Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঘূর্ণিঝড় আইলার ১০ বছর অতিবাহিত: শতাধিক পরিবার এখনও আশ্রয়হীন

কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) থেকে রবিউল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

২৫ মে- ২০০৯ মহাপ্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার ১০ বছর অতিবাহিত হল আজ। ২০০৯ সালের এই দিনে মহা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায় দক্ষিণ জনপদের উপকূলীয় অঞ্চল। তথা পদ্ন পুকুর, গাবুরা ইউনিয়ন। সে দিনের বিবৎসের কথা মনে পড়লে চোঁখের পানি ধরে রাখা যায় না। কপোতাক্ষের যোয়ারের পানি যেন পাগল হয়ে ভেড়ীবাধ ছাপিয়ে গ্রামকে গ্রাম তলিয়ে নিয়ে যায়।
মানুষ দিক বিদিক পানিতে ভেশে নিরাপদ আশ্রয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলাসহ সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা। দেখতে দেখতে আইলার ১০ বছর পার হলেও এখনও ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে নাই।
ভেড়ীবাঁধের উপর বসবাস করতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে। উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আইলার ছোবলে ১১টি ইউনিয়নের মানুষ কমবেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বিশেষ করে পদ্ন পুকুর, গাবুরা ইউনিয়নটি। অনেকে তাদের বাস গৃহে কোন রকমে জায়গা করে নিতে পারলেও গাবুরা ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার আজও গৃহহীন রয়ে গেছে। গাবুরার শতাধিক পরিবার এখনও সরকারি তহবিলের সহায়তা না পেয়ে বাঁধের ওপর বসবাস করছে। অভিশপ্ত এই দিনটির কথা মনে হলে আজও ভয়ে শিউরে ওঠে উপকূলবাসী জীবন। দূর্গম কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে আজও টিকে আছে এ প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় মানুষগুলি। আইলার কারণে শ্যামনগর উপজেলার অনেক এলাকার শ্রমজীবিরা হারিয়েছে তাদের কর্মসংস্থান। কর্মসংস্থানের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের অভাব অনটন বেড়েই চলেছে।
শুধু ঘর-বাড়ি নয়, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা খাদ্য, সুপেয় পানি আর চিকিৎসা সেবাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এ এলাকা। গাবুরার ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, আইলার ১০ বছর কেটে গেলেও এখনও বিশেষ করে গাবুরা জেলেখালি, লেবুবুনিয়া গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছেন। আইলায় তাদের ঘর-বাড়ি, জমি-জমা সব বিলীন হয়ে গেছে নদী গর্ভে চলেগেছে। নিজস্ব কোনও জমি না থাকায় তারা সরকারের গৃহনির্মাণ তহবিলের সহায়তা পাননি। এমনকি আজ পর্যন্ত তাদের কোনও খাস জমিও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আইলার পর জরুরি ভিত্তিতে যেসব বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল, সেগুলো মানসম্মত না হওয়ায় জোয়ারের চাপ বা ভারী বর্ষণে বাঁধগুলো প্রতি বছরই ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে নতুন করে মানুষ বাধভাঙ্গনের পড়ে জজরিত হচ্ছে। এসকল এলাকা ঘুরে ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সাথে কথা বললে জানান তাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া দীর্ঘ ১০টি বছরে দুঃখ দুর্দষার কথা। আসাদুল সরদার এর স্ত্রী মুসলিমা খাতুন জানান তার ১ ছেলে ও ১ কন্যা নিয়ে অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটছে আমাদের। রবিউল সরদার ৩ ছেলে ১ মেয়ে তিনি জানান, কি আর কমু এইত বেচেঁ আছি সেই ভাল। আমেনা খাতুন, রমিছা খাতুন, আকলিমা খাতুন, হাসানুর সরদার সহ আজও কয়েকশতাধিক পরিবার আশ্রয় হীন হয়ে নদীর বেড়ী বাধের উপর ২ চালা করে ঘরে বেধে বসবাস করে যাচ্ছে। কোন কোন পরিবার অন্যত্র চলেও গেছে। এসব এলাকার মানুষ দুর্যোগকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় গ্রহণ করে থাকেন। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর ধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম। তিনি সরকারি প্রাথমিক ও মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড়

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ