Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শরণখোলায় ভূমিহীন পল্লীর ২৮টি বসতঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা

শরণখোলা (বাগেরহাট) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৮, ৮:০৭ পিএম | আপডেট : ৮:১২ পিএম, ১৯ মে, ২০১৮

বাগেরহাটের শরণখোলায় গুলি করে আতঙ্ক ছড়িয়ে সরকারি জমিতে বসবাসকারী ২৮টি ভূমিহীন ও প্রতিবন্ধী পরিবারের বসতঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। সর্বস্ব হারানো গৃহহীন ওই পরিবারগুলো আশপাশের বিভিন্ন বাড়ি ও মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের জানেরপাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ঘটনাস্থলে গেলে ওই পল্লীতে বসবাসকারী শারীরিক প্রতিবন্ধী রেনু আক্তার (৩৫) ও রুমানা আক্তার (২৫) জানান, তারা দুই মাস ধরে এ পল্লীতে বসবাস করছেন। ওইদিন সকাল ৭টার দিকে মৃত নূরু খানের ছেলে রোকন খান, ফারুক খান, খালেক মাষ্টার, তার পুত্র নুরুল হাসান লিটনসহ ৩০-৪০ জন সন্ত্রাসী নিয়ে এসে তাদের ঘর ভাঙচুর শুরু করে। এসময় তারা বন্দুক দিয়ে ৩-৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে ঘর থেকে ছেলেমেয়ে নিয়ে সবাই পালিয়ে গেলে সমস্ত ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের কোথায়ও যাওয়ার জায়গা না থাকায় পার্শ্ববর্তী বাধাল গ্রামের একটি মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা মো. হেমায়েত হাওলাদার (৮০) ও পল্লীর বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, তারা ২০১৪ সালে ওই জমি সরকারের কাছ থেকে ডিসিআর নিয়ে সেখানে ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। ভূমিহীন পল্লীতে ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধাসহ ২৮ টি পরিবার রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু নূরু খানের ছেলে খোকন, রোকন, ফারুক ও ওই জমি তাদের দাবি করে দখলের চেষ্টা চালায়। তারা সকালে প্রথমে ঘর ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে বন্দুক দিয়ে গুলি চালালে ঘরের মহিলা ও শিশুরা ভয়ে আতঙ্কি হয়ে পড়ে। এসময় তারা বন্দুক দেখে ভয়ে সবাই ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে তারা ঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। ভূমিহীন এই পরিবারগুলোর শেষ সম্বল মাথা গোজার ঠাঁইটুকু দেওয়ায় স্ত্রী, সন্তান নিয়ে আশপাশের বিভিন্ন বাড়ি ও মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছে। তারা সরকারের কাছে সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
পার্শ্ববর্তী বাধাল গ্রামের বাসিন্দা নলিনী হালদার (৬৫) বলেন, সকালে গুলির শব্দ শুনেই আমার ঘুম ভাঙে। উঠেই দেখি লোকজন ছুঁটোছুটি করছে। এক পক্ষ ঘরবাড়ি ভাঙচুর করছে। খবর পেয়ে সকাল ৯ টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে ভাঙচুর থেমে যায়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর পরই তারা ঘর গুলোতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। অসহায় দুটি প্রতিবন্ধীই পরিবারকে আমার বাড়ির শ্রী শ্রী গোবিন্দ মন্দিরে আশ্রয় দিয়েছি। তবে, কাজটি অমানবিক হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
খোন্তাটাকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. জানেরপাড় গ্রামের বাসিন্দা মো. মাহরাজ হাওলাদার বলেন, আশরাফুল ইসলাম রোকন, নূরুল হাসান লিটন ও সুমন মুন্সীর হাতে থাকা তিনটি বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ২নম্বর নলবুনিয়া-জানেরপাড় ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রাকিব হাসান বলেন, ঘটনা শুনে আমি পুলিশকে খবর জানাই। তবে, ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন এধরণের কোনো ঘটনা তার জানা নেই বলে দাবি করেন। এব্যাপারে অভিযুক্ত পক্ষের আ. খালেক মাষ্টার তার ও তার পরিবারের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি সকালে গুলির শব্দ শুনেছি। কিন্তু কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা জনিনা
শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কবিরুল ইসলাম জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এব্যাপারে কেউ এখন পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৬টা) মামলা করতে আসেনি। শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস জানান, ওই জমি নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে মামলা চলমান রয়েছে। আগুন দেয়ার বিষয়টি ওসি তাকে জানিয়েছেন। তিনি এলাকার বাইরে থাকায় এসে এ ব্যাপারে খোজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শরণখোলা

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ