Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অস্পৃশ্যতা থেকে ভারতের মুসলিমরাও বাদ নেই

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

‘অস্পৃশ্যতা দাসত্বের চেয়ে খারাপ’ বলেছেন ভারতীয় দলিত স¤প্রদায়ের অবিসংবাদিত নেতা ড. ভিমরাও আম্বেদকর। হিন্দু বর্ণভেদ প্রথার কারণে ভারতে দলিতদেরকে সমাজের একেবারে নীচু জাত হিসেবে বিবেচনা করে অত্যন্ত ঘৃণা ও উপেক্ষার চোখে দেখা হয়। কিন্তু কেবল হিন্দু স¤প্রদায়েই নয়, ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যেও যে অস্পৃশ্য বা দলিত মুসলিম আছে সেই তথ্যই উঠে এসেছে দেশটিতে পরিচালিত সা¤প্রতিক এক গবেষণায়। ভারতে বর্তমানে প্রায় ১৪ কোটি মুসলিম নাগরিক আছে। এদের একটা বিরাট অংশই হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত। মনে করা হয়, হিন্দু জাত-পাত প্রথার নিগ্রহ থেকে রক্ষা পেতেই নিম্নবর্ণের হিন্দুদের এই ধর্ম বদল। সাধারণত, ইসলাম সকল মানুষের সমতার কথা বলে। আর মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থেও বর্ণভেদ প্রথার কোনো উল্লেখ নেই। তাই, সামাজিক-চর্চায় অস্পৃশ্যতার বিষয়টি বিরাজমান থাকলেও এর বিরুদ্ধে মুসলিম সমাজ তেমন উচ্চ-বাচ্য নেই। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সময় এসেছে বলেই মনে করছেন গবেষকেরা। গবেষক প্রশান্ত কে ত্রিবেদী, শ্রীনিবাস গোলি, ফাহিমুদ্দিন ও সুরিন্দর কুমার মিলে ভারতের ১৪টি জেলার মোট সাত হাজারের বেশি বাড়িতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ২০১৪-এর অক্টোবর থেকে ২০১৫-এর এপ্রিল পর্যন্ত ভারতের উত্তর প্রদেশে চলে এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ। গবেষণায় যা উঠে এসেছে এলাকার ধনী প্রতিবেশীদের বাড়িতে কোনো বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানে দলিত মুসলিমদের দাওয়াত করা হয় না। কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে দলিত মুসলিমদের দাওয়াত করা হলেও তাদেরকে বসানো হয় আলাদা এবং তাদেরকে খাবার পরিবেশন করা হয় অভিজাত মুসলিমদের খাওয়া শেষে। এমনকি কোনো-কোনো জায়গায় দলিত মুসলিমদেরকে ভিন্ন ধরনের প্লেটে খাবার পরিবেশন করা হয় বলেও উল্লেখ করেছেন গবেষণায় অংশ নেয়া অনেক দলিত। গবেষণায় অংশ নেয়াদের মধ্যে অন্তত ৮ ভাগ দলিত মুসলিম জানিয়েছেন যে, তাদের শিশু সন্তানদেরকেও অভিজাত শিশুদের চেয়ে আলাদা সারিতে বসানো হয়। এমনকি স্কুলেও দুপুরের খাবার গ্রহণের সময় তাদের সন্তানেরা আলাদা সারিতেই বসে। অভিজাত মুসলিমদের জন্য যে গোরস্থান রয়েছে সেখানে দলিতদের সাধারণত কবর দিতে দেয়া হয় না বলে উঠে এসেছে এই গবেষণায়। তাদের জন্য রয়েছে আলাদা কবরস্থান। আর যদি কোনো দলিত কাউকে উচ্চবর্ণের কবরস্থানে গোর দেয়া হয় তবে সেই লাশের জায়গা হয় একেবারে কোনো একটা কোণায়। বেশিরভাগ মুসলিম একই মসজিদে নামাজ আদায় করলেও দলিত মুসলিমদের অনেকেই বলছেন যে তারা প্রায় সময়ই বোধ করেন তাদের প্রতি অন্যদের এক ধরনের উপেক্ষা বা বৈষম্য। সাধারণত নিচু জাতের সব কাজ করাই দলিত মুসলিমদের কাজ বলেও মনে করা হয়। গবেষণায় অংশ নেয়া অন্তত ১৩ ভাগ দলিত মুসলিম জানিয়েছে যে, অভিজাত কোনো মুসলমানের বাড়িতে যদি তাদেরকে খাবার বা পানি দেয়া হয় তাহলে তা পরিবেশন করা হয় ভিন্ন পাত্রে। এছাড়া মুসলিম দলিতদেরকে ভিন্ন পাত্রে খাবার ও পানি পরিবেশন করার প্রবণতা হিন্দুদের মধ্যে আরো প্রকট। গবেষণার তথ্য মতে, এর পরিমাণ শতকরা ৪৬ ভাগ। এছাড়া, দলিত মুসলিমদের সাথে উচ্চবর্ণের মুসলিম ও হিন্দু কোনো স¤প্রদায়ের মানুষই মিশতে চায় না এবং তারা দলিত মুসলিমদের সাথে এক ধরনের দূরত্ব বজায় রেখে চলে বলেও উঠে এসেছে গবেষণায়। শুধু ভারতীয় হিন্দু ও মুসলিম স¤প্রদায় নয় এমনকি শিখদের মধ্যেও বর্ণ-ভেদ দেখা যায়। তবে, পার্সিরা কিছুটা ব্যতিক্রম। এই গবেষণার পর গবেষক প্রশান্ত কে ত্রিবেদী বলেছেন, দলিত হিন্দুদের মতই দলিত মুসলিম ও খ্রিস্টানদেরকেও আলাদাভাবে কিছু সামাজিক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা চালু করা উচিত। তবে, এই গবেষণার ফলাফলে যে চিত্র উঠে এসেছে তার মোদ্দা কথা দাঁড়াচ্ছে এমন যে, ভারতে কেউ হয়তো তার জাত পরিত্যাগ করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু সে জাতকে ছাড়তে চাইলেও জাত তাকে ছাড়বে না। বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারতের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ