে এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে ।
সরেজমিনে বুধবার দুপুরে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ভোর রাত থেকে মহাসড়কের মেঘনা সেতু ও কাচঁপুর সেতু এলাকায় এ যানজট। প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আটকা পড়ে থাকে যাত্রীবাহী ও মালবাহী যানবাহন। প্রতিটি যানবাহনের চাকা চলছে ধীর গতিতে। মেঘনা সেতু থেকে কাচঁপুর সেতুর পশ্চিম প্রান্ত সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড পর্যন্ত গাড়ি চলছে ধিরগতিতে। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি কাইয়ুম আলী সরদার জানান, মহাসড়কে সংস্কার কাজ চলছে এবং গাড়ীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যানজট নিয়ন্ত্রনে কাজ করে যাচ্ছে। সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহীনুর ইসলাম জানান, মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। মহাসড়কের যানজট নিয়ন্ত্রনে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 



 

Show all comments
  • s.m.rezaul karim ১৭ মে, ২০১৮, ৯:০৫ এএম says : 0
    This matter transfer to Bangladesh Army and they solve the matter honestly and smoothly.
    Total Reply(0) Reply
  • Ashraf Hossain ১৭ মে, ২০১৮, ১:৩৩ পিএম says : 0
    যোগাযোগ মন্ত্রী তো ব্যস্ত
    Total Reply(0) Reply
  • পথিক ১৭ মে, ২০১৮, ১:৩৩ পিএম says : 0
    এটার কি কোন প্রতিকার নেই???
    Total Reply(0) Reply
  • Pathan Ruba ১৭ মে, ২০১৮, ১:৩৩ পিএম says : 0
    ....... কই তুমি , ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ কর ,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানজট

১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৯ ডিসেম্বর, ২০২২
২৭ নভেম্বর, ২০২২
২৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ