Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোজাদারদের দূর্ভোগ কিছুটা কমলেও ভোগাচ্ছে বিদ্যুৎ

দক্ষিণাঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপ প্রবাহের পরে বর্ষা মাথায় করে আসছে মওসুমী বায়ু

| প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপ প্রবাহে গত দুদিন দক্ষিণাঞ্চলে রোজাদারদের দূর্ভোগ চরমে পৌছার পরে গতকাল (মঙ্গলবার) পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটলেও সপ্তাহখানেক কোন বৃষ্টি নেই। রবি ও সোমবারের দুঃসহ গরমে ঈদের বাজারের কেনাকাটার ভিড়কে যথেষ্ঠ হালকা করে দিলেও গতকাল তাপমাত্রার পারদ প্রায় দু ডিগ্রী নিচে নামায় মুখে স্মিত হাসি ফিরেছে ব্যবসায়ীদের। তবে এখনো তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশী রয়েছে। রবিবার বরিশালে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বনিম্ন ২৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবারে বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৩ডিগ্রী সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ২৬.৯ডিগ্রী। যা আগের দিনের চেয়ে দশমিক ১ডিগ্রী বেশী ছিল। রবি ও সোমবারে জৈষ্ঠোর তাপপ্রবাহে রোজাদারদের ছাতি ফাটার উপক্রম হলেও গতকাল পরিস্থিতির আশাতীত উন্নতি ঘটে। গতকাল সকালে বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫.৫ডিগ্রীতে হ্রাস পেলেও দুপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দাড়ায় ৩৩.৫ডিগ্রী সেলসিয়াস, আগের দিনের চেয়ে দু ডিগ্রী কম।
তবে তাপমাত্রার পারদ এখনো স্বাভাবিকের ওপরে থাকলেও ক্রমে অগ্রসরমান দক্ষিন-পশ্চিমের মওশুমী বায়ুর প্রভাবে গরমের অনুভুতি কিছুটা কম ছিল। বর্ষা মাথায় করে দক্ষিন-পশ্চিম মওশুমী বায়ু আগামী কালের পরবর্তি ৫দিনের মধ্যে দেশের দক্ষিন-পূর্ব উপক’ল পর্যন্ত পৌছতে পারে বলে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে। ফলে অনেকটা স্বাভাবিক সময়েই বর্ষা এবার দেশের উপক’লভাগে কড়া নাড়ছে।
গত শুক্রবার বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.২ ও সর্বনিম্ন ২৫.৫ ডিগ্রি। অথচ আবহাওয়া বিভাগের হিসেব অনুযায়ী চলতি মে মাসে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা। প্রথম রোজা থেকে ৮ রমজান পর্যন্ত প্রতিদিনই বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে কমবেশী বৃষ্টিপাতের পরে গত শুক্রবার থেকে কাঠ ফাটা রোদ জনজীবনে যথেষ্ঠ দূর্ভোগ বৃদ্ধি করে। তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ ওপওে ওঠায় রোজাদারদের কষ্টও কিছুটা বাড়ছিল। গতকাল তুলনামূলকভাবে পরিস্থিতি কিছুটা ভাল থাকলেও এখনো গরমে কষ্ট দিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সাথে বিতরন সংকট। গত ২১ মে বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৮.৫ ও সর্বনিম্ন ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু ২৭মে তাপমাত্রার পারদ যথাক্রমে ৩৫.৬ডিগ্রী ও ২৬.৮ডিগ্রী সেলসিয়াসে উন্নীত হয়।
মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহের সাথে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থারও ক্রমশ অবনতি ঘটছে। বিদ্যুৎ ঘাটতি না থাকলেও বরিশাল মহানগরীর কাশিপুর সাব-স্টেশনের ৩৩/১১ কেভি ট্রান্সফর্মারগুলো ওভারলোড হয়ে যাওয়ায় নগরীর ৭টি ফিডারে সন্ধ্যা হলেই লোডশেডিং শুরু হচ্ছে। অথচ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুতের কোন ঘাটতি নেই। মধ্যরাত পেরিয়েও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় লোডসেডিং অব্যাহত থাকায় রোজাদারদেও দূর্ভোগ এখন সব বর্ণনার বাইরে। একই পরিস্থিতি দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য এলাকাতেও।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে চলতি মাসে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক ২৬০ মিলিমিটারের স্থলে ১৫০-৩১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও ইতোমধ্যে তা অতিক্রমের পরে গত পাঁচ দিনের হালকা তাপপ্রবাহ জনজীবনে দূর্ভোগ যথেষ্ট বৃদ্ধি করেছে। এমনকি চলতি মৌসুমে আগাম বর্ষণে এবার দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশেই পাট আবাদকেও যথেষ্ঠ ব্যাহত করেছে। আবাদের শেষ সময় আর এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও এখনো লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দেড় লাখ হেক্টর পেছনে রয়েছে এ সোনালী আঁশের আবাদ। এমনকি এবার আগাম বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলে আউশের আবাদও যথেষ্ট ব্যাহত হচ্ছে। অথচ সারা দেশের ২০ ভাগের বেশী আউশ ধানের আবাদ হয়ে থাকে দক্ষিণাঞ্চলে।
এবার শীত শেষে তাপমাত্রার আধিক্য জনজীবনে যথেষ্ট দূর্ভোগ বৃদ্ধি করে। এমনকি ফাল্গুনে তাপমাত্রার পারদ গ্রীষ্মের আগাম বার্তা দেয়ায় বসন্ত আসার আগেই হারিয়ে যায়। আবার জৈষ্ঠ্যের শুরুতেই বর্ষা কড়া নাড়তে শুরু করে। তবে এবার আগাম বর্ষণ গত বছরের মত অতি বর্ষণের রূপ না নিলেও তাপমাত্রার আধিক্য জনজীবনে যথেষ্ট দূর্ভোগ নিয়ে আসে। এ বছর ফাল্গুনে তাপমাত্রার পারদ গ্রীষ্মের আগাম জানান দেয়ায় বসন্তের খুব একটা দেখা মেলেনি। এবছর গত এপ্রিলে সারা দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা ৩৬.৭% বেশী বৃষ্টি হলেও বরিশালে তা ছিল স্বাভাবিকের ৬.১% কম। অথচ গতবছর এপ্রিলে বরিশালে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬০%-এবং মার্চে ১৫২%-এর মত বেশী বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এ বছর মার্চে বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৯০ ভাগ কম। ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল প্রায় শতভাগ কম। অথচ গতবছর মার্চ ও এপ্রিলের অতি বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজ ও গোল আলু সহ প্রচুর পরিমান রবি ফসল ছাড়াও এ অঞ্চলের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য ফসল বোরো ধানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়।
তবে আবহাওয়া বিভাগের মতে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় লঘু চাপটি ঘনিভুত ও স্পষ্ট লঘুচাপে পরিনত হয়ে পূর্বÑমধ্য বঙ্গোপসাগর ও সন্নিহিত উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এটি আরো ঘনিভুত হবার সম্ভবনার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে অস্থায়ী দমকা অথবা ঝরো হাওয়া সহ বিজলী চমকানো এবং হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টির কথা বলা হলেও কোথও তা হয়নি। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকার কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। পাশাপাশি বর্ষা মাথায় করে দক্ষিন-পশ্চিম মওশুমী বায়ু দেশের দক্ষিন-পূর্ব উপক’লে পৌছার সাথে বৃষ্টিপাতের প্রবনতা বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোজাদার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ