Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দৌলতপুরে নজরুল-নার্গিসের স্মৃতিচিহ্ন আজো অবহেলিত

দু’দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু আজ

| প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মো. হাবিবুর রহমান ও মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল : প্রতি বছরের মতো এবারো কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কবি নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত কবিতীর্থ দৌলতপুরে কবির ১১৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হবে। এ উপলক্ষে গ্রামটিতে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ, শুরু হয়েছে ‘নজরুল গ্রামীণ মেলা’। প্রথম দিনের কর্মসূচী হিসেবে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় নজরুল মঞ্চে রয়েছে- ‘দৈৗলতপুরে নজরুল’ শীর্ষক আলোচনা সভা। ১১টায় প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পরিবেশনা।
শনিবার সকাল ১০টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ ছাড়াও ‘নজরুল ও নার্গিস : প্রেম ও বিচ্ছেদের উপাখ্যান’ শীর্ষক আলোচনা সভা। ১১টায় উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি ও নার্গিস-নজরুল শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এমপি। জেলা প্রশাসক মো: আবুল ফজল মীর-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি রয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ আব্দুল কাইয়ূম খসরু। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিতু মরিয়ম।
কুমিল্লার কো¤পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়ক ধরে ৮ কি: মি: সামনে আসলেই কবিতীর্থ দৌলতপুর গ্রাম। এ গ্রামে ঢুকতেই হাতের ডান পাশে চোখে পড়বে ‘নজরুল তোরণ’। তোরণের দুই পাশে ইট-সিমেন্টের তৈরি কালো রঙের টুকরো টুকরো বøকে সাদা কালিতে লেখা কবির পঙ্ক্তিমালা। ওই পথ ধরে আধা কিলোমিটার ভিতরে গেলেই খাঁন বাড়ি। যে বাড়িটিকে কেন্দ্র করে নজরুলময় হয়ে ওঠেন ভক্তরা। ওই বাড়ি আর গ্রাম দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত হয়ে ওঠে নজরুল-নার্গিসের গ্রাম হিসেবে। এখানে রয়েছে আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বি-তল বাড়ি। এ বাড়িতেই থাকতেন কবি নজরুল। দীর্ঘদিন ধরে কোন প্রকার সংস্কার না করায় বাড়িটির পলেস্তর খসে পড়ছে। এ ভবনের পেছনে বাঁশঝাড় পার হলেই কবির বাসর ঘর। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কবির বাসরঘরটি আটচালা ছিল। পরে চৌচালা করা হলেও আয়তন ও ভিটির কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ওই ঘরেই ছিল নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক। অযতœ ও অবহেলার কারণে সিন্দুকটি কোথায় আছে তা কেউ বলতে পারে না। এক সময় ওই ঘরে বাসর খাটটিও ছিল। সেটি পাশের একটি আধা পাকা ঘরে রাখা হয়েছে।
শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির অনুপম লীলাভূমি কবিতীর্থ দৌলতপুর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্যে নান্দনিক মাত্রা দিয়েছে। এখানেই ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি আর হাতে রণতূর্য’র ঝংকার বেজেছিল নার্গিসের সুপ্ত ভালোবাসার সংস্পর্শে। এখানেই নার্গিসের ভালোবাসার আগুনের পরশমানিকের ছোঁয়ায় বেজেছিল নজরুলের ‘অগ্নিবীণা’। ১৯২১ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বন্ধু আলী আকবর খানের সঙ্গে দৌলতপুর গ্রামে আসেন। এখানকার সবুজ-শ্যামল পরিবেশ কবিকে দারুণভাবে আচ্ছন্ন করেছিল। এখানে কবি রচনা করেছেন ১২০টি কবিতা অসংখ্য গান ও ছড়া। কিন্তু সেই দৌলতপুর আজও অবহেলিত ও উপেক্ষিত। এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে কবির নামে হয়নি কোন প্রতিষ্ঠান। এমনকি ১৭ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত ‘নার্গিস-নজরুল বিদ্যা নিকেতন’ আজো এমপিওভুক্ত হয়নি।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিতু মরিয়ম জানান, জাতীয় কবির স্মৃতি রক্ষার্থে দৌলতপুরে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরণের উদ্যোগ নেয়া হবে। শুধু নজরুল জয়ন্তীতে নয়, সারা বছর ধরে যেন নজরুল চর্চা অব্যাহত থাকে সে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া নার্গিস-নজরুল বিদ্যা নিকেতনের বিষয়ে আন্তরিকতার সাথে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নজরুল আমাদের জাতীয় চেতনার উৎস এবং জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে নজরুলের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজে পায়।
কুমিল্লার ৪নং বিচার আদালতের এ.পি.পি এডভোকেট এইচ.টি আহম্মেদ ফয়সাল জানান, কবি নজরুলের নামে দৌলতপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিসহ আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বি-তল বাড়িটিকে জাদুঘর বানিয়ে কবি পত্মী নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক ও বাসরখাটটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। তিনি আরো জানান, প্রতিবছর এখানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাদামাটা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। আমরা কবিতীর্থ দৌলতপুরকে রাষ্ট্রীয় ভাবে মর্যাদাপূর্ণ স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চাই।
কবিপতœী নার্গিস বংশের উত্তরসূরী বাবলু আলী খান জানান, এ বাড়ির পুকুর ঘাটের আম গাছ তলায় কবি দুপুরে শীতল পাটিতে বসে গান ও কবিতা লিখতেন। খান বাড়ির ছেলে-মেয়েদের নাচ, গান ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখাতেন। পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটতেন। শখ করে পুকুরে জাল আর পলো দিয়ে মাছ শিকার করতেন। কবির ওই স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার জন্য দৌলতপুরে বানানো হয়েছে ‘নজরুল মঞ্চ’।
নজরুল-নার্গিস স্মৃতি সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হুমায়ূন কবীর খান জানান, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার দরিরামপুর গ্রামে কবির নামে অনেক কিছু হয়েছে। অথচ দৌলতপুরে কিছুই হলো না। কবি দুই মাস ১১ দিন ছিলেন। এখানে তিনি যৌবনে প্রেম ও বিয়ে করেছেন। অনেক কবিতা ও গান রচনা করেছেন। দৌলতপুরে কবির নামে বড় ধরনের স্থাপনা ও নজরুল চর্চা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ