পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : কোন পরিবর্তন আসেনি শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। যুক্তরাজ্যের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেডলাইন এভিয়েশন সিকিউরিটিকে দায়িত্ব দেয়ার পরেও নিরাপত্তায় ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তনা না আসায় এ সংস্থাটির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। রেডলাইন কী কাজ করছে, তা মনিটরিং করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জনবলও নেই সিভিল এভিয়েশনে। এমন এক পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মধ্যেই থাকছে যুক্তরাজ্যগামী যাত্রীবাহী ফ্লাইট। সরাসরি যুক্তরাজ্যে কার্গো ফ্লাইটের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে কি-না, তা স্পষ্ট নয়। তবে মন্ত্রণালয় ও সিভিল এভিয়েশন বলছে, আগামী ১১ এপ্রিল ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি)-এর কর্মকর্তারা ঢাকায় আসার পর এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হতে পারে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যের রেডলাইন দায়িত্ব নেওয়ার পরেও আগের মত একই ধরনের নিরাপত্তা বহাল রয়েছে। রেডলাইন কাজ শুরুর পরও সন্দেহ দূর না হওয়ায় শাহজালালে যুক্তরাজ্যগামী যাত্রীবাহী ফ্লাইটের যাত্রী ও লাগেজে তল্লাশি করা হচ্ছে একাধিকবার। এতে করে ফ্লাইট সিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক দরপত্র ছাড়াই কি কারণে তড়িগড়ি করে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণের কাজ দেওয়া হয় যুক্তরাজ্যের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেডলাইন এভিয়েশন সিকিউরিটিকে এ নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। গত ২১ মার্চ রেডলাইনের সঙ্গে দুই বছরের জন্য সরকারের চুক্তি হয়। আর এ জন্য রেডলাইনকে দেওয়া হবে ৭৪ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, রেডলাইন নামে এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হলো, যাদের এভিয়েশন নিরাপত্তার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাও দেওয়া হলো বেশি দরে। শুধু প্রশিক্ষণের জন্য ৭৪ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে রেডলাইনকে। ১২ দিনেও তাদের ৩৯ জন সদস্য শাহজালালে এসে পৌঁছেনি। ২৯ জন সদস্য প্রশিক্ষণের কাজ করছেন। অথচ আরও কম দরে যারা আবেদন করেছিল তাদের আলাপ-আলোচনাতেই রাখা হয়নি। ওয়েস্ট মিনিস্টার যুক্তরাজ্যের ১১টিসহ অস্ট্রেলিয়া, ইরাক, সৌদি আরব, পাকিস্তন, আফগানিস্তান ও বিভিন্ন দেশের ৮০টি বিমানবন্দরে কাজ করছে। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই কোম্পানিটি কম দরে কাজ নিতে চাইলেও রহস্যজনক কারণে এই কোম্পানিকে আলোচনাতেই রাখা হয়নি।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্য সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়ানো এবং বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন ফ্লাইটকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। চুক্তির পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছিলেন, তারা যেভাবে বলছে, আমরা সেভাবেই নিরাপত্তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছি। নিরাপত্তার ‘আন্তর্জাতিক মানদ-ে ঘাটতি থাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি পণ্য পরিবহনে যুক্তরাজ্য গত ৮ মার্চ থেকে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। দুই দেশের সম্মত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী নিরাপত্তা জোরদারের কাজ শুরু না হলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের যুক্তরাজ্যগামী সরাসরি ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে এ কথা জানান। সূত্র জানায়, রেডলাইন একটি প্রশিক্ষণভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। তাদের সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিগত দুর্বলতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত অফিস ও বাসায় নিরাপত্তা সহযোগিতা দিয়ে থাকে। অন্যদিকে ওয়েস্ট মিনিস্টারের প্রশিক্ষণ সক্ষমতাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিগত সব ব্যবস্থা রয়েছে। নিরাপত্তা উন্নয়নে দুই বছরের জন্য এই কোম্পানিটি চেয়েছে ৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে রেডলাইনের সঙ্গে চুক্তি করা হয় ৭৫ কোটি টাকায়।
বেবিচকের একটি সূত্র বলেছে, বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দর হিসেবে যুক্তরাজ্য সরকার যে কয়েকটি দেশের বিমানবন্দরের তালিকা করেছে এর মধ্যে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর রয়েছে। যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট গত জানুয়ারি মাস থেকেই শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে। তারা ছদ্মবেশে কার্গো ভবনে বিনা বাধায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। তারা দেখতে পান, মালামাল স্ক্রিনিং করা হচ্ছে নামমাত্র। ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট কার্গোতে করে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে প্যাকেট পাঠান। তারা জানতে পারেন, সেই প্যাকেটটি ঠিকমতো স্ক্রিনিং করা হয়নি। এতে যুক্তরাজ্য অসন্তোষ প্রকাশ করে শাহজালালের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট ২০০৭ ও ২০০৯ সালে দুবার বাংলাদেশকে পণ্য পরিবহন স্থান, যাত্রী ও তাদের পণ্য তল্লাশি এবং বিমানবন্দরের কর্মরত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কী ধরনের নীতিমালা ও পদক্ষেপ নিতে হবে তা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছিল। অথচ ওই দুটি প্রতিবেদনকে সরকার বিবেচনায় নেয়নি। এমনকি যুক্তরাজ্য নিজেদের অর্থায়নে ২০০৬ ও ২০০৭ সালে বেবিচকের ৪০ জন জনবলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। তাদেরও ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়। পরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি পণ্য পরিবহনে যুক্তরাজ্য গত ৮ মার্চ থেকে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
বিমানবন্দরে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও চোরাইভাবে আসছে স্বর্ণ, মাদক এবং আমদানী নিষিদ্ধ ঔষধপত্র। যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। বিশেষ করে স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক চোরাকারবারীরা স্বর্ণ চোরাচালানের ট্রানজিট রুট হিসাবে ব্যবহার করছে বিমানবন্দরসহ দেশে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা। এত করে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য সরাসরি কার্গো বিমান পরিবহন বন্ধ করে দেয়। এ প্রেক্ষিতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যুক্ত করা হয় বৃটিশদের। গত এক মাস ২ দিন ধরে শাহজালাল বিমানবন্দরে সিভিল এভিয়েশনকে সহযোহিতা করতে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে ব্রিটিশ কোম্পানি রেডলাইন। এছাড়া সিভিল এভিযেশনের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ফোর্স। তারপরেও থেমে নেই চোরাচালান। গত বৃহস্পতি শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের দুই কেজি সোনা জব্দ করেছে কাস্টমস কর্মকর্তারা। গতকাল সকালে বিমানবন্দরে শৌচাগারের কমোডের ভেতর রাখা তিনটি কনডম থেকে এসব সোনা জব্দ করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। সেখানে সোনার ২০টি বার ছিল। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, সকালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে করে সোনার চালান আসার খবর পাওয়া যায়। এসব সোনা বিমানবন্দরের কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছে জানতে পেরে তল্লাশি চালানো হয়। পরে কাস্টম হলে এক নম্বর বেল্টের পাশে একটি শৌচাগারের কমোডের ভেতর থেকে সোনার বারগুলো উদ্ধার করা হয়। স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে তিনটি কনডমের ভেতর ২০টি সোনার বার রাখা ছিল। প্রতিটি বারের ওজন ১০০ গ্রাম। পাচারের সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করা যায়নি। জব্দ হওয়া সোনার আনুমানিক মূল্য এক কোটি টাকা। এর আগে গত এক মাসে বিভিন্ন সময়ে কমপক্ষে ৫টি ছোট বড় স্বর্ণের চালান আটক হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যে সরাসরি পণ্য পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি পর শাহজালাল বিমানবন্দরে গড়ে তোলা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। কার্গো ভিলেজে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা। শাহজালালের নিরাপত্তা বাড়াতে ৯০ কোটি টাকার নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সিভিল এভিয়েশন। বিমানবন্দরের স্ক্যানিং মেশিনের সমস্যা দূর করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্ক্যানিং মেশিন পরিচালনায় এক ডজন প্রশিক্ষক ও পরামর্শক নিয়োগ করার হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশের স্ক্যানিং টেকনোলজির আলোকে শাহজালাল বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এতসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তদারকির পরেও সোনা চোরাচালানসহ নানা অপরাধের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।