Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

৭ বছর পর আলোর মুখ দেখছে আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার নদীবন্দর

মোঃ হুমায়ূন কবির,আশুগঞ্জ (ব্রাক্ষণবাড়িয়া) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কন্টেনার নদীবন্দর দীর্ঘ ৭বছর পর আলোর মুখ দেখচ্ছে। এই প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৮৬২ কোটি টাকা। প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বাকি ৪৩১ কোটি টাকা ভারতের দ্বিতীয় এলওসি থেকে পাওয়া যাবে। প্রকল্পটির পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা প্রতিবেদন ও টার্মিনালের নক্সা চূড়ান্ত করে তৈরি করার পর গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উত্থাপিত হওয়ার পর প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে।
এদিকে প্রকল্পের ৬৬ শতাংশ অর্থায়ন বাংলাদেশের হলেও আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নদীর বন্দর স্থাপন প্রকল্পের কাজ করবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। সাত বছর আগের পুরনো প্রকল্পটি বাতিল করে এখন ছয় গুণ বেশি ব্যয়ে একই প্রকল্প নতুন করে হাতে নেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রকল্পটি নেয়া হলেও সমীক্ষা না হওয়ায় এবং ভারতের অর্থায়ন না পাওয়ার কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। প্রায় ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি এখন এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকায় পৌঁছাল। নতুন করে জমি অধিগ্রহনে প্রতি হেক্টরে মূল্য ধরা হয়েছে ৬১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। সাত বছর পর প্রকল্পটি এখন নতুন করে একনেকে অনুমোদন করা হয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, আশুগঞ্জ দিয়ে নদীপথে ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহারের জন্য আশুগঞ্জকে একটি ট্রানশিপমেন্ট বন্দরে পরিণত করা হচ্ছে। আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কন্টেনার নদীবন্দরের কাজ আগামী জুলাই মাস থেকে এ বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করবে সরকার। এটি নির্মিত হলে চট্টগ্রাম, মোংলা ও অন্যান্য বন্দর হতে পণ্যবাহী কন্টেনার অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় প্রতিবেশী ভারতও পণ্য পরিবহনে এ বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। ফলে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্যিক সুবিধা সৃষ্টি হবে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে পরিকল্পনা কমিশন আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কন্টেনার নদীবন্দর স্থাপন প্রকল্প প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করেছে বলে জানাযায়। আমলাতান্তিক জটিলতার কারণে এবং বিস্তারিত সমীক্ষা না থাকায় দীর্ঘ ৭ বছর ধরে এই প্রকল্পের কাজ ঝুলে ছিল বলে জানা যায়।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, কলকাতা থেকে নৌপথে আসা পণ্যবাহী কন্টেনার আশুগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে আখাউড়া হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সবধরনে মালামাল ও পণ্য পরিবহণ করা হবে বা যাবে। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে নৌপথে পরিবাহিত কন্টেনার ওঠানামা করতে ও এই বন্দর ব্যবহার করা হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে চর চার তলা ইউনিয়নের মহরমপাড়া গ্রামের নদীতীরে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের জুলাই মাসে শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২১ সালের জুন মাস নাগাদ সময় লাগবে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ)।
জানা গেছে, এই বন্দর নির্মাণে মোট ১৩ হেক্টর বা ৩২ একর জমি প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে অধিগ্রহণ করা হবে আট হেক্টর বা পৌনে ২০ একর জমি আর ইজারা নেয়া হবে বাকি ১২ একর জমি। এই প্রকল্পের আওতায় কন্টেনার জেটি, মাল্টিপারপাস জেটি ও ইয়ার্ড, ব্রিজসহ এক্সেস রোড, তীর সংরক্ষণ, ট্রানজিট শেড, কার্গো শেড, অফিস ভবন ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে বলে জানান বিআইডবিøউটিএ কর্মকর্তারা। প্রকল্প ব্যয়ে দেখা যায়, ২৫০ টিপিএইচ ক্ষমতার মোবাইল হারবার ক্রেন ক্রয়ে ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা, কনটেইনারের জন্য একটি মোবাইল হারবার ক্রেন ক্রয়ে ২৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, রেল ওয়াগন বা ট্রাক লোডার চার কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ টন লেভেল লাফিং ক্রেন ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর ১২.৮৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ৭৮৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এখানে হেক্টর প্রতি মূল্য হলো ৬১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। রেললাইন সংযোগে ব্যয় ৫২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এদিকে প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার ভুমি মালিকদের অভিযোগ, ইতিমধ্যে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা-দীর্ঘ-সূত্রিতায় তারা মারাত্মক ভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হলেও আদৌ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে কি-না ভুমির মালিকগণ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। না আবারও প্রকল্পটি আগের মত পিছিয়ে যায় এই নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে আশংকা। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে, প্রস্তাবিত প্রকল্প এলকায় পুর্ব থেকে থাকা ১৫-২০ টি চাতালসহ অন্তত ৫০-৬০টি বিভিন্ন ধরনের নির্মাণাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকলেও এগুলো দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া দিতে না পারায় আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে তারা জানান। এমনকি জমি ক্রয়-বিক্রয় ছাড়াও স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারেননি ৭বছর ধরে। এ অবস্থার কথা জানিয়ে বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের লিখিত আবেদনও করেছে। এব্যাপারে ভুমির মালিকগণদের লোকসান বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য দাবী জানান। এছাড়া একনেকে অনুমোদন সরকারের সিদ্ধান্ত দ্রæত বাস্তবায়ন জন্য দাবী জানান ভুমিরমালিকরা।
এব্যাপারে বিআইডবিøউটিএ‘র চেয়ারম্যান কমোডর এম. মোজাম্মেল হক গুরুত্বপুর্ণ এ প্রকল্পটি দ্রæত বাস্তবায়নের আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, নৌমন্ত্রণালয় প্রকল্পটির নতুন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে হস্তান্তর করেছে। একনেকের সভায় অনুমোদিত হয়েছে। ফলে জমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য অবকাঠামো বাস্তবায়ন কাজ দ্রুত শুরু হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ